ব্যাপারটা মরিস লক্ষ করল বলে মনে হলো না। কিশোরের দিকে তাকাল। ‘কুইসটনে আমার বাড়ি, লেক ওকিশবির একটা ছোট্ট শহরে। এখানে এসেছি রোডেও দেখতে, আমার এক বন্ধু প্রতিযোগিতা করছে। টাকার প্রয়োজনে অ্যালিগেইটরটা সরানোর কাজ নিয়েছি, পঞ্চাশ ডলার।’ আবার কিশোর ও রবিনের কাঁধ চেপে ধরল ও। ‘কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারো।’
দুজনকে চুপ করে থাকতে দেখে হাত সরিয়ে নিল মরিস। হাঁটতে শুরু করল। পিছু নিতে গেল রবিন। বাধা দিল কিশোর।
‘এসব কী?’ জানতে চাইল ডেনভার।
‘আমিও তো বুঝতে পারছি না,’ রবিন জবাব দিল।
রোডেওর একজন বাদক একটা ট্রাকের পিছনে চেপে এসে হাজির হলো। হাতে একটা বেহালা। নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘বন্ধুগণ, নাচতে এসো! যার যার জোড়া বেছে নাও!’
খুঁটির মাথায় আলো জ্বেলে ঘিরে দেয়া জায়গাটায় নাচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওখানে জড় হয়েছে জনাবিশেক তরুণ-তরুণী
এক ফাঁকে কিশোরকে বলল রবিন, ‘বিল এমন ভান করল, যেন মরিসকে চেনেই না।‘
শুনে ফেলল বিল। ‘এই, কী বলছ?’
শুনেই যখন ফেলেছে আর গোপন করার কোন মানে হয় না। রবিন জিজ্ঞেস করল, ‘বিল, গেইটর সোয়াম্পে কী করছ তোমরা?’
‘মানে?’
‘মানে, কী করছ জানতে চাইছি।’
‘জেরা করছ কেন?’
পিছন থেকে ডেপুটি ক্যানার বলে উঠলেন, ‘করবেই তো। ওরা শখের গোয়েন্দা যে। এটাই তো ওদের কাজ।’
ভয় দেখা গেল বিলির চোখে। পিছিয়ে যেতে শুরু করল।
‘আরে! কোথায় যাচ্ছ?’ বিলকে ধরার জন্য হাত বাড়াল রবিন। আচমকা ঘুরে দৌড় দিল বিল। অগ্নিকুণ্ডের পাশ ঘুরে ওপাশের অন্ধকারে চলে গেল।
‘বিল! আরে এই বিল! দাঁড়াও! দাঁড়াও!’ রবিনও ছুটতে শুরু করল।
অগ্নিকুণ্ডের কাছে বসে নিশ্চিন্তে কাবাব চিবাচ্ছে মুসা। হাত ধরে একটানে ওকে তুলে নিল কিশোর। রবিনের পিছনে ছুটল দুজনে।
পাঁচ
অগ্নিকুণ্ডের অন্যপাশে চলে এসেছে, ঠিক এই সময় কারও জুতোয় হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল রবিন।
‘সরি!’ মাটি থেকে রবিনকে টেনে তুলল ফক্স ডেনভার। ‘লাগেনি তো?’
বিলকে আর দেখা যাচ্ছে না। চিন্তিত ভঙ্গিতে ডেনভারের দিকে তাকাল রবিন। ইচ্ছে করে ওকে বাধা দেয়নি তো ডেনভার? জুতো বাড়িয়ে দিয়েছিল, না সত্যিই এটা দুর্ঘটনা?
কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর ও মুসা।
ফক্স ডেনভার চলে গেল।
‘চলো,’ রবিনকে বলল কিশোর, ‘ডেপুরি ক্যানারকে জানাই।’ বিকেলের পর থেকে যা যা ঘটেছে, সব ক্যানারকে খুলে বলল ওরা।
‘অদ্ভুত লাগছে,’ ক্যানার বললেন। ‘মরিস মরিসন কিংবা বিল ওয়াটমোর কাউকেই চিনি না আমি। হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কিটির সঙ্গেও কথা বলা দরকার। কিন্তু ওকে পাওয়াই মুশকিল।’
‘বুল রাইডিঙে প্রতিযোগিতা করার জন্যে কাল বিকেলে কিটি আবার আসবে এখানে,’ কিশোর বলল।
‘ঠিক। কাল বিকেল পাঁচটায়। তখন ধরব ওকে। এখানেই তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে আমার।
‘ঠিক আছে।’ কিশোর জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, ব্যাংক ডাকাতরা যে বোটটাতে করে পালিয়েছে ভাবা হচ্ছে সেটার খোঁজ পেয়েছেন?’
‘নাহ্!’ ভ্রূকুটি করলেন ডেপুটি। ‘এখনও পাইনি। খোঁজা হচ্ছে।’
‘ডাকাতির টাকাও নিশ্চয় পাননি এখনও?’
‘না। মজার ব্যাপারটা হলো, একজন ডাকাতেরও লাশ পাওয়া যায়নি। বেমালুম হাওয়া। ঝড়ের সময় ঢেউয়ের টানে বহুদূরে চলে গিয়ে থাকতে পারে।’
‘আর টাকাগুলোও নিশ্চয় নষ্ট হয়ে গেছে পানিতে ভিজে,’ কিশোর বলল।
‘না, ওই একটা ব্যাপারে আমরা চিন্তিত নই।’
‘মানে?’
‘ওই টাকা পানিতে ভাসে না,’ রহস্যময় কণ্ঠে জবাব দিলেন ক্যানার। ঘড়ি দেখলেন। ‘আমাকে এখন যেতে হবে। গুড নাইট। হ্যাঁ, ডাকাতি নিয়ে তোমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। উন্নতমানের যন্ত্রপাতি আছে কোস্ট গার্ডের। টাকা, লাশ, সবই উদ্ধার করে ফেলবে।’
ডেপুটি চলে গেলে মুসা বলল, ‘আর আমার নাচতে ইচ্ছে করছে না। চলো, ক্যাম্পে যাই।’
‘নাচলে আর কোথায়? সারাক্ষণ তো বসে বসে মাংসই গিললে দেখলাম।’
‘যা-ই হোক, ভরা পেট নিয়ে নাচতে পারব না।’
‘কিন্তু নৌকা ছাড়া যাব কীভাবে?’ রবিনের প্রশ্ন। ‘বিল তো চলে গেছে।’
‘এখানে বসে থেকেই বা কী করব? সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে যাই আগে, তারপর দেখি, কোনও ব্যবস্থা হয় কিনা।’
গোলাঘরের দিকে এগোল ওরা। ওদের দেখে ঘোড়া দুটো আর খচ্চরটাকে নিয়ে বেরিয়ে এল ডিক টোম্যান। হেসে বলল, ‘দেরি দেখে আমি তো ভাবলাম ঘোড়া ফেলেই চলে গেছ।’
.
শূন্য হাইওয়ে। আকাশের আধখানা চাঁদের আলোয় কোনমতে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে রাস্তাটা। কিছুক্ষণ নীরবে পথ চলল ছেলেরা। কিশোর-রবিন চুপ। ওদের মনে গভীর ভাবনা। আর মুসা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছে না। খচ্চরটাকে সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে।
‘এমন যদি হয়, মরিস আর বিল গেইটর সোয়াম্পে কিছু পেয়েছে, যেটা জানতে দিতে চায় না কাউকে?’ অবশেষে কথা বলল কিশোর।
‘কী পাবে? ডাকাতির টাকা?’ মুসার প্রশ্ন।
‘ডেপুটি ক্যানার কি বলেছেন, মনে করো। তিনি বলেছেন, ডাকাতরা যা নিয়েছে সে-টাকা পানিতে ভাসে না।’
‘টাকা পানিতে ভাসে না! কথাটা কেমন অদ্ভুত, তাই না?’ রবিন বলল। ‘বিল আর মরিসের ব্যাপারটাও অদ্ভুত। হাত মেলানোর সময় এমন ভান করল, যেন একে অন্যকে চেনেই না। হয়তো সত্যিই চেনে না। আজ সকালে সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে সাদা হ্যাট পরা যে লোকটাকে দেখেছি সে অন্য কেউও হতে পারে। চেহারা তো আর দেখিনি।’