‘ঠিকই অনুমান করেছ,’ মাথা দোলাল কিশোর। ‘গেইটর সোয়াম্পে কাল রাতে অ্যালিগেইটর খোঁজার নাম করে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মোহর খুঁজতে গিয়েছিল মরিস। তবে সেটা প্রমাণ করতে হবে আমাদের।’
মাইকে ভেসে এল মিস্টার গিবসনের কণ্ঠ, ‘পরের প্রতিযোগী, রাস্টি কালাহান।’
আলোচনা বাদ দিয়ে রিঙের দিকে তাকাল ছেলেরা। রাস্টি এসে চমৎকার খেলা দেখিয়ে গেল। এতক্ষণে আজ প্রথম নির্বাচিত হলো একজন।
‘এরপর আসছে বিল ওয়াটমোর!’ মিস্টার গিবসন জানালেন। ‘ব্ল্যাক সাইক্লোনের পিঠে চড়ে!’
কান খাড়া হয়ে গেল গোয়েন্দাদের। দৃষ্টি ঘুরে গেল খুপরির দিকে, রিঙে ঢোকানোর আগে যেখানে ষাঁড়গুলোকে রাখা হয়। একটা ষাঁড়ের পিঠে বসা দেখল বিলকে। রোডেও ক্লাউন গেট খুলে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু হাত তুলে বিল ইঙ্গিত করল, সে এখনও রেডি হতে পারেনি
‘ভয় পাচ্ছে,’ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ,’ মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘কিন্তু ভয়টা কীসের? ষাঁড়ের পিঠে চড়ার, না অন্য কিছু?’
বিলের ইঙ্গিত যেন দেখতেই পায়নি ক্লাউন। গেট খুলে দিল। বিলকে পিঠে নিয়ে তীব্র গতিতে রিঙে ঢুকে পড়ল ষাঁড়। ঝাড়া দিয়ে, পিঠ বাঁকিয়ে, শরীর মুচড়ে আরোহীকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। গাইড রোপ হাতে নেই। তৈরি হতে পারেনি বিল। অসহায় ভঙ্গিতে ষাঁড়ের পিঠ আঁকড়ে ধরে বসে থাকার চেষ্টা করছে। বিপদটা বুঝে গেছে দর্শকরা। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি হই-চই।
আচমকা প্রচণ্ড এক মোচড় মারল ব্ল্যাক সাইক্লোন। শরীর বাঁকিয়ে এমন এক ঝাঁকি দিল, আর টিকে থাকতে পারল না বিল। উড়ে গিয়ে পড়ল বেড়ার কিনারে। আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গেল দর্শক।
গেটের দিকে চোখ গেল মুসার। ‘টোম্যান তো কিছু করছে না! টেনে সরাচ্ছে না কেন বিলকে?’
কিশোরও অবাক হয়ে দেখছে। কিছু তো করলই না রোডেও ভাঁড়—যা ওর দায়িত্ব—বরং দৌড়ে রিঙের কাছ থেকে সরে বাঙ্কহাউসের দিকে চলে যাচ্ছে। চেহারা ঢাকা পড়েছে মাথার মস্ত হ্যাটের আড়ালে। চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, ‘ইচ্ছে করে বিপদে ফেলেছে বিলকে!’
কিছু একটা করা দরকার। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ও। দেখাদেখি রবিন আর মুসাও উঠল। কিশোরের পিছন পিছন দৌড় দিল।
নিথর হয়ে পড়ে আছে বিল। একটুও নড়ছে না। মরেই গেল নাকি! ওদিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক সাইক্লোন। চোখে আগুন। নিঃশ্বাসের ফোঁসফোঁসানির সঙ্গে নাক দিয়ে যেন বাষ্প বেরোচ্ছে। বিলকে ভর্তা বানানোর জন্য মাথা নিচু করে শিং বাগিয়ে ছুটল। চেঁচিয়ে, হাত নেড়ে ষাঁড়টাকে থামানোর চেষ্টা করল মুসা।
চেঁচামেচিতে ফিরে তাকাল ষাঁড়। নিরাপদ জায়গায় বিলকে সরানোর জন্য ছুটে যাচ্ছে রবিন ও কিশোর। মুসাকে তাড়া করল ষাঁড়। ঘুরে বেড়ার দিকে দৌড়াতে শুরু করল মুসা।
খেপা ষাঁড়ের সঙ্গে পারা কঠিন। মুহূর্তে মুসার কাছে চলে এল ওটা। ঠিক পিছনেই রয়েছে। ওটার গরম নিঃশ্বাসও গায়ে লাগছে। সময়মত বেড়া ডিঙাতে না পারলে ষাঁড়ের মারাত্মক শিঙের গুঁতো খেতে হবে।
শেষ মুহূর্তে বাউলি কেটে একপাশে সরে গেল মুসা। বেড়ার রেলিঙ চেপে ধরে লাফ দিল ওপর দিকে। ঠিক ওর নীচে বেড়ার গায়ে লাগল ষাঁড়ের শিঙের গুঁতো। একটুর জন্য বেঁচে গেল মুসা।
দশ
ছুটে এল কয়েকজন কাউহ্যান্ড। ষাঁড় সামলাতে ব্যস্ত হলো। বিলকে তুলে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের অন্যপাশে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গেল রবিন আর কিশোর। হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল মুসা।
খবর শুনে বাঙ্কহাউস থেকে দৌড়ে এল রাস্টি। সহকারী নিয়ে ডাক্তার এলেন বিলকে দেখতে।
‘কী হয়েছে?’ রাস্টি জানতে চাইল।
‘ভুল করে আগেভাগেই গেট খুলে দিয়েছিল রোডেও ক্লাউন, ‘ একজন দর্শক জানাল। ‘অ্যাক্সিডেন্ট।’
‘অ্যাক্সিডেন্ট না,’ রাস্টিকে বলল কিশোর। ‘ষাঁড়টা বিলকে পিঠ থেকে ফেলে দিতেই দৌড়ে পালিয়েছে ভাঁড়।’
‘কোন ভাঁড়?’
‘ডিক টোম্যান।’ জবাবটা দিল বয়স্ক একজন দর্শক। ‘টেন- গ্যালন হ্যাট দেখে চিনেছি।’
‘হ্যাটটা মাথায় দিয়েছিল চেহারা লুকানোর জন্যে,’ ফিসফিস করে রবিনকে বলল কিশোর।
‘তুমি ঠিকই বলেছো,’ রবিন জবাব দিল। ‘একটিবারের জন্যেও ভালমত ওর চেহারা দেখিনি।’
বিলকে পরীক্ষা করে দেখে ডাক্তার বললেন, ‘জ্ঞান হারিয়েছে। ওকে ফ্রগ’স পেনিনসুলায় হাসপাতালে নিতে হবে।’
এ ধরনের জরুরি অবস্থার জন্য সব সময় রোডেও রিঙের বাইরে একটা অ্যামবুলেন্স রেডি থাকে। সেটা থেকে স্ট্রেচার নিয়ে এল ডাক্তারের একজন সহকারী। সাবধানে বিলকে স্ট্রেচারে তোলা হলো।
‘চলো, ডিক টোম্যানকে খুঁজে বের করি,’ রাস্টি বলল।
দর্শকরা চলে গেল। কিশোর বলল, ‘আমি বিলের সঙ্গে হাসপাতালে যাচ্ছি।’
‘যাও,’ রবিন বলল। ‘হুঁশ ফিরলেই সোনার মোহরটার কথা জিজ্ঞেস কোরো। তাকে কে খুন করতে চায়, কেন, জানারও চেষ্টা কোরো।’
‘তা তো করবই। তবে ওর সঙ্গে যাওয়ার আমার আসল উদ্দেশ্য ওকে পাহারা দেয়া, আবার যাতে কেউ হামলা চালাতে না পারে। এবার হয়তো আর ব্যর্থ হবে না খুনী।’
‘সন্দেহভাজন একজন ডাকাতের প্রতি বেশি মায়া দেখানো হয়ে যাচ্ছে না?’ ভুরু নাচাল মুসা।
হাসল কিশোর। ‘মায়াটা কিন্তু তুমিই আগে দেখিয়েছো। রিঙের মধ্যে ষাঁড়টাকে ঠেকাতে তুমি সবার আগে দৌড় দিয়েছিলে।’