‘আমার এয়ারবোটটার কথা জিজ্ঞেস করছ তো?’ ভুরু কোঁচকালেন ডিন।
‘না,’ মাথা নাড়ল কিশোর। ‘আমি বলছি ডাকাতদের বোটটার কথা। এই জায়গাটার নাম ফ্রগ’স পেনিনসুলা, তাই তো?’ ডিন মাথা ঝাঁকালে আবার বলল কিশোর, ‘তারমানে এটা উপদ্বীপ। তিন পাশ থেকে ঘিরে রেখেছে পানি। পুলিশের তাড়া খেয়ে পেনিনসুলায় এসে আটকা পড়ত ডাকাতরা, যদি বোটে করে পালাতে না পারত।
ভুরু উঁচু করলেন ডেপুটি ক্যানার। ‘ভাল কথা বলেছ তো! এটা তো ভাবিনি! খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ নোটবুকে দ্রুত নোট করে নিলেন তিনি। ‘প্রচুর রহস্য উপন্যাস পড়ো বুঝি?’
‘পড়ে মানে?’ রাস্টি বলল। ‘রহস্যের মধ্যেই বাস করে ওরা। রহস্যের সমাধান করা ওদের নেশা। রকি বিচে ওরা বিখ্যাত গোয়েন্দা। অসংখ্য জটিল রহস্যের সমাধান করেছে, পুলিশকে সহায়তা করেছে…
রাস্টির প্রশংসা থামানোর জন্য তাড়াতাড়ি বাধা দিল কিশোর, ‘তবে এখানে রহস্য সমাধান করতে আসিনি আমরা, ছুটি কাটাতে এসেছি।’
খড়খড় করে উঠল স্কোয়াডকারের রেডিও-স্পিকার। গাড়ির জানালার কাছে গিয়ে কাত হলেন ডেপুটি ক্যানার। রেডিওতে পাঠানো মেসেজ শুনে নিয়ে ডিনকে জানালেন, ‘কোস্ট গার্ড। আপনার ছিনতাই হওয়া এয়ারবোটটার সন্ধান পাওয়া গেছে।’
‘কোথায়?’ ডিন জানতে চাইলেন।
‘ফ্লোরিডা বে’র পানির নীচে। ঝড়ে ডুবে গেছে। নিশ্চয় বেঘোরে মারা পড়েছে ডাকাতগুলো। তীর থেকে অত দূরে, দশ ফুট উঁচু ওই ঢেউয়ের মধ্যে বোট ডুবলে কোনমতেই বাঁচা সম্ভব নয়। তারমানে, বোটের সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতির মালও এখন সাগরের তলায়।’ স্কোয়াডকারে উঠলেন ক্যানার। ‘কথাটা গোপন রাখলে ভাল হয়। পঞ্চাশ লাখ ডলার পানির নীচে আছে শুনলে পঙ্গপালের মত ছুটে যাবে মানুষ।’
স্কোয়াডকারটা চলে গেলে কিশোর বলল, ‘ম্যাপে দেখলাম ফ্লোরিডা বে তো বিশাল।’
‘হ্যাঁ,’
মাথা ঝাঁকাল রাস্টি। ‘গাল্ফ অভ মেক্সিকোর অংশই বলা চলে।’
‘ঝড়ের মধ্যে কোন্ সাহসে সাধারণ একটা এয়ারবোট নিয়ে খোলা সাগরে গেল ডাকাতেরা?’ নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল কিশোর। চিমটি কাটল নীচের ঠোঁটে। ঝড়ের মধ্যে উত্তাল সাগরে যে ওটা ডুবে যাবে, নিশ্চয় জানত ওরা।’
‘হয়তো কোনও দ্বীপে পৌছানোর চেষ্টা করছিল,’ রবিন বলল। ‘কিংবা কিউবায় যাবার মতলব করেছিল।’
‘মরিয়া হয়ে গেলে মস্ত ঝুঁকি নেয় মানুষ,’ রাস্টি বলল। ‘থাকগে, এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই, আমাদের নিজেদেরই অনেক কাজ পড়ে আছে। চলো, আস্তাবলে যাই।’ পার্কিং লটের পাশে লম্বা সরু একটা কাঠের ছাউনি দেখাল ও। পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করল। ‘রবিন, এই নাও, শপিং লিস্ট। স্টোরে গিয়ে জিনিসগুলো বের করো। মুসা…’ ঘুরে তাকিয়ে মুসাকে না দেখে থেমে গেল রাস্টি।
পার্কিং লটের পাশে জাঙ্কইয়ার্ডে মুসাকে দেখতে পেল রবিন। একটা পুরানো মরচে পড়া গাড়ির সাইড মিররে ল্যাসো প্র্যাকটিস করছে।
জেনারেল স্টোরে ঢুকল রবিন। দরজার ওপরে ঝোলানো ঘণ্টা বেজে উঠল। লিস্ট দেখে প্রথমে টিনের খাবারগুলো বের করে কাউন্টারে জড় করতে লাগল ও। পিছনে আবার ঘণ্টা শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে লম্বা, পেশিবহুল একজন লোক। লাল চুল লাল দাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে।
‘এই, স্নরকেলিং ইক্যুইপমেন্ট বিক্রি করো তোমরা?’ ভারি কণ্ঠস্বর লোকটার।
‘স্নরকেল!’ হাসল রবিন। ‘জলাভূমির ঘাসের দঙ্গলে ডাইভিঙের জায়গা কোথায়?’
লোকটা হাসল না। ‘আমি কী-ওয়েস্টে যাচ্ছি।’
‘সে তো বহুদূর। এখান থেকে কম করে হলেও একশো মাইল।’ রেগে উঠল লোকটা। ‘এত কথা বলো কেন? স্নরকেলিং ইক্যুইপমেণ্ট আছে না নেই?’
‘আমি এই দোকানে চাকরি করি না।’ মাথা ঘুরিয়ে ইঙ্গিতে দোকানের পিছন দিক দেখাল রবিন। ‘ওখানে তাকের ওপর ডুবুরির যন্ত্রপাতি দেখেছি।’ নিজের কাজে মন দিল ও।
দরজার ঘণ্টা বাজল আবার। মাথা ঘুরিয়ে রবিন দেখে লোকটা চলে গেছে। কৌতূহল হলো ওর। লোকটা কোথায় যায় দেখার জন্য দরজার বাইরে বেরিয়ে এল। ডকের শেষ মাথায় বাঁধা একটা এয়ারবোটে উঠতে দেখল ওকে। বোটে আরেকজন লোক দাঁড়ানো। এদিকে পিছন ফিরে আছে। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। মাথায় একটা সাদা কাউবয় হ্যাট। ব্যান্ডে কালো আর কমলা রঙ করা পালক গোঁজা।
লাল চুলওয়ালা লোকটাকে ভালমত দেখার জন্য ডকের দিকে এগোল রবিন। লোকটার ঘোঁৎ-ঘোঁৎ কানে এল, ‘নাহ্, এভাবে হবে না!’
সাদা হ্যাট পরা লোকটার চেহারা দেখার আর সুযোগ হলো না রবিনের। হঠাৎ গোড়ালিতে জড়িয়ে গেল কী যেন। হ্যাঁচকা টান লেগে পা’টা সরে গেল মাটি থেকে। উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছে ও।
দুই
জলাভূমির ঘোলা নোনাপানিতে পড়ে গেল রবিন।
‘সরি, রবিন!’ ঝুঁকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল মুসা। রবিনকে টেনে তুলল ডকের ওপর। ওর পা থেকে দড়ির ফাঁস খুলে নিল। ‘একটা সচল নিশানার ওপর প্র্যাকটিস করতে চেয়েছিলাম। গরুর কাছাকাছি, মানে, সচল প্রাণী বলতে একমাত্র তোমাকেই পেলাম।’
‘যাক, এতবড় একটা সম্মান দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ,’ তিক্তকণ্ঠে বলল রবিন। ‘পরেরবার দয়া করে আমাকে বাদ দিয়ে গরুর কাছাকাছি অন্য কোন প্রাণী বেছে নিয়ো। দেখো তো, কেমন ভিজিয়ে দিয়েছো।’
আস্তাবলের দিক থেকে দৌড়ে এল কিশোর। ‘কী হয়েছে, রবিন?’
‘কিছু না,’ জবাব দিল রবিন। ‘ডুবুরির যন্ত্রপাতি কিনতে একটা লোক দোকানে ঢুকেছিল। লাল চুল লাল দাড়ি। বলল, কী-ওয়েস্টের দিকে যাচ্ছে। ডাইভিং ইক্যুইপমেন্ট আছে কিনা জিজ্ঞেস করল আমাকে। আমি বললাম, আমি এখানে চাকরি করি না। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল লোকটা। কোথায় যায় দেখার জন্যে আমিও বেরোলাম। একটা এয়ারবোটে উঠল ও। ওর সঙ্গে সাদা হ্যাট পরা আরেকজন লোক। হ্যাটের ব্যান্ডে কালো আর কমলা রঙের পালক গোঁজা।’