রাস্টি।
‘গুড লাক!’ রবিন বলল।
তাড়াহুড়া করে চলে গেল রাস্টি।
‘আমার গলা শুকিয়ে গেছে,’ কিশোর বলল। ‘কোকটোক কিছু খাওয়া দরকার। তোমরা খাবে?’
‘খাব তো বটেই,’ মুসা জবাব দিল। ‘সবচেয়ে বড়টা।’
‘তোমরা যাও, আমি নিয়ে আসছি।’
মুসাকে নিয়ে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের দিকে এগোল রবিন।
কোকের জন্য কনসেশন স্ট্যান্ডের লাইনে দাঁড়িয়েছে কিশোর সামনে দুজন রোডেও প্রতিযোগী তরুণের কথা কানে এল। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া শীতকালের ঝড়ে ফ্লোরিডা বে’তে ডুবে যাওয়া ব্যাংক ডাকাতরা মরে গেছে না বেঁচে আছে, এ নিয়ে তর্ক করছে লোকগুলো। কিশোরও তাতে যোগ দিল। কাউন্টারের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে এতটাই খাতির জমিয়ে ফেলল লোকগুলোর সঙ্গে, সেদিন বিকেলে রোডেও প্রতিযোগিতার পর সামিয়ানার পিছনে বারবিকিউতে দাওয়াত পেয়ে গেল।
বড় বড় তিনটে কোকের বোতল হাতে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের দিকে এগোনোর সময় রাস্টির ফিশিং ক্যাম্প থেকে আসা তিনজন অতিথিকে গভীর মনোযোগে আলোচনা করতে দেখল কিশোর। কানে এল, রনি ওয়াকার বলছে, ‘জলাভূমিতে একটু ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে ছিল আমার আর টনির, কিন্তু অ্যালিগেইটরটার জন্যে সাহস পাচ্ছি না।’
অ্যালিগেইটরের কথা শুনে কান খাড়া করে ফেলল কিশোর।
‘বেশি সাহস না করাই ভাল,’ বার্নার বলল।
‘আমি তোমাদের সাহায্য করতে পারি,’ ভারি একটা কণ্ঠ ওদের পিছন থেকে বলল। লাল দাড়িওয়ালা একজন লোক সামনে এগিয়ে এল। আমার নাম মরিস মরিসন। সারাজীবন অ্যালিগেইটর ঘাঁটাঘাঁটি করেছি।’ ডান হাতটা উঁচু করে দেখাল ও। কড়ে আঙুলের পুরোটা আর ওর পাশের আঙুলের অর্ধেকটা নেই। ‘পঞ্চাশ ডলার ফি আর দুই রাত সময় দিলে অ্যালিগেইটর সমস্যার সমাধান আমি করে দিতে পারি।’
‘স্পেশাল পারমিশন ছাড়া অ্যালিগেইটর মারা বেআইনী,’ টনি ওয়াকার বলল।
‘অ্যালিগেইটর মারার কথা কে বলছে। আমি ওটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জলাভূমির নির্জন কোন জায়গায় রেখে আসব।’
‘তাহলে পঞ্চাশ ডলার খরচ করা যায়।’ রনি-টনির দিকে তাকাল বার্নার। মানিব্যাগ বের করল। টাকাটা আমিই দিচ্ছি।’
‘তবে আমার একটা অনুরোধ আছে,’ মরিস বলল। ‘আমি রাতের বেলা কাজ করব। ওই সময় আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করা চলবে না। বেশি লোকজন দেখলে অ্যালিগেইটরটা লুকিয়ে পড়বে। মাঝরাতের পর থেকে কারফিউ জারি করলাম—গেইটর সোয়াম্পের ধারে কাছে যাবেন না কেউ।’
তিনজনেই মরিসের কথায় রাজি। থেমে দাঁড়িয়েছিল, আবার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়াল কিশোর। মুসা আর রবিনকে পাওয়া গেল। কিশোর বলল, ‘রবিন, তোমার সেই লাল দাড়িওয়ালা লোকটাকে দেখলাম। অ্যালিগেইটরটাকে সরানোর জন্যে তাকে নিয়োগ করেছে গুজ বার্নার।’
‘অ্যালিগেইটর শিকারি নাকি লোকটা?’ রবিনের প্রশ্ন। ‘আমি তো ভেবেছিলাম ও ডুবুরি। স্নরকেল পরে পানিতে ডুব দেয়।’
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘আমার মনে হয়, দুটোই। অ্যালিগেইটরও শিকার করে, আবার ডুবুরিও। কিন্তু তুমি না বললে কী-ওয়েস্টের দিকে চলে গেছে লাল দাড়িওয়ালা লোকটা?’
ঠিক এই সময় গেট খুলে গেল। ঘোড়ার পিঠে চড়ে শূট থেকে বেরিয়ে রিঙে ঢুকল প্রথম ব্রঙ্কো রাইডার।
‘বিল ওয়াটমোর!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
পিঠ বাঁকিয়ে লাফানো শুরু করল ঘোড়াটা। অনবরত পিছনের দুই পা ছুঁড়ছে। চাবুকের মত সামনে পিছনে ঝাঁকি খাচ্ছে ওর পিঠে বসা আরোহী। কিন্তু পড়ছে না। শক্ত হয়ে পিঠে চেপে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর ঘণ্টা বাজিয়ে ওকে যোগ্য এবং পরের খেলার জন্য নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।
লাফ দিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এল বিল। আস্তে করে পা রাখল পুরু ধুলোয় ঢাকা রিঙের মাটিতে। স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি। ঢোলা পোশাক পরা, মুখে রঙ মাখা দুজন ভাঁড় বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করতে করতে ছুটে এসে দু’পাশ থেকে লাগাম ধরে ঘোড়াটাকে সরিয়ে নিয়ে গেল।
‘মুসা, ল্যাসো ছুঁড়তে যদি হাত কাঁপে তোমার, ওদের সঙ্গে যোগ দিতে পারো,’ ভাঁড়দের দেখিয়ে রসিকতা করল রবিন।
‘না জেনে কথা বোলো না,’ ঝাঁঝিয়ে উঠল মুসা। ‘রোডেও ভাঁড় হওয়া অত সোজা না। ভীষণ কঠিন কাজ। আর খুবই বিপজ্জনক। ওস্তাদ লোক ছাড়া ভাঁড় হতে পারে না।’
দর্শকদের উদ্দেশ্যে বাউ করল বিল। হ্যাট তুলে নাড়ল। রবিন লক্ষ করল, হ্যাটটা সাদা। ব্যান্ডে কমলা ও কালো রঙের পালক পরানো। এয়ারবোটে মরিস মরিসনের সঙ্গে যে লোকটাকে দেখেছিল, তার মাথায়ও এ রকম হ্যাট পরা ছিল।
‘রাস্টি আসছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
শূটের ভিতর দেখা যাচ্ছে রাস্টিকে। ব্ল্যাক ডেভিল নামে একটা কালো ঘোড়ার পিঠে বসে আছে। দরজা খুলে গেল। পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বেরিয়ে এল ঘোড়াটা। ‘কালো শয়তান’ই। নামের সঙ্গে স্বভাবের মিল আছে। পাক খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে আরোহীকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু লাগাম ধরে শক্ত হয়ে বসে থাকল রাস্টি। মজা পেয়ে একনাগাড়ে চিৎকার করছে বাচ্চা ছেলের মত। নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো ওকেও। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এল ও। বিপুল করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানাল দর্শকরা। এ অঞ্চলে প্রচুর ভক্ত আছে ওর, বোঝা গেল।
‘হারিক্যানে চড়ে আসবে এখন কিটি ওয়াটারম্যান,’ ঘোষণা দিলেন মিস্টার গিবসন। মুহূর্তে হট্টগোল থেমে গেল। চুপ হয়ে গেল দর্শক।