‘কিটি ওয়াটারম্যান?’ রবিন বলল, ‘কিশোর, হ্যারিসের আজব কিটি না তো? টুইন সাইপ্রেস কীতে যে লোকটাকে দেখেছিলে?’
কিশোর জবাব দেয়ার আগেই ঝটকা দিয়ে খুলে গেল শূটের দরজা। শূন্যে পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে তীব্র গতিতে বেরিয়ে এল আরেকটা ঘোড়া। ভীষণ বেয়াড়া। প্রচণ্ড ঝাঁকি দিয়ে আরোহীকে ফেলার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু আরোহীও কম না। জোঁকের মত লেগে রইল ঘোড়ার পিঠে। নির্বাচিত ঘোষিত হওয়ার ঘণ্টা বাজতেই আলগোছে লাফ দিয়ে নেমে এল ঘোড়ার পিঠ থেকে, তিন গোয়েন্দার একেবারে সামনে।
শীতল কালো চোখ মেলে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে রইল কিটি দর্শকদের করতালি থেমে এলে লাফিয়ে রিঙের বেড়া ডিঙাল ও, তিন গোয়েন্দার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘গেইটর সোয়াম্প থেকে দূরে থেকো, নইলে…’ নইলে কী হবে মুখে না বলে হাত দিয়ে গলায় পোঁচ মেরে বুঝিয়ে দিল।
চার
‘এই শোনো, দাঁড়াও!’ চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
কিন্তু ফিরল না কিটি। রিঙের উল্টো দিকের একটা গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
‘আচ্ছা, হচ্ছেটা কী, বলো তো?’ মুসার প্রশ্ন।
‘জানি না, তবে জানার চেষ্টা করতে যাচ্ছি। তুমি এখানে থাকো, বলে রবিনকে নিয়ে দর্শক বেরোনোর গেটের দিকে ছুটল কিশোর।
বেরিয়ে এসে কিটিকে কোথাও দেখল না। লাল রঙের চওড়া কানাওয়ালা হ্যাট পরা একজন ভাঁড়কে চোখে পড়ল রবিনের, ব্ল্যাক ডেভিলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গোলাবাড়ির কাছে আস্তাবলে।
কিটির চেহারা ও পোশাকের বর্ণনা দিয়ে ওরকম কাউকে যেতে দেখেছে কিনা লোকটাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আঙুল তুলে গোলাঘরের পিছনের একটা মাঠ দেখাল ভাঁড়।
দূরের বনের দিকে একজন মানুষকে চলে যেতে দেখল কিশোর।
‘জলাভূমিতে যাচ্ছে,’ ভাঁড় জানাল। ‘ওর পিছু নিয়ে লাভ নেই।’
‘কেন?’ মাঠের ওপাশে বনের ভিতর কিটিকে চলে যেতে দেখছে কিশোর।
‘ধরতে পারবে না, তার কারণ,’ ভাঁড় জবাব দিল, ‘এখানকার জলাভূমির প্রতিটি ইঞ্চি ওর চেনা। কোথায় সাপ, কোথায় অ্যালিগেইটরের বাসা, কোথায় চোরাবালি, সব জানে। ওই জলাভূমিতে তোমরা পাঁচ মিনিটও টিকতে পারবে না।’
‘মনে হয় ঠিকই বলছে, কিশোর,’ রবিন বলল। ‘অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। কিটিকে খুঁজে পাব না আমরা।’
‘কিটিকে তারমানে আপনি ভাল করেই চেনেন?’ ভাঁড়কে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘সারা জীবন এখানে কাটিয়েছি, চিনব না। ও, আমার নাম ডিক, ডিক টোম্যান।’
আচমকা বিরক্ত ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠল ব্ল্যাক ডেভিল। পিছনের পায়ে খাড়া হয়ে যেতে চাইছে। তাড়াতাড়ি ঘোড়াটাকে শান্ত করার চেষ্টা করল টোম্যান। ‘সরি, এখন আর কথা বলতে পারব না। ঘরে যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে গেছে ও।’ মস্ত হ্যাটের কানা ছুঁয়ে মৃদু বাউ করল ভাঁড়। ঘোড়াটাকে টেনে নিয়ে গোলাঘরের দিকে চলে গেল।
মুসাও চলে এসেছে ততক্ষণে। কিশোর বলল, ‘গেইটর সোয়াম্পে কিছু একটা ঘটছে।’
‘কী ঘটছে?’ মুসার প্রশ্ন।
পঞ্চাশ ডলারের বিনিময়ে অ্যালিগেইটরটাকে সরিয়ে দেওয়ার চুক্তি করেছে মরিস, দু’রাত কাউকে জলাভূমিতে যেতে নিষেধ করেছে, এ কথা দুই সহকারীকে জানাল কিশোর। তারপর বলল, ‘মরিসের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে। রবিন, তোমরা দুজন বিল ওয়াটমোরের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করো। মরিসের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা কী, বোঝা দরকার। আমি মরিসের খোঁজ নেব।’
.
পরের একটি ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিল কিশোর। অনেককেই জিজ্ঞেস করল মরিস মরিসনকে চেনে কিনা। ফ্রগ’স পেনিনসুলার স্থানীয় কেউ তো চেনেই না, বাইরে থেকে রোডেও রাইডে অংশগ্রহণ করতে আসা কেউও চেনে না ওকে।
রবিন আর মুসা ওদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে, সামিয়ানার ভিতর। অবশেষে রেজাল্ট বোর্ডের সামনে এসে বিলকে পেল, যেখানে ব্রঙ্কো-রাইডিঙে অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘এই, বিল,’ ডাক দিল রবিন।
ফিরে তাকাল বিল। ‘ও, তোমরা।’
‘তোমার খবর কী?’ জানতে চাইল মুসা।
‘আর বোলো না,’ বিড়বিড় করল বিল। ‘দেখো না কী কাণ্ড করে রেখেছে!’
বোর্ডের দিকে তাকাল রবিন। প্রথম দুজন রাস্টি কালাহাল ও কিটি ওয়াটারম্যান। বিলের নাম বারো নম্বরে। রবিন জিজ্ঞেস করল, ‘তোমাকে এত নীচে নামাল কেন? ঘণ্টা না বাজানো পর্যন্ত তো টিকেই ছিলে।’
‘শুধু টিকে থাকলেই হয় না, আরও অনেক ব্যাপার আছে। ঘোড়ার পিঠে বসে থাকার ভঙ্গি, কতটা সাবলীল, কেমন ঘোড়া, এ রকম নানা জিনিস বিবেচনায় আনা হয়।’
‘তোমরা এখানে!’ তাড়াহুড়া করে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল রাস্টি। ‘সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে ফিরে যাচ্ছি আমরা। এখুনি যেতে হবে।’
‘আমাদের বয়েসীরা একটা বারবিকিউর ব্যবস্থা করেছে,’ মুসা জানাল। ‘দাওয়াতও পেয়েছি। যোগ দিতে চাচ্ছিলাম।’
‘আমার তো কোন তাড়া নেই,’ রাস্টি জবাব দিল। ‘কিন্তু অতিথিরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পন্টুন বোটে আমাদের সঙ্গে ফিশিং ক্যাম্পে না গেলে এখানে আটকে পড়বে তোমরা। যাওয়ার আর কোন ব্যবস্থা নেই। ‘
‘আমি ওদের পৌঁছে দিতে পারি,’ বিল বলল। ‘সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে আমার একটা বোট বাঁধা আছে। কালাহান’স ফিশিং ক্যাম্পে যাবে তো ওরা? যাওয়ার সময় আমার পথেই পড়বে।’
‘বাড়ি কোথায় তোমার?’
‘ফ্রগ’স পেনিনসুলাতেই।’
‘গেইটর সোয়াম্প পাড়ি দিয়ে বোটে করে সোয়াম্পল্যান্ড গুডস হয়ে এসেছ?’ অবাক মনে হলো রাস্টিকে। ‘ফ্রগ’স পেনিনসুলা থেকে হেঁটেও তো এর অর্ধেক সময়ে এখানে চলে আসা যায়।’