স্যার জেমস জানালেন, মহিলার আত্মীয়স্বজনকে তারা চেনেন না। বিদেশে যাবেন শুনে তারা দেখা করতে এসেছিলেন।
কিছুক্ষণ পরেই একজন নার্স এসে পৌঁছল। সকলে সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
.
–আর তো কোনো পথ রইল না। এবার আমরা কি করব? হতাশকণ্ঠে বলল হার্সিমার।
–মেট্রোপোলে যেতে হবে আমাদের। ডাঃ হল আমাদের সাহায্য করতে পারেন।
বেলা সাড়ে এগারোটার মধ্যেই সকলে ডাঃ হলের সঙ্গে মিলিত হলেন।
ডাঃ হল হার্সিমারকে চিনতে পারলেন। টুপেনসের পরিচয় তাঁকে জানানো হল। স্যার জেমস বললেন, আমরা একটি তরুণীর সন্ধান করছি। খবর আছে, বোর্নমাউথে আপনার চিকিৎসাধীনে সে কোনো সময়ে ছিল। একটা মামলার প্রয়োজনেই এসব কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করছি।
–আপনাকে সাধ্যমত সাহায্য করব, বললেন ডাঃ হল, মিঃ হার্সিমারও একটি তরুণীর কথা জানতে চেয়েছিলেন।
-বুঝতেই পারছেন, বললেন স্যার জেমস, এক্ষেত্রে নামটা মূল্যহীন। আচ্ছা, মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার নামে কোনো মহিলার সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে?
–২০ সাউথ অ্যালে ম্যানসনের সেই সুন্দরী মহিলা তো?
–হ্যাঁ। তিনি গতরাতে মারা গেছেন; বেশি মাত্রায় ক্লোরাল খেয়েছিলেন।
–খুবই দুঃখের কথা।
–তিনি কি তার অল্পবয়সী কোনো আত্মীয়াকে, আপনার কাছে রেখে গেছেন?
–মেয়েটির কি নাম?
–তার ভাইঝি হতে পারেন, জেনেট ভ্যান্ডেমেয়ার।
–কবে তাকে আনেন?
–সম্ভবত ১৯১৫ সালের জুন-জুলাইতে।
-হ্যাঁ, বললেন ডাঃ হল। তার স্মৃতিভ্রংশ ঘটেছে। ১৯১৫ সালের ৭ই মের আগের কোনো কথাই স্মরণ করতে পারছে না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, স্যার জেমস। মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের কাছে শুনেছি লুসিটোনিয়া নামে যে যাত্রীবাহী জাহাজটাকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মেয়েটি তার যাত্রী ছিল।
-কতটুকু সে স্মরণ করতে পারছে?
–জীবিত যাত্রীদের সঙ্গে তীরে পৌঁছনো পর্যন্ত। কোথা থেকে এসেছে, তার নাম কি, এসব কিছুই বলতে পারছে না।
স্মৃতিশক্তি কি আর ফিরে আসবে না?
–আসবে, তবে সময়সাপেক্ষ। স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত লাগলে এমন হয়ে থাকে। ওকে অন্য কারো কাছে দিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার রাজি হননি।
-আপনি জেনকে আনতে বলুন, বলল হার্সিমার, এবারে আমি চেষ্টা করে দেখি।
–কিন্তু মিঃ হাসিমার, মিস ভ্যান্ডেমেয়ার তো এখন আমার চিকিৎসায় নেই।
–সে আপনার এখানে নেই?
-না। আপনি যেদিন এখানে গাছ থেকে পড়লেন, গত বুধবার, তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
-সেদিন সন্ধ্যায়?
রাতের ট্রেনে। মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের কাছ থেকে জরুরী খবর আসার পরেই নার্স তাকে নিয়ে রওনা হয়ে যায়।
-সেই নার্স এডিথ?
–হ্যাঁ। কি হয়েছে মেয়েটির?
–সেটাই খবর নিতে হবে, বললেন স্যার জেমস, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ডাঃ হল।
বিদায় নিয়ে সকলে বাইরে এলো। টুপেনস বলল, জেনের ব্যাপরটা আবার অনিশ্চিত হয়ে গেল। টমিরও কোনো খবর নেই।
তবু আশা ছাড়লে চলবে না, বললেন স্যার জেমস, আমাকে স্কটল্যান্ড যেতেই হচ্ছে। এদিককার খবরাখবর আমাকে জানিও।
-কিন্তু আপনি চলে গেলে
টুপেনসের হাত ধরে স্যার জেমস বললেন, ভেঙ্গে পড়ো না, ছুটির দিনের সময়ও কাজের সময়।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্যার জেমস চলে গেলেন।
.
গাড়িতে যেতে যেতে হার্সিমার টুপেনসকে বলল, জেনকে ফিরে পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। ভাবছি আমেরিকাতেই ফিরে যাব।
–আমার টমিকে খুঁজে বার করতেই হবে। চিন্তিতভাবে বলল টুপেনস।
আরো কিছু কথাবার্তা হলো ওদের মধ্যে। টুপেনস বুঝতে পারল, হার্সিমার জেনের আশা ছেড়েই দিয়েছে।
টমি আর টুপেনস দুজনে নিছকই বন্ধু, প্রেমিক প্রেমিকা নয়, জানতে পেরে হার্সিমার তাকে বিয়ের প্রস্তাব করল।
–তোমাকে আমার খুবই পছন্দ টুপেনস।
–আমাকে ভাবতে হবে জুলিয়াস।
–বেশ আগামীকাল পর্যন্ত ভেবে আমাকে জানিও।
রিজে পৌঁছে, যে যার ঘরে চলে গেল। টমির ছবিটা তুলে নিল টুপেনস। সহসা মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
কিছু পরে একটা কাগজে কিছু লিখে খামে পুরে হার্সিমারের ঘরে গেল সে। তাকে না পেয়ে চিঠিটা রেখে বেরিয়ে এলো।
একটা ছেলেকে তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।
–আপনার টেলিগ্রাম, মিস।
টেলিগ্রামটা পড়েই টুপেনস চিৎকার করে উঠল। ওটা টমির টেলিগ্রাম।
.
০৫.
মাথায় একটা যন্ত্রণা নিয়ে টমি জ্ঞান ফিরে পেল। ধীরে ধীরে চোখ মেলল। তারপর উঠে বসল।
দাড়িওয়ালা জার্মান লোকটি গ্লাসে ব্র্যাণ্ডি এগিয়ে দিল। ওটা খেয়ে চাঙা হল সে। যে ঘরে সভা বসেছিল সেখানেই একটা সোফাতে শুয়েছিল টমি। তার একপাশে জার্মান লোকটি, অন্য পাশে নিচের দরজার সেই শয়তানমুখো লোকটা। ও শুনতে পেল, জার্মান লোকটা তাকে কনরাড বলে সম্বোধন করছে। বোরিসও আছে।
টমি নিজের অবস্থাটা একপলকে বুঝে নিল। মাথা ঠিক রেখে বলা কওয়া করতে হবে।
-তুমি গুপ্তচর হয়ে আমাদের ডেরায় ঢুকেছ। তোমাকে মেরে ফেলা হবে, কিছু বলার আছে? বলল জার্মান লোকটি।
–তাহলে জ্ঞান ফেরালেন কেন? খুন করে ফেললেই হতো। বলল টমি।
জবাব দিতে একটু ইতস্ততঃ করল জার্মান লোকটি। সেই সুযোগে টমি ফের বলল, আমি কোথা থেকে এসেছি, কতটা জেনেছি, আমাকে খুন করলে এসব তো জানা যাবে না।
বোরিস চেঁচিয়ে উঠল, তোমাকে আর সুযোগ দেব না। ওকে এখুনি খুন কর।