হ্যারিসের কণ্ঠ চিনতে পারল মুসা। ‘হ্যারিস, ভীষণ বিপদের মধ্যে আছি আমরা।’
‘সে তো বোঝাই গেছে। কড়া ঘুম থেকে আমাকে ডেকে তুলেছ। কোথায় তুমি? ওভার।’
‘ফক্স ডেনভারের ফিশিং বোটে।’
‘ফিশিং বোট! ঝড় আসছে জানো না?’
‘আস্তে বলুন! জাহাজটায় ডাকাতদের সঙ্গে রয়েছি আমরা। মায়ামিতে ব্যাংক ডাকাতি করেছে যারা। ওভার।’
‘বলো কী!’ চেঁচিয়ে উঠল হ্যারিস।
‘আস্তে! আস্তে! কিশোরকে বলুন, জাহাজ নিয়ে মরিস মরিসনকে তুলে নিতে যাচ্ছে ডাকাতগুলো।’
‘কিশোর তো এখানে নেই…’ কথা শেষ হওয়ার আগেই আচমকা থেমে গেল হ্যারিসের কণ্ঠ। রেডিওতে গোলমাল হয়েছে না অন্য কিছু, বোঝা গেল না।
‘তাই তো বলি, কথা বলে কে!’ পিছনে পরিচিত কণ্ঠ শুনে পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল মুসা। বার্নারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। স্লিপিং কোয়ার্টারের দরজা দিয়ে ঢুকেছে। ‘ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। তোমার কথা কানে গেল…আরও আস্তে বলা উচিত ছিল তোমার।’
‘দেরি করে এসেছেন,’ মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করল রবিন। ‘পুলিশকে এস ও এস পাঠিয়ে দিয়েছি।’
চোখের পাতা সরু হয়ে এল বার্নারের। ‘গুড। ভালই করেছ। তোমাদের লাশ খুঁজে পেতে আর বেশি কষ্ট করতে হবে না ওদের। যদি ততক্ষণে হাঙরে খেয়ে না ফেলে।’
এক পা এগিয়ে এল বার্নার। আচমকা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ডেকে বেরোনোর দরজার দিকে দৌড় দিতে গেল মুসা। পারল না। ওকে ধরে ফেলল বার্নার। হাত মুচড়ে পিঠের ওপর নিয়ে এসে অসহায় করে ফেলল। গর্জে উঠল, ‘বহুত জ্বালান জ্বালিয়েছ। এবার বোঝাব মজা!’
কিন্তু মুসাকে ‘মজা বোঝানোর’ আগেই কেবিনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল কিটি। ঘুসি মারল বার্নারের চোয়ালে। পিছনে ছিটকে পড়ল বার্নার। নাক চেপে ধরেছে। আঙুলের ফাঁকে রক্ত। ঘুসি খেয়ে নাক ভেঙে গেছে। রক্ত বেরোচ্ছে।
ক্ষুধার্ত বাঘের দৃষ্টিতে কিটির দিকে তাকাল বার্নার। কিন্তু আক্রমণ করতে দ্বিধা করছে। ও এখন একা। শত্রুরা দুজন।
‘খবরদার! নড়বে না!’ মুসার পিছন থেকে ধমক শোনা গেল।
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল মুসা ও কিটি। শটগান হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ডেনভারকে। বন্দুকের নল ওদের দিকে তাক করা। তাড়াতাড়ি ডেস্কের ড্রয়ার খুলে একটা রিভলভার বের করে নিল বার্নার। তুলে ধরল মুসার দিকে।
কেবিনের দরজার দিকে ফিরে হাঁক দিল ডেনভার। ‘এই, এসো তোমরা, ভিতরে এসো! কোন চালাকি করবে না, যদি তোমাদের বন্ধুদের সুস্থ দেখতে চাও!’
ভিতরে ঢুকল রবিন ও ক্যানার।
রক্তাক্ত নাকের ভিতর থেকে ঘোঁৎ-ঘোঁৎ শব্দ বেরিয়ে এল বার্নারের। ‘বাহ্, চমৎকার! হাঙরের ভোজ আজ ভালই জমবে।’
চোদ্দ
‘হ্যারিস! রাস্টি!’ চিৎকার করছে কিশোর। অন্ধকারে ফিশিং ক্যাম্পের কেবিনের দিকে দৌড়াচ্ছে। ঘরে ঢুকে সুইচ টিপে দিল। আলো জ্বলল না।
বাইরে বেরিয়ে এল ও। বোট থেকে একটা টর্চ থাবা দিয়ে তুলে নিয়ে দৌড় দিল বিল। কিশোরের কাছে চলে এল।
‘আলো জ্বলছে না। মেইন কেবিনে কেউ নেই। আমাদের কেবিনে গিয়ে দেখি।’ দৌড় দিল কিশোর 1
চাবুকের মত আঘাত হানছে বাতাস। চোখেমুখে সুচ ফুটাচ্ছে বৃষ্টি। সব কিছু উপেক্ষা করে খুঁটিতে বসানো কেবিনের সারির পাশ দিয়ে ছুটছে দুজনে।
‘এটাই।’ থামল না কিশোর। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠতে শুরু করল।
‘রবিন!’ কেবিনে ঢুকে চিৎকার করে ডাকল কিশোর। বিলও ঢুকল। টর্চের আলো ফেলল অন্ধকার কেবিনে। অদ্ভুত দৃশ্য ফুটে উঠল চোখের সামনে। মেঝেতে পানি জমে আছে। কাদার চিহ্ন সরে গেছে পানির কাছ থেকে। বিছানার পাশ থেকে নড়ে উঠল বিশাল একটা জীব। মাথা দিয়ে দরজা আটকাল, লেজ দিয়ে জানালার দিকটা।
‘কি-কি-ক্কিশোর!’ ভয়ে তোতলানো শুরু করল বিল। ওর ট আলো প্রতিফলিত হচ্ছে মস্ত একটা সরীসৃপের দুধসাদা চোখে।
‘অ্যালিগেইটরটা এখানে এল কীভাবে!’ কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে কিশোর। বিল, আস্তে আস্তে সরতে থাকো। পিছন দিকে চলে যাও। সাদা চোখটা কানা। ওটা দিয়ে দেখতে পায় না।’
‘আমার পা অবশ হয়ে গেছে!’ কম্পিত কণ্ঠে বিল বলল।
‘তাহলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। ধীরে ধীরে সরতে আরম্ভ করল কিশোর। অ্যালিগেইটরের লেজের দিকে চলে আসছে। অ্যালিগেইটর এমনিতেই চোখে ভাল দেখে না, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে বিশেষজ্ঞদের মুখে শুনেছে; তার ওপর এটার একটা চোখ নষ্ট। সেই সুযোগটাই নিতে যাচ্ছে ও।
‘বিল, অ্যালিগেইটরের পিঠে চড়ব আমি।’
‘কী করবে?’
‘পিঠে চড়ব। আটকানোর চেষ্টা করব। আমি পিঠে চড়লে আর এক মুহূর্তও দেরি করবে না, সোজা দৌড় দেবে দরজার দিকে।’
বিলের দিকে কয়েক ফুট এগোল অ্যালিগেইটর। যা করার দ্রুত করতে হবে, বুঝতে পারছে কিশোর, একেবারে সময় নেই। আরেকটু এগোল ও। তারপর লাফ দিয়ে গিয়ে বসল অ্যালিগেইটরটার পিঠে দুই হাতে ওটার নাকের ওপর চাপ দিয়ে ওপরের চোয়াল নামিয়ে মুখটা মেঝেতে ঠেসে ধরার চেষ্টা করল।
এভাবেই চোয়াল চেপে ধরে অ্যালিগেইটরকে আটকানো হয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেখেছে। চাপা গর্জন করে উঠল অ্যালিগেইটর। মাথা ঝাড়া দিয়ে হাত সরানোর চেষ্টা করল। মুখটা সরে গেল দরজার কাছ থেকে।
‘কিশোর!’ রাস্টির চিৎকার শোনা গেল। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল কেবিনের দরজা। ঘরে ঢুকল ও।
ভয়ঙ্করভাবে লেজ দোলাচ্ছে তখন অ্যালিগেইটর। মাথাটা এপাশ ওপাশ ঝাঁকি দিচ্ছে। বহু কষ্টে ওটার পিঠ আঁকড়ে রয়েছে কিশোর।