হাসলেন বার্নার। ‘বলেছি। এক বন্ধুকে। আমার দুটো ঘোড়া বিক্রি করব। ওগুলোর জন্যে খদ্দের ঠিক করেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌছে যাবে ‘ওরা’ বলে ঘোড়াগুলোর কথা বুঝিয়েছি।’
‘আপনার বন্ধুর নাম কী?’
বার্নারকে বিব্রত হতে দেখে বাধা দিল হ্যারিস, ‘দেখো, মুসা, আমার অতিথিদের অভিযুক্ত করে কথা বলার কোন অধিকার তোমার নেই!’
হ্যারিসের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকাল মুসা। কড়া একটা জবাব দিতে যাচ্ছিল, এ সময় মেইন কেবিন থেকে বেরিয়ে এল টনি ওয়াকার। ‘হ্যারিস, রেডিওতে রাস্টি তোমাকে ডাকছে।’
হ্যারিসের সঙ্গে এল মুসা ও রবিন। রিসিভারের সুইচ অন করে হ্যারিস বলল, ‘রাস্টি, সত্যিই আপনার সঙ্গে কথা বলছি তো?’
‘আমি না, আমার ভূতের সঙ্গে বলছ,’ হেসে জবাব দিল রাস্টি। ‘ফ্রগ’স পেনিনসুলার পুলিশ স্টেশনে আছি আমি আর কিশোর। ভালই আছি। রবিনদেরকে চিন্তা করতে মানা কোরো।’
থাবা দিয়ে হ্যারিসের হাত থেকে রিসিভারটা কেড়ে নিল রবিন ‘কিশোর! কী হয়েছিল?’
‘স্যাবটাজ। আরেকটু হলেই গেছিলাম,’ রেডিওতে ভেসে এল কিশোরের কণ্ঠ। ‘প্লেনের তেলের লাইন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মরতে মরতে বেঁচেছি। ফিরে আসি। সামনাসামনি সব খুলে বলব।’
‘কিছু জেনেছ?’
জেনেছি। চমকে দেয়ার মত খবর। মরিস মরিসন এখানে অ্যালিগেইটরের খামারে চাকরি করত। ক্যাশবাক্স থেকে টাকা চুরি করার অপরাধে ওকে বের করে দিয়েছেন রাস্টির বন্ধু খামারের মালিক মিস্টার ব্রেক জনসন। খামার থেকে তাঁর সবচেয়ে বড় অ্যালিগেইটরটা ডিমসহ গায়েব হয়ে গেছে। রবিন, আমার ধারণা, গেইটর সোয়াম্পের অ্যালিগেইটরটা সেই চুরি যাওয়া অ্যালিগেইটর। খামার থেকে নিয়ে গিয়ে জলাভূমিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
‘কিশোর, আমাদের এখানেও খবর আছে। কিটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। তোমরা কখন আসছো?’
‘ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। গাড়িতে করে সোজা রোডেও গ্রাউন্ডে চলে যাব। হাইড্রোপ্লেনটা মেরামত করার দায়িত্ব নিয়েছেন মিস্টার জনসন। আগামীকাল তিনি নিজেই ফিশিং ক্যাম্পে পৌঁছে দেবেন বলেছেন।’
ঘড়ি দেখল রবিন। চারটে বেজে পাঁচ। ডেপুটি শেরিফ ক্যানারের সঙ্গে বিকেল পাঁচটায় রোডেও গ্রাউন্ডে দেখা করার কথা ওদের। খুব বেশি সময় নেই আর।
‘কিশোর, আমরাও যাচ্ছি। ওখানেই দেখা হবে।’
মুসাকে নিয়ে বাইরে বেরোল রবিন। কী যেন ভাবছে।
‘কী ভাবছ?’ জানতে চাইল মুসা।
‘মুসা, অ্যালিগেইটরের বাসাটা একবার ভাল করে দেখতে চাই।’
‘কী দেখবে?’
‘জানি না।‘
‘সময় পাবে?’
‘পাব। চলো, যাই।’
দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে রওনা হলো রবিন। যেখানে ওর ওপর হামলা চালিয়েছিল অ্যালিগেইটরটা সেখানে এসে দাঁড়াল। ঘাসের মধ্যে অ্যালিগেইটরের বাসাটা খুঁজে বের করল। বার্নারের মত করেই ঘাস সরিয়ে ভিতরে তাকাল। বাসার ওপর বিছানো মরাপাতা সরাল। ঘাসের মধ্যে মাটি দিয়ে লেপে বাসা বানানো হয়েছে। বাসাটা দেখতে অনেকটা গর্তের মত। মাটির দু’এক জায়গায় কমলা রঙের দাগ। গর্তের তলায় রয়েছে ডিমগুলো।
হাসি ছড়িয়ে পড়ল রবিনের মুখে। মুসার দিকে তাকাল। ‘বুঝলে?’
‘কিছুই না। আমি অ্যালিগেইটর বিশেষজ্ঞ নই।’
‘এটা বোঝার জন্যে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। ওই বাসা মানুষের তৈরি। গর্তের দেয়াল এত নিখুঁতভাবে মাটি দিয়ে লেপতে পারবে না অ্যালিগেইটর। তা ছাড়া দেয়ালে কমলা রঙের দাগ দেখতে পাচ্ছ?’
‘কী ওগুলো?’
‘মরচের দাগ! বেলচা থেকে লেগেছে। গর্ত বানানোর জন্যে বেলচা দিয়ে মাটি তোলা হয়েছিল।’
‘তারমানে ডিমগুলো সত্যি সত্যি অন্য কোনখান থেকে এনে রাখা হয়েছে?’
‘অন্য কোনখান থেকে নয়, বিগ সাইপ্রেস অ্যালিগেইটর ফার্ম থেকে।’
‘কিন্তু এতবড় জানোয়ারটাকে চুরি করে আনল কীভাবে এখানে?’
‘সেটাই তো বুঝতে পারছি না….’
বাঁয়ে ঘাসের মধ্যে খসখস শব্দ শুনে ফিরে তাকাল রবিন। বিশাল এক অ্যালিগেইটরের মাথা চোখে পড়ল। একটা চোখ একেবারে সাদা। ওই চোখ ওর পরিচিত
বাসার দিকে এগোচ্ছে অ্যালিগেইটর।
‘খাইছে! রবিন, পালাও!’ বলেই ঘুরে ডাঙার দিকে ছুটল মুসা।
আট
পানির কিনার থেকে বহুদূরে এসে থামল মুসা। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘আমরা কি অ্যালিগেইটরের পেটে চলে গেছি?’
‘এখনও যাইনি!’ হাঁপাচ্ছে রবিনও।
ফিশিং ক্যাম্পে পৌছল ওরা। পন্টুন বোটে করে চলে গেছে অতিথিরা। রবিন আর মুসাও দেরি না করে রওনা হলো। এয়ারবোটে করে সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে পৌঁছতে মাত্র পনেরো মিনিট লাগল।
আগের দিন খচ্চর সামলাতে কষ্ট হয়েছে মুসার, তাই আজ ওকে ঘোড়ায় চেপে যেতে বলল রবিন। রাজি হলো না মুসা। বলল, বুড়ো জনের ওপর ওর বিশেষ মায়া পড়ে গেছে। কথা না বাড়িয়ে একটা ঘোড়ার পিঠে চড়ে দ্বিতীয়টাকে টেনে নিয়ে এগোল রবিন। ফেরার সময় ঘোড়াটা কিশোরের প্রয়োজন হবে।
আগের দিনের চেয়ে বেশি লোক এসেছে আজ রোডেওতে। বারবিকিউ করা হয়েছিল যেখানে, সেই জায়গাটার কাছে পাওয়া গেল কিশোরকে।
‘ডেপুটি ক্যানার কোথায়?’ জানতে চাইল রবিন।
‘আমারও তো সেটাই প্রশ্ন!’ জবাব দিল কিশোর। ‘পাঁচটায় থাকার কথা। সাড়ে পাঁচটা বাজে।’
অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। শিকারির কেবিনে যাওয়ার কথা কিশোরকে জানাল রবিন। প্যাডল বোটের নীচে পাওয়া টর্চটার কথা বলল। কিটি ওয়াটারম্যানকে ওর সন্দেহ, সেটাও জানাল।