‘আরে,’ এদিক ওদিক তাকাতে লাগল কিশোর, ‘রবিন গেল কোথায়?’
‘রবিন!’ চিৎকার করে ডাকল মুসা। ‘কোথায় তুমি?’
‘এই যে এখানে,’ সাড়া দিল রবিন। ‘তোমরা কোথায়?’
শটগানের গুলির শব্দ শোনার মিনিটখানেক পর ঘাসের জঙ্গলে ঢুকেছিল ও। কোমরসমান উঁচু ঘাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এখন। সঙ্গীদের কাউকে চোখে পড়ছে না। পানিতে একটা কাঠের টুকরো ভাসতে দেখে তুলে নিল। একটা দাঁড়ের অর্ধেকটা
হুস করে পানির ওপর মাথা তুলল এক বিশাল অ্যালিগেইটর। মস্ত হাঁ করে রবিনকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিল ওটা।
তিন
ভাঙা দাঁড় দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করল রবিন। দাঁড়টা কামড়ে ধরল অ্যালিগেইটর। মাথা ঝাঁকি দিয়ে হ্যাঁচকা টানে কেড়ে নিল। চিবিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
লম্বা ঘাসের ভিতর দিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে ছুটল রবিন। ঠিক পিছনেই রয়েছে অ্যালিগেইটরটা। কোনমতে এসে ডাঙায় উঠল ও। ফিরে তাকাল। ডাঙায় উঠল না আর অ্যালিগেইটরটা। জলাভূমির কালো ঘোলাপানির ভিতর তলিয়ে যাওয়ার আগে অদ্ভুত একটা সাদা চোখ দিয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে রইল যেন দীর্ঘ একটা মুহূর্ত।
রবিনের চিৎকার শুনে পানির কিনার ধরে দৌড় দিল কিশোর। কয়েক কদম পিছনে রয়েছে রাস্টি, মুসা আর হ্যারিস।
‘রবিন, কী হয়েছে?’ কাছে এসে জিজ্ঞেস করল মুসা।
‘আরেকটু হলেই অ্যালিগেইটরের নাস্তা হয়ে যাচ্ছিলাম,’ হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিল রবিন।
এতক্ষণে কেয়ারটেকারের সঙ্গে ছেলেদের পরিচয় করিয়ে দেবার সুযোগ হলো রাস্টির। ‘ও হ্যারিস স্মিথ, ক্যাম্পের কেয়ারটেকার, এবং আমার স্টিয়ার-রোপিং পার্টনার।’
স্টিয়ার-রোপিং হলো গরুর গলায় ফাঁস পরানোর খেলা, জানে রবিন। হাত বাড়িয়ে দিল। ‘আমি রবিন।’
‘আমাকে শুধু হ্যারিস ডাকলেই চলবে। বিশ্বাস করো আর না করো, একটা কথা বলি, ওই দানব অ্যালিগেইটরটাকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে আজব কিটি। অলৌকিক ক্ষমতা আছে ওর। জলাভূমির প্রাণীকে জাদু করে ওদের দিয়ে যা খুশি করাতে পারে।’
‘আবার শুরু করলে!’ হ্যাট দিয়ে হ্যারিসের কাঁধে আলতো বাড়ি মারল রাস্টি।
‘আজব কিটিটা কে?’ রবিন জানতে চাইল।
‘ডিন ওয়াটারম্যানের নাতি,’ জবাব দিল কিশোর। টুইন সাইপ্রেস-কী’তে গাছের ওপর ওকে কীভাবে বসে থাকতে দেখেছে, বলল।
‘কী হয়েছে?’ ভারি পুরুষকণ্ঠে হাঁক শোনা গেল। ফিশিং ক্যাম্পের দিক থেকে আসতে দেখা গেল একজন লোককে। মাথায় সোনালি চুল, নীল চোখ, পুরু গোঁফ। পিছন পিছন আসছে আরও চারজন, তাদের তিনজন পুরুষ, একজন মহিলা।
‘একটা অ্যালিগেইটর আমাদের আক্রমণ করেছিল, মিস্টার বার্নার!’ জবাব দিল হ্যারিস। ‘বিশাল অ্যালিগেইটর। দুটো ক্যানু জোড়া দিলেও অত লম্বা হবে না। আরেকটু হলেই আমাকে খেয়ে ফেলছিল!’ রবিনকে দেখাল ও। ‘ওকেও নাকি আক্রমণ করেছিল।’
পানির কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন বার্নার। নিচু হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কী যেন দেখতে লাগলেন। দুই হাতে লম্বা ঘাস সরিয়ে উঁকি দিলেন ভিতরে। ‘দেখে যাও।’
এগিয়ে গেল ছেলেরা। ঘাসের মধ্যে মরা পাতা আর জলজ ঘাস জড় করে রাখা হয়েছে।
‘অ্যালিগেইটরের বাসা!’ চিনতে পেরে আচমকা চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ও দেখেছে এ রকম বাসা।
‘আশপাশে একটা মা-অ্যালিগেইটর আছে,’ মিস্টার বার্নার বললেন। ‘ওই পাতার নীচে ডিম আছে। ডিমের কাছে কাউকে আসতে দেখলেই তেড়ে আসছে।’
‘আশ্চর্য!’ রাস্টি বলল। ‘সাগরের এত কাছে তো কখনও ডিম পাড়ে না অ্যালিগেইটর। পানি এখানে অতিরিক্ত নোনা। আমি তো জানতাম, জলাভূমির দুর্গম জায়গায় মানুষ ও বোটের কাছ থেকে দূরে কোথাও ডিম পাড়ে ওরা।’
‘ঠিকই জানেন, বার্নার বললেন। ‘কিন্তু এই বিশেষ অ্যালিগেইটরটা যে কোন কারণেই হোক দ্বীপের এই কিনারটাকে ডিম পাড়ার জন্যে বেছে নিয়েছে।’
‘তারমানে অ্যালিগেইটরটা মানুষখেকো, হ্যারিস বলল। ‘মানুষকে ভয় পায় না বোঝাই যাচ্ছে। খুঁজে বের করে ওটাকে মেরে ফেলা দরকার।’
‘সমস্যাটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে,’ রাস্টি জবাব দিল। ‘দুপুর হয়ে গেছে। চলো, কেবিনে যাই। খেয়ে নিয়ে রোডেওতে যেতে হবে।’
শুকনো কাপড় পরল ছেলেরা। তাজা ট্রাউট ভাজা আর জইয়ের রুটি দিয়ে লাঞ্চ সারল। তারপর রাস্টির চ্যাপ্টা তলাওয়ালা পন্টুন বোটে উঠল। ফিশিং ক্যাম্প থেকে অতিথিদের মেইনল্যান্ডে আনা-নেয়া করে এই ফেরিবোট।
ক্যাম্পে আরও কয়েকজন অতিথির সঙ্গে তিন গোয়েন্দার দেখা হলো। তাদের মধ্যে আছে টনি ও রনি ওয়াকার নামে দুই ভাই, আর হার্ভে কাসনার নামে এক লোক। রোডেওতে প্রতিযোগিতা করতে এসেছে এদের বেশির ভাগই। কাফ-রোপিং, অর্থাৎ বাছুরের গলায় ফাঁস পরানোর খেলায় অংশ নেবে টনি ও রনি। ব্রঙ্কো বাস্টিং মানে বুনো ঘোড়াকে পোষ মানানোর খেলায় অংশ নেবে হার্ভে কাসনার। আর গুজ বার্নার হবে ওয়াইল্ড-বুল রাইডার-খেপা-ষাঁড়ের পিঠে চড়ে টিকে থাকার খেলা।
সোয়াম্পল্যান্ড গুডস-এ পৌঁছল ফেরিবোট। রোডেও গ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য অতিথিদের নিয়ে ওয়াটারম্যানের পিকআপ ট্রাকের পিছনে চড়ল রাস্টি। ছেলেদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল, ‘আমরা গেলাম। তোমরা এসো।’
ধুলো উড়িয়ে ছুটল ট্রাক।
দুটো ঘোড়া আর খচ্চরের মধ্যে কে কোনটাতে চড়ে যাবে এ নিয়ে কোন ওজর-আপত্তি হলো না। নিজের ইচ্ছেতেই বুড়ো জনের পিঠে চড়ল মুসা।