‘হুঁ!’ মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘সন্দেহজনক।’
‘মরিস, বিল আর কিটি, হয়তো তিনজনেই জড়িত,’ মুসা বলল। ‘গুজ বার্নারকেই বা বাদ দেব কেন তাহলে?’ বার্নারের ঘরের জানালায় দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে শোনা কথাগুলো কিশোরকে জানাল রবিন। ওই লোকটার আচরণও সন্দেহজনক। কিশোর, বিল আর কিটিকে রোডেওতে দেখেছো?’
‘না। ওয়াইল্ড বুল রাইডিং শুরু হবে শীঘ্রি। রিঙে না এলে বাঙ্কহাউসে পাওয়া যাবে।’
‘চলো, যাই। দেখে আসি।’
‘তোমরা যাও,’ কিশোর বলল। ‘আমার কাজ আছে।’
‘ক্যানারের জন্যে অপেক্ষা করবে?’
‘না। মিস্টার সাইমনকে ফোন করব।’
‘কেন?’
‘তথ্য জানার জন্যে।’
.
রকি বিচে ফোন করতে গেল কিশোর, শখের গোয়েন্দা মিস্টার সাইমনের বাড়িতে। রবিন আর মুসা চলে এল বাঙ্কহাউসে। রোডেওর জন্য তৈরি হচ্ছে খেলোয়াড়রা। ভীষণ ব্যস্ততা। কাউবয়রা কেউ বুট পরছে। আগের দিনের জখমে মলম লাগাচ্ছে কেউ। যারা সেদিন খেলবে না, তারা পিছনের টেবিলে বসে তাস খেলছে।
একটা লকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিল ওয়াটমোর। রবিনকে দেখে আরেক দিকে সরে যেতে চাইল। সামনে দাঁড়িয়ে ওকে আটকাল রবিন।
‘আরে, রবিন!’ বিল বলল।
‘বারবিকিউতে ওরকম দৌড়ে পালিয়েছিলে কেন?’
‘সে-কৈফিয়ত কি তোমাদের দিতে হবে?’ রেগে উঠল বিল। ‘ছাড়ো। রিঙে যাব। একটা পাজি ষাঁড়ের পিঠে চড়তে হবে আজ আমাকে। ব্ল্যাক সাইক্লোন। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’
‘বুল রাইডিং খুব বিপজ্জনক খেলা,’ মুসা বলল। ‘তোমার মত এত কম বয়েসে তো কেউ খেলে না।’
‘তাতে তোমাদের কোন অসুবিধে আছে?’ রবিনের পাশ কাটিয়ে গিয়ে লকারের সামনে দাঁড়াল বিল। কম্বিনেশন লকের ডায়াল ঘুরিয়ে লকার খুলল। ভিতর থেকে থাবা দিয়ে একটা হ্যাট তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল।
‘ওটা তোমার হ্যাট!’
‘হ্যাঁ। কেন, কী হয়েছে?’ অবাক মনে হলো বিলকে।
রবিনও অবাক। বিলের হাতে একটা কালো হ্যাট, লাল পালক লাগানো। ‘তোমার কমলা-কালো পালক লাগানো সাদা হ্যাটটা কোথায়?’
‘সরো, আমি যাই!’ রবিনকে ঠেলে সরিয়ে পাশের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল বিল 1.
‘ও হ্যাট বদল করল কেন?’ নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল রবিন।
‘ওকে যে সন্দেহ করছি, জেনে গেল নাকি?’
‘মনে হয়,’ মুসা বলল। ‘বয়েস কম বলাতে রেগে গেল কেমন দেখলে না। হ্যাটের কথা জিজ্ঞেস করলে, জবাব দিল না…’
‘রবিন!’ দৌড়ে আসতে দেখা গেল কিশোরকে। ‘সাংঘাতিক খবর আছে। গেইটর সোয়াম্পে কী খোঁজা হচ্ছে জেনে গেছি। মিস্টার সাইমনের কাছে জানলাম, ডাকাতরা মায়ামির ব্যাংক থেকে টাকার বান্ডিল চুরি করেনি।’
‘তাহলে কী চুরি করেছে?’ ভুরু নাচাল মুসা।
‘সোনার মোহর!’
‘তিনি জানলেন কীভাবে?’
‘তাঁকে সব কথা জানিয়ে খোঁজ নিতে অনুরোধ করেছিলাম।’
অবাক হয়ে একটা মুহূর্ত কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রবিন। বিড়বিড় করে বলল, ‘শিকারির ছাউনিতে মেটাল ডিটেক্টর…এ টাকা পানিতে ভাসে না -ক্যানারের মন্তব্য… বিলের কাছে সোনার মোহর…সব এখন খাপে খাপে বসে যাচ্ছে!’
নয়
‘একটা কথা ভেবে দেখো, কিশোর বলল। ‘এয়ারবোট নিয়ে পালানোর সময় ডাকাতরা যদি বুঝে গিয়ে থাকে ওদের পিছু নেয়া হয়েছে, কী করবে? মালসহ নিশ্চয় হাতেনাতে ধরা পড়তে চাইবে না। জলাভূমির পানিতে মোহরের বস্তা ফেলে দেয়াটা ওদের জন্যে নিরাপদ।’
‘কিন্তু তাহলে এত খোঁজাখুঁজি কেন?’ রবিনের প্রশ্ন। ‘পানিতে বস্তা ফেলে নিশানা রেখে গেলেই তো পরে সময়-সুযোগমত এসে তুলে নিতে পারত।’
‘আমার ধারণা, ওরা ঠেলে ফেলেনি,’ মুসা বলল। ‘ঝড়ের মধ্যে ওদের অজান্তে বোট থেকে পড়ে গেছে। আর তা-ই যদি হয়ে থাকে, এতবড় জলাভূমিতে খুঁজে বের করা খুব কঠিন।’
‘হ্যাঁ, সত্যিই কঠিন।’ নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার কিশোর। মুসার কথাটা ভেবে দেখল। তারপর বলল, ‘তারমানে বিল ওয়াটমোরের আসল পরিচয় জানে এমন কাউকে ওর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা দরকার।’ বাঙ্কহাউসের পিছন দিকে বসা তাস খেলুড়েদের দিকে তাকাল ও। রোডেও ভাঁড় ডিক টোম্যানকে চিনতে পারল। ভাঁড়ের মুখে এখন সাদা মেকআপ নেই, লাল রঙের বিশাল কানাওয়ালা হ্যাটও নেই।
‘মিস্টার টোম্যান?’ টেবিলের দিকে এগোল কিশোর। ‘খেলার মধ্যে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত। বিল ওয়াটমোরকে নিশ্চয় চেনেন আপনি?’
‘কোন বিল? যে কাল রোডেওতে প্রতিযোগিতা করল?’
‘হ্যাঁ।’
‘চিনি না। কালকেই দেখলাম। কেন?’
‘তার সম্পর্কে জানতে চাই।’
‘জানতে চাইলে বই দেখো।’
‘বই?’
‘রোডেও বুক। মিস্টার গিবসনের কাছে এক কপি আছে। ফ্লোরিডার সমস্ত রোডেও রাইডারদের নাম আর তথ্য ওই বইতে পাবে।’ হাতের তাসগুলো টেবিলে ছুঁড়ে ফেলল টোম্যান। ‘আমার রোডেওর সময় হয়ে গেল। যাই। মেকাপ নিতে হবে।’
টোম্যানকে ধন্যবাদ দিল কিশোর।
উঠে পাশের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল টোম্যান।
‘আমি মিস্টার গিবসনের কাছে বই দেখতে যাচ্ছি,’ কিশোর বলল। ‘তোমরা গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে চলে যাও। আমিও আসছি। রাস্টির খেলা মিস করতে রাজি নই।’
‘কিন্তু কিটিকে তো দেখলাম না কোথাও,’ রবিন বলল।
‘দেখা দিতে ভয় পাচ্ছে বোধহয়,’ মুসা বলল।
‘কিটি পাচ্ছে ভয়?’ হেসে মাথা নাড়ল রবিন। ‘ও ভয় পাওয়ার বান্দা নয়। আশেপাশেই আছে কোথাও। মুসা, তুমি গিয়ে ভাল জায়গায় আমাদের জন্য দুটো সিট রাখো। আমি কিটিকে খুঁজতে যাচ্ছি।’