হেসে ফেলল মুসা। ‘কিটিকে যেমন রবিনের অপরাধী মনে হয় না, আমারও তেমনি বিলকে মনে হয় না।’
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘তবে কিছু একটা গোপন করছে বিল। আজ রাতেই সেটা জানার চেষ্টা করব।’
‘ঠিক আছে, যাও তুমি,’ মুসা বলল। ‘আমি আর রবিন রাস্টির সঙ্গে যাচ্ছি, ডিক টোম্যানের সঙ্গে কথা বলতে।’
তাড়াহুড়া করে পার্কিং লটের দিকে চলে গেল কিশোর। দূর থেকেই দেখল স্ট্রেচারে করে অ্যামবুলেন্সে তোলা হচ্ছে বিলকে।
অ্যামবুলেন্সের কাছে এসে কিশোর বলল, ‘আমি অনি ওয়াটমোর। বিলের ভাই।’
‘এসো এসো, ভালই হলো,’ ডাক্তার বললেন।
অ্যামবুলেন্সের পিছনে বিলের সঙ্গে উঠে বসল কিশোর।
সাইরেন বাজিয়ে চলতে শুরু করল অ্যামবুলেন্স। বিলের মুখের দিকে তাকাল কিশোর। চোখ বোজা। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসা। এখনও বেহুঁশ। এই অবস্থায় মোটেও ওকে অপরাধীর মত লাগছে না।
.
রাস্টির পিছনে বাঙ্কহাউসে চলেছে রবিন ও মুসা। রোডেও ভাঁড়কে যেদিকে দৌড়ে যেতে দেখা গেছে।
হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল রবিন। ‘মুসা, দাঁড়াও! টোম্যান বলেছিল মেকাপ নিতে যাচ্ছে। তারমানে ট্রেইলারে। বাঙ্কহাউসে না গিয়ে আগে ওখানে খুঁজে দেখা দরকার আমাদের।’
‘টোম্যানের ট্রেইলারটা পার্কিং লটের পিছনে,’ মুসা বলল। ‘কিন্তু ওখানে খুঁজে কী হবে?’
‘কিশোরের সন্দেহ, রিঙে টোম্যান যায়নি। আর আমার মনে হচ্ছে, ট্রেইলারে গেলেই জবাবটা পেয়ে যাব। এসো।’
ট্রেইলারের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই থমকে গেল রবিন। সারা ঘর তছনছ। ঝড় বয়ে গেছে যেন ঘরটায়। প্রচুর ধস্তাধস্তি হয়েছে।
মেকাপের জিনিসপত্র আর কাপড়চোপড় ছড়িয়ে আছে সবখানে। মেঝেতে পড়ে থাকা একটা ঢোলা ওভারঅল নড়ে উঠল হঠাৎ। গোঙানি শোনা গেল।
ওভারঅলটা তুলে নিল রবিন। টোম্যানকে দেখা গেল। কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। মাথার একপাশে গোলআলুর মত ফুলে আছে। ‘কী…’ রবিন আর মুসার ওপর চোখ পড়তে বলে উঠল, ‘আমাকে মারলে কেন?’
‘আমরা মারিনি, মিস্টার টোম্যান,’ মুসা জবাব দিল। ‘অন্য কেউ মেরেছে।’
‘মেকাপ টেবিলে বসা ছিলাম…’ পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে পায়নি এখনও টোম্যানের। ‘কী চুরি করেছে?’
‘আমার ধারণা, একটা জিনিসই চুরি করেছে,’ জবাব দিল রবিন, ‘আপনার পরিচয়।’
‘মানে?’
‘আপনার পরচুলা, আপনার হ্যাট, আপনার পোশাক,’ বুঝিয়ে দিল মুসা।
টোম্যানের বাঁ হাতে নীল-সাদা ফ্ল্যানেলের কাপড়ের একটা ছেঁড়া টুকরো দেখতে পেল রবিন। ‘আপনার হাতে কী?’
‘মাথায় বাড়ি খাওয়ার আগে ওদের সঙ্গে প্রচুর ধস্তাধস্তি করেছি। মনে হয় একজনের পকেট থেকে ছিঁড়ে রয়ে গেছে কাপড়টা।’
‘চেহারা দেখেছেন?’ মুসার প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল টোম্যান।
‘পোশাকটা দেখলে চিনতে পারবেন?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।
আবার মাথা নাড়ল টোম্যান। ‘অনেক কাউবয়ই ফ্লানেলের শার্ট পরে। তাদেরই কারও পকেট….
‘ছিঁড়েছেন!’ টোম্যানের কথাটা শেষ করে দিল রবিন। ‘পকেটে কোন জিনিস থেকে থাকলে নিশ্চয় পড়ে গেছে!’
ট্রেইলারের মেঝেতে খুঁজতে শুরু করল রবিন। এক টুকরো ভাঁজ করা কাগজ দৃষ্টি আকর্ষণ করল তার। তুলে নিয়ে খুলল।
‘কী লেখা?’ এগিয়ে এল মুসা।
‘একটা নোট।’ জোরে জোরে পড়ল রবিন, ‘ছেলেটাকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। ব্যবস্থা করো।’
‘মানে কী?’ বুঝতে পারছে না টোম্যান।
মুসার দিকে তাকিয়ে জবাবটা দিল রবিন, ‘কেউ একজন বিল ওয়াটমোরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে।’
এখানে আর কিছু করার নেই। ডাক্তারকে খবর দেবে কিনা জিজ্ঞেস করল রবিন। টোম্যান বলল, ‘লাগবে না। বরফের সেঁক দিলেই সেরে যাবে।’
মুসাকে নিয়ে বেরিয়ে এল রবিন। বাঙ্কহাউসে রাস্টির খোঁজে চলল।
যাওয়ার পথে মাইকে মিস্টার গিবসনের ঘোষণা শুনল। বিলের দুর্ঘটনার পুলিশী তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বুল-রাইডিং প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকবে। বন্ধ করে দেয়ার আরও একটা কারণ, ঝড়ের সঙ্কেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আরেকটা বড় ধরনের ঝড় এগিয়ে আসছে এই এলাকার দিকে।
বাঙ্কহাউসের সামনে রাস্টির সঙ্গে জটলা করছে কয়েকজন কাউহ্যান্ড। টোম্যানের দুরবস্থার কথা ওদেরকে জানাল রবিন।
‘হুঁ,’ মাথা দুলিয়ে রাস্টি বলল, ‘বুঝলাম, ভুয়া টোম্যান সেজেছিল যে, সে বাঙ্কহাউসের সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে কেউ দেখার আগেই পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।’ রবিন ও মুসার দিকে তাকাল। ‘এখানে আর কিছু করার নেই। তাঁবুতে চলো।’
‘ওর নাম বিল ওয়াটমোর, ফ্রগ’স পেনিনসুলাতে থাকে,‘ হাসপাতালের অ্যাডমিশন নার্সকে বলল কিশোর।
‘তুমি ওর ভাই?’ নার্স জিজ্ঞেস করলেন।
আবারও সরাসরি মিথ্যে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করছে কিশোর। ‘ইয়ে…আমি ঠিক ওর ভাই না… বন্ধু।’
‘ডাক্তার বলেছেন মাথায় আঘাত পেয়েছে ও। সামান্য সময়ের জন্যে মানসিক ভারসাম্য কিংবা স্মৃতিও হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই। সেরে যাবে। তোমার বন্ধুর বয়েস কত?’
‘আঠারো।’
দ্রুত কম্পিউটারের কী টিপলেন নার্স। মনিটরের পর্দায় ফুটে ওঠা লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, হাসপাতালের ফাইলে ওর নাম আছে। আরও একবার ভর্তি হয়েছিল। বিল ওয়াটমোর। সিক্স ম্যানাটি লেন। গত বছর টনসিল অপারেশন করিয়েছিল।’
‘গত বছর? তারমানে পনেরো বছর বয়েসে?’
‘উঁহু। তেরো।’ বলেই কিশোরের দিকে ফিরে তাকাল বিস্মিত নার্স।