.
রাতে ঝড়ের মধ্যেই অ্যালিগেইটরটাকে বাইরে বের করার ব্যবস্থা করল কিটি আর ব্রেক। ওটাকে কেবিনে আনা হয়েছিল কীভাবে, রহস্যটা ভেদ হলো। ডিমগুলো নিয়ে এসে রেখে দিয়েছিল মরিস। ডিমের আকর্ষণেই উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠে কেবিনে ঢুকে পড়েছিল অ্যালিগেইটরটা। বোঝা গেল, ওই ডিম দেখিয়েই বিগ সাইপ্রেস থেকে জলাভূমি দিয়ে ওটাকে সোয়াম্প ল্যান্ডে টেনে এনেছিল মরিস। এখন ওই ডিমের সাহায্যেই আবার ওটাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিগ সাইপ্রেসে, অ্যালিগেইটরের খামারে, ওর পুরানো বাড়িতে।
পরদিন সকালে ঝড় থামল। দুপুর একটা নাগাদ মেঘ কেটে গিয়ে রোদ হেসে উঠল। আকাশ ঘন নীল। দেখে মনেই হয় না এতবড় একটা ঝড় বয়ে গেছে।
রোডেও গ্রাউন্ডের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখছে কিশোর ও রবিন। একের পর এক কাউবয় এসে রিঙে ঢুকছে, প্রতিযোগিতা করছে। মারাত্মক বিপজ্জনক এক খেলা। সেদিকে তাকিয়ে রবিন বলল, ‘নিজে বিপদে পড়ার চেয়ে অন্যের বিপদ দেখে মজা পাওয়া সহজ!’
হাসল কিশোর। ‘ডাকাতের সাথে টক্কর লাগার কথা বলছ তো?’
‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকাল রবিন। ‘এই জলার অঞ্চল আর আমার ভাল লাগছে না। রকি বিচে ফিরে যেতে পারলে বাঁচি। আগামী একশো বছর শাওয়ার ছাড়া অন্য কোন ধরনের পানিতে ভিজতে রাজি নই আমি।’
বুল-রাইডিঙের খেলায় ব্ল্যাক ডেভিলের পিঠে চড়ে কিটিকে ঢুকতে দেখা গেল। সফল খেলা দেখিয়ে চলে গেল।
তারপর যাকে ঢুকতে দেখল, চোখ কপালে উঠে গেল কিশোর- রবিনের। রাস্টি কালাহান। সাথে ওর সহকারী হ্যারিস। রাস্টির এক হাত স্লিঙে ঝোলানো। ভাঙা হাত নিয়েই খেলতে চলে এসেছে। ল্যাসো হাতে স্টিয়ার রোপিং খেলা শুরু করল।
হ্যারিসের এক হাতে ল্যাসো, আরেক হাতে ঘোড়ার লাগাম ধরা। রাস্টির ভাল হাতটায় ল্যাসো, ভাঙা হাত দিয়ে লাগাম ধরতে পারছে না, কোন কিছু না ধরেই বসে আছে ঘোড়ার পিঠে। বিস্ময়কর দক্ষতায় এক হাতেই ল্যাসো ছুঁড়ে গরুর শিঙে আটকে ফেলল। হ্যারিস গরুর পিছনের পায়ে ল্যাসো আটকে দিল। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল গরু।
রুদ্ধশ্বাসে এই খেলা দেখছিল দর্শকরা। তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ল। হাততালি দিতে দিতে কিশোর বলল, ‘আরিব্বাপরে, কী খেলা! গিনেস রেকর্ড বুকে নাম উঠে যাওয়া উচিত। ভাঙা হাত নিয়ে স্টিয়ার রোপিং!’
এক হাতেই ল্যাসো খুলে নিল রাস্টি। গরুটাকে মাটি থেকে উঠতে সাহায্য করল রোডেও ভাঁড়, এবার আর নকল নয়, আসল ডিক টোম্যান। দর্শকদের দিকে হ্যাট নেড়ে ধন্যবাদ জানাল রাস্টি।
মাইকে শোনা গেল মিস্টার গিবসনের ঘোষণা, ‘এবার খেলা দেখাতে আসছে বিল ওয়াটমোর আর মুসা আমান।’
রবিনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে কিশোর বলল, ‘আমাদের মুসা রোডেও খেলছে, ভাবতে পারো?’
‘নাহ্, সত্যিই পারি না,’ রবিন বলল। ‘কিন্তু আমার অবাক লাগছে, যে বাবার ভয়ে এত কাণ্ড করল বিল, তিনি তাকে খেলতে দিতে রাজি হলেন কী করে?’
‘এতবড় একটা ডাকাতির কেসের সমাধান করতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে বলে এতই খুশি হয়েছেন মিস্টার ওয়াটমোর, ছেলের এই আবদার তিনি পূরণ করেছেন।’
‘তুমি জানলে কীভাবে?’
‘বিল আমাকে বলেছে।’
শূটের দরজা খুলে দিল টোম্যান। ঘোড়ায় চড়ে রিঙে ঢুকল মুসা। প্রথমেই ল্যাসো না ছুঁড়ে সোজা গিয়ে টারজানের মত গরুর দুই শিং চেপে ধরল। ষাঁড়টাও নাছোড়বান্দা। এত সহজে পরাজিত হতে রাজি নয়। হ্যাঁচকা টানে ঘোড়ার পিঠ থেকে তুলে নিয়ে এল মুসাকে। মুসাও ছাড়ল না। দুই শিং ধরে ঝুলে রইল।
মুসার ওজনের কারণেই বোধহয় শেষ পর্যন্ত মাথা নোয়াতে বাধ্য হলো ষাঁড়। তা ছাড়া এত নাছোড়বান্দা বেয়াড়া খেলোয়াড়ও বোধহয় এই প্রথম পেয়েছে। ষাঁড়ের দ্বিধাকে কাজে লাগিয়ে ওটাকে মাটিতে শুইয়ে ফেলল মুসা।
আবার করতালিতে ফেটে পড়ল উত্তেজিত দর্শক। এ সময় রিঙে ঢুকল বিল। কয়েকটা গরু ছেড়ে দেয়া হলো রিঙে। ঘোড়ার পিঠে চড়ে রিঙের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছুটে বেড়াতে লাগল মুসা। বিল ওর সহকারী। একের পর এক গরুকে ল্যাসোয় আটকে ধরাশায়ী করতে থাকল দুজনে।
করতালির পর করতালি!
উত্তেজনায় কখন সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে কিশোর ও রবিন, বলতে পারবে না। দর্শকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছে ওরাও। চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। হাততালি দিচ্ছে। মনে রাখার মত একটা দিন ওদেরকে উপহার দিচ্ছে ওদের বন্ধু মুসা আমান।