ভালমত ট্রেনিং দেয়া হয়েছে তিনটে জানোয়ারকেই। দুই লেনের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় গাড়ি, ট্রাক কিংবা ঘোড়ায় টানা গাড়িগুলোর কাছে ঘেঁষল না। দূর দিয়ে এগিয়ে চলল। রাস্তার গাড়িঘোড়াগুলো সব সোয়াম্পল্যান্ড রোডেওতে চলেছে।
চলতে চলতে রাস্তায় মাইলফলক চোখে পড়লেই ল্যাসো ছুঁড়ছে মুসা।
‘কেমন বুঝছ?’ ছয় নম্বর মাইলফলকটা থেকে ফাঁস খুলে নিয়ে হাসিমুখে দুই বন্ধুর দিকে তাকাল মুসা।
‘মুসা, তোমার এই ল্যাসো ছোঁড়া বন্ধ করো,’ অধৈর্য হয়ে বলল রবিন। ‘যে হারে সময় নষ্ট করছো, প্রতিযোগিতার পুরোটাই মিস করব আমরা।’
বিনা প্রতিবাদে দড়িটা কুণ্ডলী পাকিয়ে রেখে দিল মুসা। বাকি পথ আর একবারের জন্যও খুলল না।
.
রোডেওতে রাস্টি আর হ্যারিসের সঙ্গে দেখা হলো ওদের। দ্রুত রোডেও গ্রাউন্ডটা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য নিয়ে চলল রাস্টি। জানাল, জায়গাটার মালিক ক্লিন্ট গিবসন নামে একজন কোটিপতি। একটা ক্যা র্যাঞ্চের কিছুটা অংশকে আলাদা করে প্রতি বছর রোডেওর আয়োজন করেন। এ সময় ট্রাক ভর্তি করে রোডেওর জন্য জিনিসপত্র আর গরুঘোড়া নিয়ে আসা হয়। মেইন রোডেও রিঙের চারপাশ ঘিরে দর্শকদের জন্য জায়গা করে দেয়া হয়েছে, এর নাম গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড। রিঙের একপাশে বিশাল সামিয়ানা টাঙানো।
‘ওখানে কী?’ রবিন জানতে চাইল।
‘ফার্মের জিনিসপত্রের প্রদর্শনী, রোডেও রেজিস্ট্রেশন টেবিল, খাবারের দোকান এসব। আয়োজনটা সব মিলিয়ে সেই পুরনো দিনের কার্নিভালের মত।’
‘দূরের ওই বিল্ডিংগুলো কীসের?’ হ্যারিসকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘একটা গোলাঘর।
বাকিগুলোতে বাঙ্কহাউস, রোডেও রাইডারদের জন্যে,’ হ্যারিস বলল। ‘পার্কিং লটের শেষ মাথায় ট্রেইলারগুলোতে থাকেন বিচারক ও রোডেও ভাঁড়েরা।’
মূল সামিয়ানাটায় ঢুকল ওরা। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিতে হয়। রাস্টি আর হ্যারিস লাইনে দাঁড়াল গিজগিজ করছে কাউবয় আর দর্শক। সেদিকে তাকিয়ে রবিন জিজ্ঞে করল, ‘প্রতিযোগীরা কোনখান থেকে আসে?’
‘বেশির ভাগই স্থানীয়, ফ্রগ’স পেনিনসুলার বাসিন্দা,’ রাস্টি জানাল। ‘বাকিরা পেশাদার, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা। রোডেও হবে শুনলেই ছোটে, যেখানেই হোক।’
‘মাত্র দশ ডলার কম, মিস্টার গিবসন,’ সারির সামনে থেকে চেঁচিয়ে বলল লম্বা, হালকা-পাতলা একটা টিনেজ ছেলে।
‘সরি, ইয়াং ম্যান,’ জবাব দিলেন সাদা চুল আর গালে পোড় দাগওয়ালা একজন ভদ্রলোক। তিনিই মিস্টার গিবসন। ‘কাল রাে বুল-রাইডিং শুরু হওয়ার আগে যদি দশ ডলার পূরণ করে দিে পারো, তোমাকে আমি খেলায় নেব, যাও, কথা দিলাম। কিন্তু আ রাতে শুধু ব্রঙ্কো বাস্টিঙেই খেলতে হবে তোমাকে।’
‘ঠিক আছে!’ হতাশ ভঙ্গিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছেলেটা। বার বার একটা মুদ্রা টোকা দিয়ে শূন্যে ছুঁড়ে লুফে নিচ্ছে।
রেজিস্ট্রি খাতায় নাম লিখে নিয়ে একটা অফিশিয়াল নম্বর দিলেন ওকে মিস্টার গিবসন।
ছেলেটা ফিরে তাকাতেই রবিনের সঙ্গে চোখাচোখি হলো। ‘কী দেখছ?’ ভুরু নাচাল ছেলেটা। মারমুখো ভঙ্গি। হতাশায়ই বোধহয়।
‘কিছু না,’ ঝামেলা এড়ানোর জন্য বলল রবিন।
‘দাঁড়াও না, আজ রাতে সবাইকে দেখিয়ে দেব আমি,’ অহঙ্কার ফুটে বেরোচ্ছে ছেলেটার চেহারায়। ‘ব্রঙ্কো-রাইডিং প্রতিযোগিতায় জিতবই।’
আবার মুদ্রাটা ওপরে ছুঁড়ে দিল ও। সোনার মোহর, চিনতে পারল রবিন। চোখ বড় বড় হয়ে গেল ওর। পকেটে টাকা নেই, দশ ডলারের জন্য খেলায় অংশ নিতে পারছে না, অথচ সোনার মোহর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
‘আমার নাম বিল ওয়াটমোর। বোর্ডের লিস্টে একেবারে প্রথম দিকে দেখতে পাবে আমার নাম।’ অহঙ্কারী ভঙ্গিতে চোখা চোয়ালটা উঁচু করে ধরল ছেলেটা। ‘কারণ, আমি জিতবই।’
কিশোর লক্ষ করল, কাছেই একটা সুভনির স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে গুজ বার্নার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। এগিয়ে এল, ‘এই ছেলে, বেশি বড় বড় কথা হয়ে যাচ্ছে না?’
‘আমি ছেলে নই, মিস্টার,’ ভুরু কুঁচকে তাকাল বিল। ‘ছেলে বলার বয়েস পার হয়ে এসেছি। কে আপনি?’
‘আমার নাম গুজ বার্নার। আমি একজন ব্রঙ্কো বাস্টার। গত বছর নর্থ ডাকোটার ফার্গোতে দেখেছি তোমাকে, তাই না?’
‘অ্যা!’ হঠাৎ করেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলল যেন বিল।
‘আমি প্রথম হয়েছিলাম,’ হাসিমুখে বলল বার্নার। ‘যে রকম বড়াই করছ, ওর অর্ধেক ক্ষমতাও যদি তোমার থাকে, স্পন্সরের অভাব হবে না তোমার। প্রতিযোগিতার জন্যে তোমার রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা দিয়ে দেবে। তবে তোমার পুরস্কারের টাকা থেকে একটা ভাগ অবশ্যই কেটে নেবে।’
‘স্পন্সর পাওয়ার উপযোগী আমি, তাতে কোন সন্দেহ নেই, ‘ আত্মবিশ্বাস ফিরে এল আবার বিলের।
‘চলো দেখি, তোমার জন্যে একজন স্পন্সর খুঁজে বের করা যায় কিনা,’ বার্নার বলল।
‘আপনি রেজিস্ট্রি করাবেন না?’ জিজ্ঞেস করল হ্যারিস।
‘পরেও করতে পারব।’ বিলের কাঁধে হাত রাখল বার্নার। ওকে নিয়ে চলে গেল।
‘বেশি অহঙ্কার,’ ছেলেটার কথা বলল রাস্টি। রেজিস্ট্রেশন টেবিলের সামনে পৌঁছে গেছে।
‘তাড়াতাড়ি যান,’ রাস্টির হাতে একটা নম্বরের টিকেট ধরিয়ে দিয়ে গিবসন বললেন। ‘আপনার খেলা পনেরো মিনিটের মধ্যেই শুরু হবে।’
‘আমি যাচ্ছি, পরে দেখা হবে,’ কিশোরদের দিকে ফিরে বলল