‘ঠিক। ডকমাস্টারের কাছে শোনার পর ফক্স ডেনভারকে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম ঝড়ের মধ্যে কোথায় বেরিয়েছিল ও। জবাব না দিয়ে একটা বন্দুক বের করে আমার দিকে তাক করল।’
‘যা বোঝা যাচ্ছে, পুরো দলের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই লোকটাই।’
‘দল?’ বুঝতে পারলেন না ডেপুটি ক্যানার
কিটির হাত মুক্ত হলে ও নিজেই মুখে গোঁজা কাপড়টা টেনে বের করল। ‘অ্যালিগেইটর শিকারি, মরিস। মাছ শিকারি, ডেনভার। ওদের পিছু নিয়ে জলাভূমিতে যাওয়ার সময় আমাকে ধরে ফেলল। হাত-পা বেঁধে এখানে নিয়ে এসেছে ডেনভার।’
‘তৃতীয় আরও একজন আছে দলে, গুজ বার্নার,’ রবিন বলল। ‘তালা খোলার ওস্তাদ।’
‘ওরা কারা?’ এখনও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে কিটি।
‘ডাকাত। মায়ামির ব্যাংক থেকে ওরাই সোনার মোহর চুরি করেছে।’
‘তুমি শিওর?’ ডেপুটি জিজ্ঞেস করল।
‘শিওর।’
‘কথা পরেও বলা যাবে,’ তাগাদা দিল মুসা। ‘এখান থেকে বেরোনো দরকার আগে।’
কিন্তু দেরি যা করার করে ফেলেছে। ইঞ্জিন স্টার্ট নেবার শব্দ হলো। কার্গো হোল্ডে থেকেও বোঝা যাচ্ছে, ডক থেকে সরে যাচ্ছে জাহাজটা।
‘বাহ্, চমৎকার,’ তিক্তকণ্ঠে বলল মুসা।
‘হুঁ, তাহলে ফক্স ডেনভারই হ্যাটটা ধার দিয়েছিল তোমাকে তোমার চেহারা আড়াল করে বয়েস লুকানোর জন্যে,’ কিশোর বলল। বিলের বোটে করে ওর সঙ্গে গেইটর সোয়াম্পে চলেছে।
তীর ঘেঁষে চালাচ্ছে বিল। ‘হ্যাঁ। প্রথম দিন ভুলে আমার হ্যাটটা বাড়িতে ফেলে এসেছিলাম। ডেনভার বলল, হ্যাট ছাড়া আমাকে একেবারেই কচি খোকার মত দেখাচ্ছে, অনভিজ্ঞ রাইডার। তখন আমাকে এক রাতের জন্যে ওর হ্যাটটা ধার দিল।’
‘আর টাকা দিল প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়ার জন্যে।’
‘হ্যাঁ। এক শর্তে, সোনার মোহরটা পাওয়ার কথা কাউকে বলতে পারব না।’
‘মোহরটা কোথায় পেয়েছিলে?’
‘রাতের বেলা ঠিক জায়গাটা দেখানো কঠিন, তবে চেষ্টা করব।’
ইঞ্জিন সামলাচ্ছে বিল। গলুইয়ের কাছে বসে আছে কিশোর। নজর রাখছে, যাতে পানিতে ডুবে থাকা মরা গাছে না লাগে, কিংবা ঘাসের দঙ্গল প্রপেলারে জড়িয়ে না যায়।
অবশেষে সেই দ্বীপটার কাছে পৌছল বিল। চিনতে পারল কিশোর। রাতের বেলা সেদিন এটাতেই আটকা পড়েছিল।
‘এখানে পেয়েছ? টুইন সাইপ্রেস-কী!’
না। কাছের আরেকটা দ্বীপের কিনারের অল্প পানিতে। চকচক করছিল। তুলে নিয়েছি। এটার সঙ্গে মিল ছিল দ্বীপের একটা জিনিসের।’
‘ছিল? এখন নেই?’
‘দেখলেই বুঝতে পারবে, কী বলতে চাইছি।’
কয়েক মিনিট পর একটা বাঁক ঘুরে এল বোট। সামনে একটা দ্বীপ, দেখতে টুইন সাইপ্রেস-কী’র মত। তবে একটা বড় পার্থক্য আছে।
‘এটাতে মাত্র একটা সাইপ্রেস গাছ,’ কিশোর বলল। আরেকটু কাছে যেতে দ্বিতীয় গাছটা চোখে পড়ল। তীরের কাছে কাত হয়ে পড়ে আছে। অর্ধেক পানিতে, অর্ধেক ডাঙায়। ‘ও, তারমানে ঝড়ে উপড়ে পড়েছিল!’
‘হ্যাঁ, বিল জবাব দিল। ‘ঝড়ের আগে বহুবার এসেছি এখানে। প্রায়ই ভুল করতাম। গাছ দুটোর কারণে কোনটা যে আসল টুইন সাইপ্রেস-কী বুঝতে অসুবিধে হতো।’
‘তারমানে ডাকাতরাও একই ভুল করেছে,’ এতক্ষণে বুঝতে পারল কিশোর। ‘মোহরগুলো পড়ে যাওয়ার সময় দুটো গাছ দেখেছিল ওরা। গাছ দুটোকে নিশানা রেখেছিল। ঝড়ে একটা গাছ উপড়ে যাওয়ার পর আর নিশানা ঠিক রাখতে পারেনি। ভুল করে বার বার টুইন সাইপ্রেস-কী’তে খুঁজতে চলে গেছে। ঠিক কোন জায়গাটায় মোহরটা পেয়েছ তুমি?’
‘ওই যে, ওখানে,’ দেখাতে গিয়ে কেঁপে উঠল বিলের গলা। ‘ওই অদ্ভুত আলোটা কীসের?’
পানির নীচে আলো। ওর পঞ্চাশ গজ দূরে নোঙর করা একটা এয়ারবোট।
‘মরিস মরিসন, আমি শিওর,’ কিশোর বলল। ‘ভুলটা নিশ্চয় বুঝে গেছে।’
ইঞ্জিন বন্ধ করতে ইশারা করল ও। এয়ারবোটের পাশে এসে থামল বিলের বোট। এয়ারবোটে একটা শর্টওয়েভ রেডিও দেখতে পেল কিশোর।
‘আরে, আলোটার কী হলো?’ চেঁচিয়ে উঠল বিল। এয়ারবোটের দিকে নজর ছিল ওদের। মাত্র এক মুহূর্তের জন্য। ওটুকু সময়েই গায়েব হয়ে গেছে আলো।
ভয়ঙ্কর চেহারার একটা জীব লাফিয়ে উঠল পানির ওপর। বিলের পিছনে। প্রচণ্ড শক্তিতে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল ওকে। তারপর টেনে নিয়ে গেল জলাভূমির পানিতে।
তেরো
‘বিল!’ চিৎকার দিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল কিশোর।
পানির নীচে শক্তিশালী জীবটার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করল। রবারের মত চামড়া প্রাণীটার। বড় বড় চ্যাপ্টা পায়ের পাতা। জীবটাকে চিনতে পারল ও। ডুবুরির পোশাক পরা মানুষ।
বিলকে লোকটার হাত থেকে ছাড়াতে পারল না কিশোর। তবে ঠেলেঠুলে বিলকে খানিকটা ওপরে তুলে আনতে পারল যাতে নাক ভাসিয়ে শ্বাস অন্তত নিতে পারে।
আচমকা টান দিয়ে লোকটার মাস্ক খুলে নিল ও। মুখোশের আড়ালে কার মুখ ঢাকা পড়ে ছিল দেখতে পেল। যা সন্দেহ করেছিল তাই। মরিস মরিসন।
বিলকে ছেড়ে দিয়ে সাঁতরে সরে যেতে শুরু করল মরিস। ওর পিছু নেয়ার চেয়ে এখন বিলকে সাহায্য করা জরুরি। ওকে বোটে উঠতে সাহায্য করল কিশোর। নিজে বোটের কিনারে ঝুলে রইল, অর্ধেক শরীর পানিতে। এতক্ষণে আবার মরিসের দিকে তাকানোর সুযোগ পেল। ভেবেছিল, আক্রমণ করবে। কিন্তু যেখানে দেখবে ভেবেছিল, সেখানে নেই লোকটা।
‘ওই তো!’ গলুইয়ের দিকটায় আঙুল তুলে চেঁচিয়ে উঠল বিল। ‘এয়ারবোটে উঠছে!’
কিশোরও দেখতে পেল। পানির নীচ থেকে একটা চটের বস্তা বোটে টেনে তুলছে মরিস। কিশোরও চেঁচিয়ে উঠল, ‘মোহরগুলো পেয়ে গেছে!’