‘না। আজ বিকেলে এমন কিছু খবর পেয়েছি, না এসে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।’
‘কী খবর?’
‘বিগ সাইপ্রেসে আমার এক বন্ধু মরিসের ব্যাপারে কতগুলো তথ্য দিয়েছে। আমার ফার্ম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অবৈধভাবে অ্যালিগেইটর শিকারের অপরাধে নয় মাস জেল খেটে সবে বেরিয়েছে ও। আমার এক কর্মচারীর সঙ্গে সহযোগিতা করে আমার কানা অ্যালিগেইটরটাকে চুরি করেছে। জেলে থাকতে এমন একটা লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে ওর, যে তালা খোলার ওস্তাদ।’
‘গুজ বার্নার।’
‘হ্যাঁ। তুমি জানলে কী করে?’
‘সে-এক লম্বা কাহিনী,’ কিশোর বলল। ‘এখন ওসব বলার সময় নেই। দুজন খুনে ডাকাতের সঙ্গে একটা জাহাজে আটকা পড়েছে আমার বন্ধু রবিন আর মুসা। ওদের কথা আপনাকে বলেছিলাম।’
‘এই আবহাওয়ায় প্লেন নিয়ে ওড়ার চিন্তা কোরো না,’ সাবধান করে দিল ব্রেক। ‘আমার মাথা খারাপ, সেজন্যে বেরিয়েছিলাম। তা- ও তো তুফান একটু কম ছিল। এখন আরও বাড়ছে।’
‘বাড়ুক। আমি কেয়ার করি না।’
কিশোরের দিকে দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে জনসন জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাস্টি কোথায়? এখন ওই প্লেন নিয়ে যদি কেউ উড়তে পারে, তো ও পারবে।’
‘রাস্টির হাত…’ জবাব দিতে যাচ্ছিল বিল।
তাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বলে উঠল, ‘মেইন কেবিনে।’
বিলের কথা বুঝতে পারেননি জনসন। দৌড় দিল কেবিনের দিকে।
‘বলতে দিলে না কেন?’ বিল বলল, ‘তুমি জানো, ভাঙা হাত নিয়ে প্লেন ওড়াতে পারবে না রাস্টি।’
‘জানি। এ-ও জানি, রাস্টি আর জনসন কোনমতেই আমাকেও এখন প্লেন ওড়াতে দেবেন না।’
ককপিটে চড়ল কিশোর। ইগনিশনেই লাগানো রয়েছে চাবিটা। ‘ওটা তুমি ওড়াবে?’ বিল অবাক।
‘আর কোন উপায় নেই। মরিসের আগেই আমি জাহাজটায় পৌঁছতে না পারলে মুসা ও রবিনের বাঁচার আশা শেষ।’
‘আমিও তোমার সাথে যাব।’
‘প্লেন ওড়াতে জানো?’
‘না। তবে আমি সঙ্গে থাকলে তোমার সুবিধে হবে।’ কিশোর বাধা দেয়ার আগেই কো-পাইলটের সিটে উঠে বসল বিল
বাতাসের অনুকূলে প্লেনের নাক ঘোরাল কিশোর, বাতাসের ধাক্কাটাকে কাজে লাগানো গেলে ওপরে উঠতে সুবিধে হবে। ফুল থ্রটল দিল। গতিবেগ যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিল। ঝোড়ো বাতাসে জলাভূমির বদ্ধ পানিতেও উত্তাল ঢেউ। তার ওপর দিয়ে ছুটতে গিয়ে মোচার খোলার মত দুলতে লাগল প্লেন।
‘শক্ত হয়ে বসে থাকো,’ বিলকে বলল কিশোর। আস্তে করে কন্ট্রোল ধরে টান দিল। পানি থেকে উঠে পড়ল প্লেন। বাতাসের স্রোতে ভর করে দ্রুত ওপরে উঠতে থাকল।
তুমি চোখ রাখো,’ ইঞ্জিন আর বাতাসের গর্জনকে ছাপিয়ে চিৎকার করে বলল কিশোর। ‘মরিসের বোটটা দেখা যায় নাকি দেখো।’
‘দেখেছি!’ একটু পরেই চেঁচিয়ে উঠল বিল। ডানে হাত তুলল।
মোহনার কাছে পৌছে গেছে বোট। উত্তাল সাগরের ঢেউ এসে জলার পানিতেও বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি করছে। মরিসের হালকা এয়ারবোটকে এগোতে দিচ্ছে না। সামনে আধমাইল দূরে আলো দেখা যাচ্ছে। একটা জাহাজ। রানিং লাইট জ্বেলে দিয়েছে। মরিসের লক্ষ্য ওই জাহাজটাই, বুঝতে পারল কিশোর। চেঁচিয়ে বলল, ‘শিওর, ওটাই ডেনভারের জাহাজ!’
জাহাজটার কাছে পৌঁছতে সময় লাগল না। ভালমত দেখার জন্য প্লেন নিচুতে নামিয়ে আনল কিশোর। জাহাজের ডেকে কয়েকজন মানুষ। দুজন লোক বন্দুক দেখিয়ে চারজন মানুষকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে জাহাজের পিছন দিকে। মুহূর্ত পরেই ওই চারজন মানুষকে উত্তাল সাগরে ফেলে দিল বন্দুকধারীরা।
‘মুসাদেরকেই ফেলেছে!’ কিশোর বলল। ‘ওদের তুলতে হবে!’
‘ঠিক আছে। আমি রেডি,’ জবাব দিল বিল।
প্লেনের পিছন দিক থেকে এখন বাতাস বইছে। চক্কর দিয়ে ধীরে ধীরে নীচে নামতে শুরু করল কিশোর। প্লেনের তলায় লাগানো পন্টুন দুটো আলতো করে রাখল দুটো ঢেউয়ের মাঝখানের খাঁজে। কিন্তু একটা ঢেউয়ের চূড়া ভেঙে পড়াতে সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠতে বাধ্য হলো আবার। সময়মত উঠতে না পারলে ঢেউটা প্লেনের ওপরই ভাঙত। ধাক্কায় কাত হয়ে গেলে আর সোজা হবার সাধ্য ছিল না প্লেনটার।
শক্ত হাতে কন্ট্রোল চেপে ধরে রেখেছে কিশোর। আবার প্লেন নামাল। পন্টুন ছোঁয়াল দুটো ঢেউয়ের মাঝখানে। এবার সফল হলো।
ক্রমাগত এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ঢেউ। প্লেনের একপাশে আঘাত হেনে ওটাকে কাত করে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে যেন। কিন্তু পন্টুনে ভর করে ভেসে থাকায় ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লেনটাও দুলছে; ওপরে উঠছে, নীচে নামছে।
ককপিটের হ্যাচ খুলে বাইরে বেরোল ও। একটা পন্টুনের ওপর নামল। পঞ্চাশ গজ দূরে পানিতে হাবুডুবু খেতে দেখল রবিন, মুসা, কিটি ও ডেপুটি ক্যানারকে। পানির ওপর মাথা ভাসিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে ওরা, সাঁতরে এগোনো তো দূরের কথা।
‘আমার মনে হয় হাত বেঁধে ফেলেছে,’ বিলকে বলল কিশোর। ‘আমি যাচ্ছি।’
‘আমিও যাব!’ অন্য পন্টুনটায় নেমে পড়ল বিল।
পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুজনে। বন্দিদের কাছে পৌঁছতে যেখানে পাঁচ মিনিট লাগার কথা, প্রতিকূল ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে এগোতে সেখানে লাগল তিন গুণ বেশি সময়।
‘আমি ঠিক আছি,’ কিশোরকে বলল মুসা। ‘আগে রবিনের দড়ি খোলো।’
ওদের কাছ থেকে বিশ ফুট দূরে রয়েছে রবিন। পানির নীচে মাথা ডুবে যাচ্ছে। তুলতে পারছে না। প্রচুর পানি পেটে যাচ্ছে।
কাছে এসে রবিনকে ধরল কিশোর।
রবিন বলল, ‘হাতের দড়িটা শুধু কেটে দাও, কিশোর, তাতেই চলবে। ওদের বাঁচাও।’