ঘুসি মারতে এল বিল। হাতটা ধরে ফেলে জুজিৎসুর প্যাঁচে মুচড়ে পিছনে নিয়ে গেল কিশোর। চাপ দিয়ে বলল, ‘যতক্ষণ আমার কথার জবাব না দিচ্ছ, ততক্ষণ ছাড়ছি না আমি। আর এবার সত্যি কথাটা বলবে। তোমার বয়েস কত?’
‘আঠারো!’ শরীর মুচড়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করল বিল।
‘কত? সত্যিটা বলো!’ হাতের চাপ আরও বাড়াল কিশোর।
যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল বিল। চোদ্দ! গেইটর সোয়াম্পে কী পেয়েছি সেটা জানতে এসেছ তো? সত্যি বলছি মোহরটা ছাড়া সেমিনোল ইনডিয়ানদের হারানো গুপ্তধনের আর কিচ্ছু পাইনি।’
‘সেমিনোল গুপ্তধন?’
‘হ্যাঁ। আমাকে বলেছে, মুখ বন্ধ রাখলে গুপ্তধনের একটা ভাগ দেবে।’
‘কে বলেছে?’
‘আমি সেটা বলতে পারব না। তাহলে আমাকে খুন করে ফেলবে।’
‘শোনো, বিল, যে তোমাকে খুন করতে চায় সে একবার খুনের চেষ্টা করে ফেলেছে। আমাদের জন্যে পারেনি। আরেকটা কথা শুনে রাখো, সেমিনোলরা কখনই সোনার মোহর বানায়নি।’
শরীর মোচড়ানো থামিয়ে দিল বিল। ‘কী বলতে চাও?’
‘তোমাকে মিথ্যে কথা বলেছে ও,’ কিশোর বলল। ‘তুমি যে মোহরটা পেয়েছ, সেটা এসেছে মায়ামির একটা ব্যাংকের ভল্ট থেকে। পঞ্চাশ লাখ ডলারের মোহর গেইটর সোয়াম্পে হারিয়ে গেছে।’
‘বলো কী!’ জোরে নিঃশ্বাস ফেলল বিল। ‘জানতামই না। কিশোর, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি আর পালানোর চেষ্টা করব না।’
ছেড়ে দিল কিশোর। হাত দিয়ে কাপড়ের ময়লা ঝেড়ে নিল বিল। তারপর ওর রহস্যময় আচরণের কারণ খুলে বলতে লাগল, ‘শহরের মেইন রোডে একটা অল-নাইট পেট্রোল পাম্পের মালিক আমার বাবা। রোডেওতে কোনমতেই আমাকে যেতে দিতে রাজি হবে না।’
‘বয়েস কম বলে?’
‘না। বাবা আমাকে আঠারো বছর বয়েসেও যেতে দেবে না। রোডেওতে যাওয়াটাই বাবার পছন্দ না। আমি জখম হব, তাই ভয় পায়।’
বিলের মাথার জখমটার দিকে তাকাল কিশোর।
মাথার ফুলে ওঠা জায়গাটায় হাত দিল বিল। ‘এসব জখম নিয়ে বাবার পাম্পের পাশ দিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। বাবা কিংবা ওর কোনও বন্ধুর চোখে পড়ে গেলে সর্বনাশ হতো। আমার রোডেওতে যাওয়ার আশা একদম শেষ। তাই কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি। বহু পথ ঘুরে বোট নিয়ে গেইটর সোয়াম্পের ভিতর দিয়ে আসতে হয়েছে।’
‘এত কষ্ট, তা-ও রোডেও খেলার শখ?’
‘রোডেও আমার নেশা! মাত্র এক বছর হলো এখানে এসেছি আমরা। এখনও কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগ হয়নি। প্রয়োজনও মনে করি না। রোডেওই এখন আমার ধ্যান-জ্ঞান।’
‘কিন্তু বারবিকিউ থেকে পালিয়েছিলে কেন?’
‘ডেপুটি ক্যানার যখন বললেন তোমরা ডিটেকটিভ, ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমার গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। আমার রোডেও খেলার কথা বাবার কানে চলে যাওয়ার ভয়। তা ছাড়া আমাকে যে স্পন্সর করেছে, সে বলে দিয়েছে সেমিনোল গুপ্তধনের কথা গোপন রাখতে, কাউকে যেন না বলি।
‘তোমার স্পন্সর?’ হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল কিশোরের। ‘ফক্স ডেনভার, গুজ বার্নারের মাধ্যমে যার সঙ্গে তোমার পরিচয়?’
‘হ্যাঁ। রোডেও শেষ হয়ে গেলে গুপ্তধন খোঁজায় আমাকে সাহায্য করবে বলেছিল।’
‘হুঁ!’ চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। তারমানে আমার ধারণাই ঠিক। ডাকাতেরা ডুবে মরেনি।’
‘তা কী করে সম্ভব? যা ঝড় হয়েছিল। পাহাড়ের মত ঢেউ। এ রকম উত্তাল সাগরে এয়ারবোট ডুবলে কেউ বাঁচতে পারবে না।’
‘সাগরে আসলে ডোবেইনি ওরা,’ জবাব দিল কিশোর। ‘সাগরের মোহনায় পৌছে জাহাজে চড়েছে। এয়ারবোটটাকে সাগরে টেনে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে বোঝাতে চেয়েছে এয়ারবোটে করে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ঝড়ের সময় ডুবে মরেছে ওরা। সেই জাহাজটা কীসের এবং কার, বুঝতে পারছি। জাহাজটা একটা মাছধরা জাহাজ। মালিক ফক্স ডেনভার।’
বারো
‘গুজ বার্নার ডাকাতিতে জড়িত এ ধারণা হলো কেন তোমার?’ রবিন জিজ্ঞেস করল। রোডেও গ্রাউন্ড থেকে খচ্চরে চড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে খিদে পেয়ে গেছে ওর। নজর রাখছে ফ্রগ’স পেনিনসুলার ম্যারিনায় সাগরপাড়ে তৈরি এখানকার একমাত্র মোটেলটার দিকে 1
‘গোড়া থেকেই ওর আচরণ ছিল সন্দেহজনক,’ জবাব দিল মুসা। ‘আর আজকে হঠাৎ করে ওর ফিশিং ক্যাম্পে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটা তো আরও সন্দেহজনক। চুপ করে বসে থাকো। আমার ধারণা, মোটেল থেকে বেরোবেই বার্নার। ওর দোস্তদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে। পিছু নিয়ে তখন দেখব কোথায় যায়।’
‘কিন্তু কতক্ষণ বসে থাকব? আমার পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে।’
‘মোচড়টা আপাতত চেপে রাখো। এখান থেকে মুহূর্তের জন্যেও ওঠা চলবে না।’
‘আমরা আসার আগেই যদি বেরিয়ে গিয়ে থাকে?’
‘আরও পনেরো মিনিট দেখব। এর মধ্যে যদি না বেরোয়, আমি গিয়ে রিসিপশনিস্টের সঙ্গে কথা বলব। ততক্ষণ তুমি এখানে বসে থাকবে।’
‘কিন্তু তোমার ভুলও তো হতে পারে?’
‘না, ভুল আমার হয়নি। বার্নারও এ ডাকাতিতে জড়িত। আমি শিওর, ডিক টোম্যানের মাথায় ও-ই বাড়ি মেরে বেহুঁশ করেছে। ভাঁড়ের পোশাক চুরি করে ভাঁড় সেজে রিঙে ঢুকেছে।’
‘কিন্তু ছদ্মবেশেই যদি ঢুকবে, তা হলে আর রোডেও রাইডার সাজার কী প্রয়োজন ছিল?’
‘যাতে ফিশিং ক্যাম্পের কাছাকাছি থাকতে পারে, জলাভূমিতে হারিয়ে যাওয়া সোনাগুলো পাহারা দিতে পারে, যাতে রোডেও গ্রাউন্ডে আনাগোনা নিয়ে তাকে কেউ সন্দেহ না করে…ওই যে, বেরোচ্ছে! বলেছিলাম না?’