বস্তার মুখ খোলা। দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধল মরিস। পানিতে পড়ার সময় নিশ্চয় বস্তার মুখ খুলে গিয়েছিল। দু’চারটা মোহর হয়তো ছিটকে পড়েছিল এদিক ওদিক। ঢেউয়ের ধাক্কায় একটা চলে গিয়েছিল তীরের কাছাকাছি। সেটাই খুঁজে পেয়েছে বিল।
এয়ারবোটের ইঞ্জিন স্টার্ট দিল মরিস। গেইটর সোয়াম্প ধরে ফ্লোরিডা বে’র দিকে রওনা হয়ে গেল। পুল কর্ড টেনে বিলও ওর বোটের ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। মরিসের পিছু নিল। কিন্তু গতি এতই কম, বুঝল, এয়ারবোটের সঙ্গে কোনভাবেই পেরে উঠবে না। চিৎকার করে কিশোর বলল, ‘বিল, রাস্টির ফিশিং ক্যাম্পে চলো!’
.
শার্কের কার্গো হোল্ডে ওদিকে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সুবিধেমত একটা অস্ত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে মুসা।
ভয়ানক উত্তাল সাগর। ভীষণভাবে দোল খাচ্ছে জাহাজ। সোজা হয়ে বসে থাকাও কঠিন। ডেপুটি ক্যানারের পায়ের শেষ গিঁটটা খুলতেও হিমশিম খাচ্ছে রবিন।
‘কিছু পেলে?’ দড়ির চাপে লাল হয়ে যাওয়া হাতের কব্জি ডলছে কিটি।
‘নাহ্, অস্ত্র পাইনি,’ জবাব দিল মুসা। তবে লাইফ জ্যাকেটগুলোর নীচে কী পেয়েছি দেখুন।’ কালো কাপড়ের দুটো হুড তুলে দেখাল ও।
‘হুড!’ কিটি অবাক।
‘হ্যাঁ, হুড। এগুলো পরেই নিশ্চয় ব্যাংকে ডাকাতি করতে গিয়েছিল,’ ডেপুটি বললেন। কিন্তু বোটে এল কী করে এগুলো?’
‘ডাকাতি করে পালিয়ে এসে এই জাহাজেই লুকিয়েছিল ডাকাতেরা,’ মুসা অনুমান করল। ‘ওরাই রেখেছে। ডাকাতির পর পুলিশের তাড়া খেয়ে প্ল্যান বদল করেছিল গুজ বার্নার আর মরিস মরিসন। ডিন ওয়াটারম্যানের একটা এয়ারবোট চুরি করে ফ্লোরিডা বে’তে ডেনভারের জাহাজে ওঠার বুদ্ধি করেছিল।‘
‘তারমানে জাহাজে ঠিকমতই উঠতে পেরেছিল, ক্যানার বললেন। ‘গাল্ফ্ অভ মেক্সিকোর দিকে পালিয়ে না গিয়ে এখানে থেকে যাওয়ার কারণটা কী?’
‘মোহরগুলো আনতে পারেনি ওরা। ঝড়ের সময় ওদের ছিনতাই করে আনা এয়ারবোট থেকে মোহরগুলো গেইটর সোয়াম্পের পানিতে পড়ে যায়। একটু আগে বার্নার আর ডেনভার সেটা নিয়ে ঝগড়া করছিল।’
‘দেখো মুসা,’ ডেপুটি বললেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে যদি পুলিশের গোয়েন্দা হতে ইচ্ছে করে, সোজা চলে এসো ফ্রগ’স পেনিনসুলায়, আমি নিজে তোমার জন্যে সুপারিশ করব।’
‘চাকরি তো পরে, আগে বাঁচার চেষ্টা করা দরকার। এখান থেকে বেরোতে হবে।’
‘বেরিয়ে কী করবে?’ কিটির প্রশ্ন। ‘সাঁতরে সাগর পাড়ি দেবে?’
‘এ ছাড়া আর তো কোনও উপায় দেখছি না।’ কিটির দিকে তাকাল মুসা।
‘এখানকার সাগরে হাঙর আছে?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।
‘কিলবিল করছে,’ জবাবটা দিলেন ডেপুটি।
‘ঝড়ের সময় অন্য প্রাণীরা যেখানে প্রাণের ভয়ে অস্থির, তখনও খাওয়াটাই একমাত্র কাজ বলে মনে করে এখানকার হাঙরেরা,’ যোগ করল কিটি।
‘যাক, সুখবর, তিক্ত শোনাল মুসার কণ্ঠ। ‘তাহলে কি কোন উপায়ই নেই?’
‘উপায় একটা আছে,’ ডেপুটি বললেন। ‘রেডিওটা কোনভাবে হাত করতে পারলে কোস্ট গার্ডের সাহায্য চাইতে পারি।’
কেউ কিছু বলার আগেই উঠে দাঁড়াল কিটি। নিঃশব্দে হ্যাচের ঢাকনা ফাঁক করে উঁকি দিল। মাথা নামিয়ে জানাল, ‘জাহাজ চালাচ্ছে ডেনভার। বার্নারকে দেখা যাচ্ছে না।’
‘নিশ্চয় কেবিনে,’ মুসা বলল। ‘ডেনভারের চোখ এড়িয়ে ওখানে যাওয়া যাবে?’
আবার হ্যাচের ঢাকনা ফাঁক করে দেখল কিটি। ‘এসো!’
ঢাকনা সরিয়ে দুই হাতে কার্গো হোল্ডের ফোকরের দুই পাশ চেপে ধরে দোলা দিয়ে বানরের মত ওপরে উঠে গেল কিটি। ওর ক্ষিপ্রতা বিস্মিত করল সবাইকে। কেন ওর নামের আগে ‘আজব’ শব্দটা জুড়ে দেয়া হয়েছে বুঝতে পারল মুসা ও রবিন।
কিটির পিছনে বেরোল ও। জাহাজের গলুইয়ের দিকে ডেনভারের নজর। ওদের দিকে ঘুরতে লাগল ওর মুখ। ডেকে তুলে রাখা নোঙরের পিছনে চট করে বসে পড়ল দুজনে। যে কোন কারণেই হোক, ডেনভারের নজর ওদের ওপর পড়ল না, ওর চোখ আবার গলুইয়ের দিকে ফিরলে রওনা হলো দুজনে।
হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে লাগল দুজনে। মেইন কেবিনের খোলা দরজার কাছে পৌঁছল। ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখে নিল কিটি। মুসাকে আসতে ইশারা করল। ঢুকে পড়ল কেবিনে।
কেবিনের সামনের দিকে আরেকটা দরজা। জাহাজের স্লিপিং কোয়ার্টারে যাওয়ার পথ, বুঝতে পারল রবিন। একটা ধাতব ডেস্কের ওপর রাখা রেডিওটা। পাশে আরেকটা ইলেকট্রনিক যন্ত্র। ফিশ ফাইন্ডার। সাগরতলে মাছ কোথায় আছে খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহার হয় এই যন্ত্র।
ডেস্কে ছড়ানো গেইটর সোয়াম্পের একটা ম্যাপ। সমস্ত দ্বীপের ওপর লাল ‘ক্রস’ চিহ্ন দেয়া। রাস্টি কালাহানের ফিশিং ক্যাম্প ঘিরে কালো কালির দাগ।
রেডিওর সুইচ অন করল রবিন। তীক্ষ্ণ চিৎকারের মত শব্দ বেরোতে থাকল স্পিকার থেকে। তাড়াতাড়ি ভলিউম কমিয়ে দিল ও। রবিনকে চুপ থাকতে ইশারা করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল কিটি। মুহূর্ত পরেই ফিরে এল আবার। ইশারাতেই জানাল, সব ঠিক আছে।
হ্যান্ড রিসিভার তুলে নিয়ে ট্র্যান্সমিট করার বোতাম টিপল মুসা। ‘মুসা কলিং কালাহান’স ফিশিং ক্যাম্প,’ নিচু স্বরে কথা বলল মুসা। সাড়া পেল না। কণ্ঠস্বর সামান্য উঁচু করে আবার চেষ্টা করল। এবারও সাড়া এল না। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে যখন হাল ছেড়ে দিতে যাচ্ছিল, কথা বলে উঠল স্পিকার, ‘হাই, মুসা। তুমি আবার রেডিও কিনলে কবে?’