তিনজন তিনদিকে চলল ওরা। মিস্টার গিবসনের ট্রেইলারের কাছে যখন পৌছল কিশোর, ট্রেইলার থেকে তখন বেরোচ্ছেন তিনি। রোডেও বুকটার কথা জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘আমাকে এখুনি মেইন রিঙে অ্যানাউন্সমেন্ট বুদে যেতে হবে।’ কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবলেন মিস্টার গিবসন। দ্বিধা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বই দেখাটা কী জরুরি?’
‘হ্যাঁ। মায়ামিতে ব্যাংক ডাকাতির ব্যাপারে কিছু তথ্য দরকার।’
‘কে তুমি?’
‘ফিশিং ক্যাম্পের মালিক রাস্টি কালাহানের বন্ধু। শখের গোয়েন্দা।’
এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন মিস্টার গিবসন। চাবি দিয়ে ট্রেইলারের দরজার তালা খুললেন। ভিতরে ঢুকে ডেস্ক থেকে একটা মোটা বই তুলে নিয়ে কিশোরকে দিলেন। ‘সাবধানে রেখো। দেখা শেষ হলে অ্যানাউন্সার বুদে আমাকে দিয়ে এসো।’
কনসেশন স্ট্যান্ডের কাছে আলো আছে। বইটা উল্টে দেখতে শুরু করল কিশোর। দশ মিনিট পর বন্ধ করল। মুসা ও রবিনের খোঁজে চলল।
বুলেটিন বোর্ডের ‘কাছে মুসাকে পাওয়া গেল। হাতে একটা আধখাওয়া কর্ন ডগ। চেহারায় বিস্ময়।
‘কী হয়েছে, মুসা?’
ঘুরে তাকাল মুসা। ‘লিস্টে ওর নাম নেই। ‘
‘বইতেও খুঁজে পেলাম না। গত তিন বছরে যারা প্রতিযোগিতা
করেছে, তাদের মধ্যে বিলের নাম নেই…’
‘আমি বিলের কথা বলছি না। গুজ বার্নারের কথা বলছি।’
‘কী?’
‘খেতে খেতে মনে হলো লিস্টটা একবার দেখি। কিন্তু বার্নারের নাম নেই। ও বলেছে, নর্থ ডাকোটার ফার্গোতে নাকি ব্রঙ্কো-বাস্টিঙের খেলায় ট্রফি পেয়েছে। অথচ এখানে এসে খেলায় নাম পর্যন্ত লেখায়নি। একজন রোডেও খেলোয়াড়ের জন্যে অস্বাভাবিক না ব্যাপারটা?’
চোখ বড় বড় হয়ে গেল কিশোরের। ‘এক সেকেন্ড!’ হাতের বইটা খুলে দ্রুতহাতে পাতা ওল্টাতে শুরু করল ও। খানিকক্ষণ দেখে মাথা নাড়ল, ‘নাহ্, ব্রঙ্কো-বাস্টিঙে ট্রফি পাওয়া তো দূরের কথা, নামই নেই ওর।’
.
পুরো রোডেও গ্রাউন্ড চষে ফেলল রবিন। আগের দিনের পর কিটিকে আর কেউ দেখেনি।
গরুর ঘরগুলোর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় ফিসফিসে কথার শব্দ কানে এল ওর। থেমে দাঁড়িয়ে কান পাতল। বিশাল জানোয়ারগুলোর জোরাল নিঃশ্বাস আর ঘোঁৎ-ঘোঁৎ কানে এল। তারপর আবার কথা শোনা গেল।
মাথা নিচু করে, পা টিপে টিপে বেড়ার ধার ঘেঁষে নিঃশব্দে এগিয়ে চলল ও। চলে এল একটা গেটের কাছে। গেটের ওপরে লেখা : ব্ল্যাক সাইক্লোন। ভিতরে একটা মস্ত ষাঁড়, গায়ের রঙ কয়লার মত কালো।
গরুটার কানে কানে কথা বলছে কিটি ওয়াটারম্যান। ‘তুই একটা মস্ত যোদ্ধা, সাইক্লোন। আজ তুই আমাকে জেতাবি। পিঠ থেকে ছুঁড়ে ফেলবি না। আজকের রাতটা আমার।’ হঠাৎ ঘাড় কাত করে কান পাতল ও। জোরে জোরে বলল, ‘কে জানি গেটের বাইরে আড়ি পেতেছে। বেজির মত উঁকিঝুঁকি মারছে। দাঁড়া, দেখে আসি।’
টের পেয়ে গেছে কিটি। আর লুকিয়ে থাকতে পারবে না বুঝে সোজা হয়ে দাঁড়াল রবিন। ‘আমি বেজি নই।’
মসৃণ ভঙ্গিতে এক লাফে বেড়া ডিঙিয়ে গেটের বাইরে চলে এল কিটি। রবিনের মুখোমুখি দাঁড়াল।
‘বিকেল বেলা আপনাকে দেখেছি,’ হেসে বলল রবিন। ‘ভোজালী হাতে।’
‘শিকারির ছাউনিতে যন্ত্রপাতিগুলো তাহলে তোমরাই রেখে এসেছিলে।’
‘আমরা রাখব কেন? স্নরকেল আর মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে আমাদের কী কাজ?’
চোখের পাতা সরু হয়ে এল কিটির। ‘অ্যান্টিক খুঁজতে গিয়েছিলে, আমি জানি। সেমিনোলদের গুপ্তধন, তীরের মাথা, এসব জিনিস। দ্বীপে উঠে আমাদের পূর্বপুরুষদের সমাধিস্থানের পবিত্রতাও নষ্ট করে এসেছ।’
‘আপনি অযথা আমাদের দোষ দিচ্ছেন, কিটি।’
রবিনের কথা যেন কানেই গেল না কিটির। ‘রাস্টি কিন্তু ওরকম না। ও আমাদের পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা করে, দ্বীপের পবিত্রতাও নষ্ট করতে যায়নি কখনও। কিন্তু তুমি আর তোমার দুই বন্ধু মোটেও ভাল না। বড় বেশি নাক গলানো স্বভাব তোমাদের।’
‘আমরা দ্বীপের পবিত্রতা নষ্ট করতে যাইনি, ব্যাংক ডাকাতদের খোঁজ করছি।’
‘মিথ্যে কথা বলছ!’
‘আপনার দাদাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।’
‘তুমি একটা মিথ্যুক!’
রবিন বুঝল, ওকে মারার ছুতো খুঁজছে কিটি। বাঁচিয়ে দিল মিস্টার গিবসনের একজন কাউহ্যান্ড। দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। ‘এই, কী হচ্ছে! বুল রাইডিং শুরু হবে এখুনি। চলো, চলো!’
‘পরে দেখব তোমাকে,’ রবিনকে শাসিয়ে গটমট করে চলে গেল কিটি।
কিটির আচরণে ক্ষুব্ধ রবিন। তবু কিছুতেই ব্যাংক ডাকাত ভাবতে পারল না ওকে।
.
‘চারজন গেল! টিকতেই পারল না ষাঁড়ের পিঠে। নির্বাচিত হওয়া তো দূরের কথা,’ মুসা বলল।
গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখছে তিন গোয়েন্দা।
‘কিটিকে খুঁজে পেয়েছি আমি,’ ষাঁড় নিয়ে মাথাব্যথা নেই রবিনের। ‘ডুবুরির যন্ত্রপাতিগুলো ওর, এ কথা তো স্বীকার করলই না, উল্টো আমাদেরকেই দোষ দিল। শিকারির ছাউনিতে ডুবুরির যন্ত্রপাতিগুলো নাকি আমরা রেখে এসেছি।’
বইতে গুজ বার্নার আর বিল ওয়াটমোরের নাম নেই, রবিনকে জানাল কিশোর।
‘তারমানে বার্নারটা একটা ভুয়া,’ রবিন বলল। ‘বিলটাও তাই।’
‘কিটির কথা বাদ দিচ্ছ কেন?’ ভুরু নাচাল মুসা।
‘সত্যি কথা বলতে কী, মুসা, কিটিকেই বরং আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।’
‘কিন্তু কিটির ছাউনিতে ডুবুরির যন্ত্রপাতি আর মেটাল ডিটেক্টর ও নিজে ছাড়া আর কে রাখবে?’
‘বুঝতে পেরেছি!’ হঠাৎ করেই জবাবটা মাথায় এসে গেল রবিনের। ‘মরিস মরিসন! কোন সন্দেহ নেই! স্নরকেলিং ইক্যুইপমেন্ট পাওয়া যাবে কিনা, ডিনের দোকানে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে। আমি একটুক্ষণের জন্যে যখন অন্যদিকে ঘুরেছিলাম, খুব সহজেই একটা টর্চলাইট চুরি করা সম্ভব ছিল ওর পক্ষে। শিকারির ছাউনিটা পরিত্যক্ত ভেবে যন্ত্রপাতিগুলো ওখানে রেখে এসেছিল। ভেবেছিল লুকানোই থাকবে। কী বলো, কিশোর?’