জবাব দেয়ার আগে দ্বিধা করল বিল। ‘জলাভূমি দিয়ে বোটে চলাচল করতে আমার ভাল লাগে।’
সন্দিহান চোখে বিলের দিকে তাকিয়ে রইল রাস্টি। রবিন লক্ষ করল, অস্বস্তি বোধ করছে বিল। ওর কাছ থেকে তথ্য জানার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি বলল, ‘অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, বিল। তোমার সঙ্গেই যাব আমরা। গেইটর সোয়াম্প হয়ে বোটে করে যাওয়াটা নিশ্চয়ই খুব মজার।’
‘যা-ই করো, মাঝরাতের আগে যাবে,’ রাস্টি বলল। ‘অ্যালিগেইটরটাকে সরানোর জন্য টাকা নিয়েছে মরিস। মাঝরাতের পর আর জলাভূমিতে থাকা চলবে না।’ পার্কিং লটের দিকে হাঁটতে শুরু করল ও।
‘বাঙ্ক-হাউসে গিয়ে চট করে গোসলটা সেরে আসি,’ বিল বলল। ‘বারবিকিউতে দেখা হবে তোমাদের সঙ্গে।’
বিল চলে গেলে রবিনের দিকে তাকাল মুসা। ‘মরিসের কথা বিলকে জিজ্ঞেস করলে না যে?’
‘করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম বিলের সন্দেহ হয়ে গেলে শেষে কোন প্রশ্নেরই জবাব দেবে না।’
মাথা ঝাঁকাল মুসা। ‘তা ঠিক।’
‘প্রথমে এখন কিশোরকে খুঁজে বের করতে হবে,’ রবিন বলল। ‘ও কী জানল, শুনি।’
গরুর খুপরিগুলোর কাছে পাওয়া গেল কিশোরকে। দুজন রোডেও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলছে। রবিন আর মুসাকে দেখে সরে এল কিশোর। ‘এখানে মরিস মরিসনকে কেউ চেনে না।’
বিলের সন্দেহজনক আচরণের কথা কিশোরকে জানাল রবিন। ‘আমার মনে হয় গেইটর সোয়াম্পে অবৈধ কিছু একটা করছে বিল আর মরিস মিলে।’
‘বেআইনীভাবে অ্যালিগেইটর শিকার করছে হয়তো,’ কিশোর বলল। ‘অ্যালিগেইটরের চামড়ার অনেক দাম, চোরাই বাজারে বিক্রি করে।’ চিন্তিত ভঙ্গিতে নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল ও। ‘জলাভূমিতে গিয়ে দেখা দরকার।’
‘আপাতত জলাভূমির কথা বাদ। বারবিকিউতে যাই, চলো,’ বলল মুসা।
.
সামিয়ানার পিছনে গনগনে অগ্নিকুণ্ড ঘিরে বসেছে বেশ কিছু তরুণ- তরুণী। রোডেও শ্রমিকরা খুঁটির মাথায় আলো জ্বেলে দিয়েছে। মস্ত দুটো সিকে গেঁথে গরুর আস্ত রান কয়লার আঁচে পুড়িয়ে কাবাব বানানো হচ্ছে। সুগন্ধ ভুরভুর করছে বাতাসে।
ডেপুটি শেরিফ গ্রেগ ক্যানারকে দেখা গেল ওখানে। পরনে এখন ইউনিফর্ম নেই। সাদা শার্ট, নীল জিনস আর কাউবয় বুট পরেছেন। কথা বলছেন মিস্টার গিবসনের সঙ্গে। কিশোরদের দেখে হাত নাড়লেন।
হাতে একটা ছোট সাইজের কাবাবের সিক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল বিলকে। থেকে থেকেই সোনার মোহরটায় টোকা দিয়ে শূন্যে ছুঁড়ছে। ‘বুনো ষাঁড়কেও পরোয়া করি না আমি,’ বড়াই করছে ও। ‘কাল দেখো। ব্ল্যাক সাইক্লোনের পিঠে চড়ব।’
‘মিস্টার বার্নার তারমানে একজন স্পন্সর জোগাড় করে দিয়েছেন তোমাকে,’ বিলের কাছে গিয়ে দাঁড়াল কিশোর।
‘হ্যাঁ।’
মোহরটার দিকে ইঙ্গিত করে কিশোর বলল, ‘ওটা কী? তোমার সৌভাগ্যের প্রতীক?’
‘অ্যা? হ্যাঁ, সৌভাগ্যের প্রতীক।’ হাতের মুঠো বন্ধ করে মোহরটা লুকিয়ে ফেলল বিল, যাতে কিশোর আর দেখতে না পায়।
অন্ধকার ছায়া থেকে ক্যাম্পফায়ারের আলোয় বেরিয়ে এল লম্বা, টাকমাথা, কালো চশমা পরা একজন মানুষ। বিলকে বলল, ‘হ্যাঁ, লুকিয়ে ফেলো, খোয়া যাওয়ার আগেই।’
মোহরটা পকেটে ভরল বিল। কিশোরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, ‘ইনি আমার স্পন্সর, মিস্টার ফক্স ডেনভার।’
হাত বাড়িয়ে দিল কিশোর। কর্কশ হাতে কিশোরের হাতটা চেপে ধরে ডেনভার বলল, ‘মাছধরা আমার পেশা। রোডেওতে আসি বিনোদনের জন্যে। তোমরা বিলের বন্ধু নাকি?’
‘বলতে পারেন। অবশ্য আজই ওর সঙ্গে পরিচয় হলো।’
‘ও। তারমানে আমার মতই নতুন পরিচয়।’
‘হ্যাঁ,’ জবাবটা দিল রবিন। ‘সচরাচর এ রকম অপরিচিত রাইডারদেরকেই স্পন্সর করেন নাকি আপনি, সার?’
রবিনের প্রশ্ন শুনে হাসল ডেনভার। ‘না, তা করি না। তবে বিলকে দেখে মনে হলো, পারবে, তাই স্পন্সর করলাম। কেন, এ প্রশ্ন কেন?’
‘রবিন আসলে বলতে চাইছে বিলের বয়েস কম,’ কিশোর বলল। ‘আরও অভিজ্ঞ কাউকেই সাধারণত স্পন্সর করা হয় তো।’
‘আমার বয়েস কম কে বলল?’ রেগে গেল বিল। ‘আঠারো! কম হলো? এরচেয়ে কম বয়েসীদেরও স্পন্সর করা হয়। যোগ্যতাটাই আসল কথা।’
কিশোর-রবিন দুজনের কাঁধেই কঠিন হাতের চাপ লাগল হঠাৎ। ওরা দেখল মরিস মরিসন দুই হাতে ওদের কাঁধ ধরেছেন। ‘তোমাদের তো এখন ফিশিং ক্যাম্পে বিছানায় থাকার কথা।’
‘হ্যাল্লো, মিস্টার মরিসন।’ বলে রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। ‘রবিন, এঁর কথাই তোমাকে বলেছিলাম, অ্যালিগেইটর শিকারি। মিস্টার মরিসন, ও আমার বন্ধু, রবিন।’ মুসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মুখ ফেরাল ও। কিন্তু কাছাকাছি নেই মুসা। বেশ কিছুটা দূরে আগুনের একেবারে কাছ ঘেঁষে বসেছে, কাবাব ঝলসানো হচ্ছে যেখানে।
মরিসনের সঙ্গে হাত মেলাল রবিন। চট করে তাকাল একবার কিশোরের দিকে। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, সকাল বেলা সোয়াম্পল্যান্ড গুডস জেনারেল স্টোরে এই লোকটার সঙ্গেই কথা হয়েছিল। ‘আমি তো ভাবলাম,’ রবিন বলল, ‘কী-ওয়েস্টে চলে গেছেন আপনি।’
চোখের পাতা সরু হয়ে এল মরিসের। মত বদলেছি।’
‘বিল ওয়াটমোরের সঙ্গে আপনার আগে থেকেই পরিচয় আছে মনে হচ্ছে?’ কিশোরের প্রশ্ন।
‘না, নেই।’ বিলের দিকে তাকাল মরিস। হাত বাড়িয়ে দিল। ‘হাই, বিল।’
ভুরু কুঁচকে গেল কিশোরের।
‘হাই!’ রবিন লক্ষ করল হাত মেলানোর সময় মরিসের কাটা আঙুলের দিকে তাকিয়ে আছে বিল, যেন আগে আর চোখে পড়েনি।