-দরজায় কনরাড ছিল, বলল টমি, তাকে সংকেত বলেই আমি ভেতরে ঢুকেছিলাম, বুঝতে পারছেন না।
জার্মান লোকটা বলল, ঠিকই বলেছ। তাহলে তোমার মুখ থেকে কথা আদায় করতে হবে। বোরিস এ বিদ্যেয় ওস্তাদ।
-আমাকে খুন না করলে বলতে পারি সবই।
বোরিস ঘুসি পাকিয়ে এগিয়ে এসে বলল, কোনো দর কষাকষি চলবে না।
–এমন কিছু আমি জানি, যা নিয়ে দর কষাকষি করতে পারি।
–কি জান তুমি। চিৎকার করে উঠল জার্মান লোকটি।
–ডেনভারস…আমেরিকা থেকে লুসিটোনিয়া জাহাজে যে খসড়া
–ওগুলো তোমার কাছে?
জার্মান লোকটা ছিটকে ঝুঁকে পড়ল টমির ওপর।
–আমার কাছে নয়, তবে কোথায় আছে আন্দাজ করতে পারি। আর তা কেবল আমিই জানি। সব বলতে পারি আমার জীবন আর মুক্তির বদলে।
জার্মান লোকটির হুকুমে তখনই টমিকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। ওর হাতপায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া হল।
জার্মান লোকটি পাশের চেয়ারে বসে বলল, তোমার শর্তে আমরা রাজি, কিন্তু আগে কাগজগুলো হাতে পাওয়া চাই।
–আমার সঙ্গে একজনকে কনরাড যাবে।
–তুমি এখানেই থাকবে। তোমার চিঠি নিয়ে একজন যাবে।
–কিন্তু মেয়েটাকে যে দেখতেই হবে।
–মেয়েটা? কোনো মেয়ে?
–জেন ফিন।
–সে কিছু বলতে পারবে না, নিশ্চয়ই জানো।
–তাহলেও একবার তার মুখোমুখি হব। কিছু বলতে বলব না।
–তাহলে দেখা করতে চাও কেন?
–তুমি কিছুই জানো না, বুঝতে পারছি, ধাপ্পা দিচ্ছ। বলল কনরাড।
–আপনাদের সবকথা অবশ্যই জানি না। তবে এমন কিছু জানি যা আপনারা জানেন না। ডেনভারস লোকটা ধূর্ত
-ডেনভারস? বুঝতে পারছি। কনরাড, ওকে ওপরে নিয়ে যাও। জার্মান লোকটি বলল।
–কিন্তু মেয়েটির ব্যাপার কি হবে?
–সেটা ঠিক করবেন মিঃ ব্রাউন।
টমিকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরের একটা ছোট্ট ঘরে নিয়ে এল কনরাড। গ্যাসের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
ঘরটা ছোট, ধুলোয় ভরা। কোনো জানলা নেই। টমি দেখতে পেল দেয়ালে চারখানা ছবি ঝুলছে।
টমি চুপচাপ বসে ভাবতে লাগল, ভাগ্য ভালো হলে এবারে সে মিঃ ব্রাউনকে দেখতে পাবে, জেন ফিনকেও। তার পরে কি হবে–তা নিয়ে ভাববার একটা চেষ্টা করতে লাগল।
২. টমির ঘরে
০৬.
সারারাতে কেউ আর টমির ঘরে ঢুকল না। টেনে ঘুমোলা সে। একসময় দরজার চাবি খোলার শব্দ হতে জেগে উঠে বসল। সময় দেখল, সকাল আটটা।
একটা মেয়ে ঘরে ঢুকে টেবিলে ট্রে নামিয়ে রাখল। গ্যাসের অস্পষ্ট আলোয় মেয়েটিকে অসাধারণ সুন্দরী মনে হলো। মাথায় সোনালী চুলের স্তূপ। উজ্জ্বল গায়ের রঙ।
–তুমি জেন ফিন? জিজ্ঞেস করল টমি।
আমার নাম অ্যানেট, মঁসিয়ে।
–তুমি ফরাসী? ট্রেতে কি প্রাতঃরাশ?
–হ্যাঁ।
মেয়েটি দরজার দিকে এগোল। টমি বলল, যেও না, তোমাকে দুটো কথা জিজ্ঞেস করব।
ঘুরে দাঁড়াল মেয়েটি।
-এখানে তুমি কাজ কর? প্রশ্ন করল টমি।
–হ্যাঁ, আমি কাজের লোক।
–মেয়েটি কোথায় জান? জেন ফিন?
–সে এ বাড়িতে নেই। ওরা অপেক্ষা করছে, আমি যাই।
দরজায় তালা দিয়ে চলে গেল মেয়েটি।
বেলা একটায় লাঞ্চ পেল টমি। সেই সময় মেয়েটির সঙ্গে কনরাডও ঢুকল। কাজেই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হল না।
রাত আটটায় মেয়েটি দরজা খুলল। একাই ঘরে ঢুকল।
–তোমার সঙ্গে কথা আছে অ্যানেট। আমাকে পালাতে সাহায্য করবে?
–সম্ভব নয়। নিচে ওরা তিনজন রয়েছে। আমি ওদের ভয় পাই।
–আমায় যদি সাহায্য কর, অনেক টাকা দেব, তোমারই বয়সী আরেকটি মেয়ের জন্য আমাকে সাহায্য করতে পার না?
–জেন ফিন? আপনি তার জন্য এসেছেন?
–হ্যাঁ, ঠিক।
–জেন ফিন নামটা চেনা।
–ওর কথা তুমি যা জান আমায় বলল।
অ্যানেট কথার জবাব না দিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল।
কনরাড আর অ্যানেটের সাহচর্যে তিনদিন একইভাবে কেটে গেল। কনরাড টমিকে জানিয়েছে, ওরা সকলে মিঃ ব্রাউনের হুকুমের অপেক্ষা করছে।
সেই প্রতীক্ষা শেষ হল তৃতীয় দিন সন্ধ্যা সাতটায়। কনরাড আর একটা লোক হিংস্র দৃষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকল। ওরা দড়ি দিয়ে টমিকে বেঁধে ফেলল।
-তোমার দিন শেষ। ধাপ্পা ধরা পড়ে গেছে–কিছুই জানো না তুমি। কাল সকালেই গাড়ি করে তোমাকে পাচার করা হবে। বলল কনরাড।
–আমাকে খুন করবে না? জানতে চাইল টমি।
–তাতে সন্দেহ কি? তবে এখানে নয়। তাহলে পুলিস খবর পেয়ে যাবে।
দুজনে দরজা বন্ধ করে চলে গেল।
আধঘণ্টা পরেই অ্যানেট ঢুকল।
বাইরে থেকে কনরাডের গলা শোনা গেল।
-আজ ওর খাবারের দরকার হবে না অ্যানেট, বেরিয়ে এসো।
–ঠিক আছে। আমি ট্রে নিতে এসেছি।
–ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো।
অ্যানেট ট্রেটা তুলে নিয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল। সেই মুহূর্তে টমি টের পেল, ছোট্ট ঠান্ডা কি একটা চকিতে অ্যানেট তার হাতে গুঁজে দিল।
দরজায় তালা লাগিয়ে চাবিটা আমায় দাও। কনরাডের গলা শোনা গেল।
অ্যানেট একটা পেন্সিল কাটা ছুরি টমির হাতে দিয়েছিল। সেটা সে তৎক্ষণাৎ কাজে লাগাল। অনেক কষ্টে দড়ির বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করল।
এবারে বেরুবার উপায় করতে হবে…
বাইরে পায়ের শব্দ শোনা গেল। ঝট করে উঠে টমি দেয়াল থেকে একটা ছবি নামিয়ে হাতে নিল।
দরজা খুলে ঢুকেই গ্যাসের আলো জ্বালতে গেল কনরাড। তার পেছনেই দেখা গেল একজনকে।
লোকটা একটু এগোতেই টমি ছবিটা তুলে সমস্ত শক্তি দিয়ে দ্বিতীয় লোকটার মাথায় আঘাত করল। কাচ ভাঙ্গার ঝনঝন শব্দ…অস্ফুট আর্তনাদ…লোকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।