কিশোরও অবাক। ‘জন্মতারিখ আছে আপনাদের রেকর্ডে?’
‘দেখি। হ্যাঁ, এই তো। আর সাত দিন পরেই পনেরো বছরে পা দেবে ও।’
মাথার মধ্যে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কিশোরের। ‘আপনাদের পে ফোনটা কোথায়?’
নার্সের কাছ থেকে জেনে নিয়ে ফ্রগ’স পেনিনসুলার পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফোন করল ও। ডেপুটি ক্যানারকে পাওয়া গেল না। বিকেল থেকেই ওর কোন খোঁজ নেই।
‘কোথায় গেছে বলতে পারবেন?’ ডেস্ক সার্জেন্টকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘দুপুর একটায় বেরিয়ে গেছে থানা থেকে। বলেছে রোডেওতে যাবে।’
‘আর কিছু বলেননি?’
‘আর…আর…ও হ্যাঁ, বলেছে। ম্যারিনায় যাবে একবার। কী নাকি একটা কাজ আছে।’
‘ম্যারিনা? থ্যাংক ইউ, সার্জেন্ট।’ রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। বিলকে যে ঘরে রাখা হয়েছে, তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটল।
ঘর অন্ধকার। নিশ্চয় ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে বিলকে। কিন্তু ঘুম থেকেই ডেকে তুলতে হবে। কয়েকটা প্রশ্নের জবাব জানা অতি জরুরি।
‘বিল?’ আস্তে করে ডাক দিল কিশোর। জবাব না পেয়ে আবার ডাকল, ‘বিল?’ এবারও সাড়া পেল না।
সুইচ টিপে বাতি জ্বেলে দিল কিশোর।
শূন্য বিছানা!
বিল ওয়াটমোর নেই!
.
রাস্টির সঙ্গে সামিয়ানায় পৌঁছল রবিন ও মুসা। মিস্টার গিবসনকে ঘিরে ধরেছে তখন প্রতিযোগীরা।
‘সত্যিই তাহলে রোডেও বন্ধ করে দিলেন?’ হতাশ টনি ওয়াকার বলল।
‘একেবারে বন্ধ করিনি,’ জবাব দিলেন গিবসন। ‘আপাতত।’
জোরাল গুঞ্জন উঠল প্রতিযোগীদের মাঝে। সবাই হতাশ।
‘দেখো, মিস্টার গিবসন বললেন, ‘ওরকম একটা দুর্ঘটনার পর রোডেও বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না আমার। তা-ও না হয় ভেবে দেখা যেত, কিন্তু ঝড়? আসবে তো বোঝাই যাচ্ছে। ঝড়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে কীভাবে? ঠিক আছে, আজ যাও, কাল আবহাওয়া ভাল থাকলে কিছু করা যায় কিনা দেখব।’
নিজের অতিথিদের উদ্দেশ্যে হ্যারিস বলল, ‘ঝড় আসার আগেই আমাদের ফিশিং ক্যাম্পে ফিরে যেতে হবে। কেবিনে ঢুকে পড়তে হবে।’
আর ওখানে জটলা করল না কেউ। যে যার মত সরে পড়তে লাগল। কাউহ্যান্ডরা জিনিসপত্র গুছিয়ে রোডেও বন্ধ করে দিচ্ছে। অতিথিদের নিয়ে পার্কিং লটের দিকে ছুটল হ্যারিস।
রবিন ও মুসার সঙ্গে এগোল রাস্টি। ‘এবারের রোডেওটার সর্বনাশ করে দিল ওই ডাকাতেরা! তার ওপর ঝড়েও যে কী পেল!’
পার্কিং লটে পৌঁছে দেখা গেল হ্যারিসের পিকআপ ট্রাকের পিছনে উঠে পড়েছে অতিথিরা। রাস্টির জন্য অপেক্ষা করছে হ্যারিস। ওকে দেখামাত্র বলে উঠল, ‘দেরি করছেন কেন? উঠে পড়ুন। তুফানের আগেই পালাতে হবে।’
ট্রাকের অতিথিদের ওপর চোখ বোলাল মুসা। ‘গুজ বার্নার কোথায়?’
তেড়া চোখে ওর দিকে তাকাল হ্যারিস। ‘আমাদের সঙ্গে আর থাকতে রাজি না। ম্যারিনায় চলে গেছে। মোটেলে রাত কাটাবে।’
গাড়ি ছেড়ে দিল ও। চাকার ঘায়ে ধুলো উড়িয়ে পার্কিং লট থেকে গিয়ে রাস্তায় উঠল ট্রাক।
এগারো
হাসপাতাল থেকে মাইলখানেক পথ হাঁটার পর ৬, ম্যানাটি লেনে পৌঁছল কিশোর। ছোট্ট বাড়িটার ভিতরে অন্ধকার। বিল ওখানে আছে বলে মনে হলো না।
ঘুরে পিছন দিকে চলে এল ও। সাগরের কিনারে। ফ্লোরিডা বে’র কালো পানির দিকে তাকাল। দূরে একপাশে আলো দেখা যাচ্ছে। অনুমান করল, ওটা রাস্টি কালাহানের ফিশিং ক্যাম্প।
বিলদের বাড়ির ডকে বাঁধা একটা ছোট বোট। ডক থেকে নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল কিশোর। তাতে ডকের ওপর তো বটেই, বাড়িটার ওপরও চোখ রাখতে পারবে।
ঘড়ি দেখল। দশটা বেজে তিন মিনিট। বসে পড়ল ও। তীরে এসে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ শুনছে। ঠাণ্ডা বাতাসের সাঁই-সাঁই শব্দ। বৃষ্টিটা শীঘ্রি আসছে, বুঝতে পারছে ও।
ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ছে শরীর। বাতাসের মোলায়েম স্পর্শ আর ঢেউয়ের একটানা শব্দ নেশা ধরিয়ে দেয়। ঝিমুনি এসে গেল ওর। ঘুমিয়ে পড়ল। ঝটকা দিয়ে মাথা তুলল একসময়। ওর মনে হলো মিনিটখানেক পেরিয়েছে। কিন্তু ঘড়িতে দেখে এগারোটা তিরিশ।
পানির দিক থেকে আসছে ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন। ধীরে ধীরে বাড়ছে। এদিকেই আসছে। তাড়াতাড়ি উঠে একটা নারকেল গাছের আড়ালে লুকাল ও। বন্ধ হয়ে গেল ইঞ্জিন। ডকের দিকে বোটটাকে ভেসে আসতে দেখল কিশোর। তাতে বসা বিলকে চিনতে অসুবিধে হলো না।
নিজের অজান্তেই কুঁচকে গেল কিশোরের ভুরু। হাসপাতাল থেকে হাঁটাপথে মাত্র এক মাইল। এত সহজ রাস্তা দিয়ে না এসে সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে গিয়ে বোট নিয়ে এতটা পথ ঘুরে আসার কী মানে?
বোটটা তীরে টেনে তুলে রাখল বিল। বাড়ির দিকে এগোল।
বিলের বয়েস মাত্র চোদ্দ হলে কী হবে, গায়ে অনেক জোর। একটা বুদ্ধি করল কিশোর। নিঃশব্দে পিছনে গিয়ে আঙুল বাঁকিয়ে পিস্তলের নলের মত বিলের পিঠে ঠেসে ধরল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘দাঁড়াও!’
শক্ত হয়ে গেল বিল। কণ্ঠস্বরটা অন্যরকম করে ফেলায় কিশোরকে চিনতে পারেনি। ‘প্লিজ, গুলি করবেন না! সোনার মোহরটার কথা কাউকে বলব না আমি! সত্যি বলছি!’
দ্রুত বিলের দেহতল্লাশি করে নিল কিশোর। অস্ত্রটস্ত্র আছে কিনা দেখল। আড়চোখে তাকাল বিল। কিশোরকে চিনতে পেরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘তুমি!’ ঘুরে দাঁড়িয়ে জোরে এক ধাক্কা মারল কিশোরের বুকে। ‘আমার পিছনে লেগেছ কেন তুমি? তোমার কারণে আজ আরেকটু হলে মারা পড়েছিলাম আমি।’