বার্নারের রেডিওটার কথা হ্যারিসকে জানাল রবিন।
পাত্তাই দিল না হ্যারিস। ‘এখানে অনেকের কাছেই ওরকম রেডিও আছে। জলাভূমিতে আমরা রেডিও ছাড়া অচল। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা। আমার কাছেও একটা আছে। তারমানে কি আমাকেও সন্দেহ করবে?’
এর কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না বুঝে চুপ হয়ে গেল রবিন।
মুসা অনুরোধ করল, ‘গতরাতে আমাদের বোট যেখানে ডুবেছিল, সেখানটা একটু হয়ে যেতে পারবেন? সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে যাওয়ার পথেই তো পড়ে।’
মুখটা গোমড়াই করে রাখল হ্যারিস, তবে ‘পারব না’ বলল না।
.
দিনের আলোয় জলাভূমিটাকে রাতের মত অত ভয়ঙ্কর লাগছে না। প্যাডল বোটটাকে পানিতে কাত হয়ে থাকতে দেখল রবিন ও মুসা। পানি কম এখানে। একটা কোণা পানির ওপর বেরিয়ে আছে।
‘ডিনের জিনিস, ওঁকে ফেরত দেয়া উচিত,’ রবিন বলল। পানিতে নামতে হতে পারে ভেবে সাঁতারের পোশাক পরেই এসেছে। তার ওপরে শার্টপ্যান্ট পরেছে। সেগুলো খুলতে শুরু করল।
‘সত্যিই তুমি নামবে ওখানে?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল হ্যারিস। ‘কে জানে ওই ঘোলা পানির নীচে কী আছে!’
‘যা-ই থাক, আমি নামব। আপনারা আমার ওপর চোখ রাখুন, না দেখলে জানাবেন, সঙ্গে সঙ্গে উঠে চলে আসব।’
পন্টুন বোটের গলুইয়ের কাছ দিয়ে পানিতে নেমে গেল রবিন। পানি কম। পায়ের পাতা সোজা করে দাঁড়ালে আঙুল দিয়ে তলার মাটি স্পর্শ করা যায়। ডুবে থাকা বোটটার কাছে এসে দাঁড়াল ও। ফাইবারগ্লাসে তৈরি খোলসের তলায় হাত বুলিয়ে দেখতে লাগল কিছু আছে কিনা। হঠাৎ বলে উঠল, ‘আরে, বোটের নীচে একটা বিরাট ফুটো!’
‘আমি তো আগেই বলেছি, অ্যালিগেইটরের কাজ,’ পন্টুন বোটে দাঁড়ানো হ্যারিস বলল। ‘থুতনি দিয়ে গুঁতো মেরেছে।’
‘থুতনি দিয়ে গুঁতো মেরে বোট ফুটো করেছে?’ বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা। ‘আসলে দাঁত দিয়ে কামড়ে বলতে চাইছেন। ‘
‘অ্যালিগেইটরের যে কি ক্ষমতা, তুমি জানো না…’
চেঁচিয়ে উঠল রবিন, ‘ফুটোর ভিতরে কী যেন আটকে রয়েছে। খুব শক্ত করে আটকানো।’
টানাটানি করে জিনিসটা খুলে নিয়ে এল ও। মুসার হাতে দিল। তারপর উঠে এল পন্টুন বোটে।
জিনিসটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুসা ও হ্যারিস। ‘এই হলো কাল রাতের ভুতুরে আলোর রহস্য,’ হাসিমুখে বলল রবিন।
জিনিসটা একটা হেভি-ডিউটি ওয়াটারপ্রুফ টর্চলাইট। গায়ে স্টিকার লাগানো। তাতে লেখা : প্রপার্টি অভ সোয়াম্পল্যান্ড গুডস।
সাত
সোয়াম্পল্যান্ড গুডস সরগরম। বিকেল বেলা রোডেও, তাই সকালটাই রোডেওতে আসা টুরিস্টদের কেনাকাটার সময়। রবিন আর মুসাকে দেখেই ভুরু কুঁচকে গেল ডিন ওয়াটারম্যানের। মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন। খরিদ্দারদের দিকে বেশি বেশি নজর দিতে লাগলেন। ছেলেরা বুঝল, ওদের এড়াতে চাইছেন তিনি
দোকানে যখন আর একজন খরিদ্দারও রইল না, কথা বলার সুযোগ পেল রবিন, ‘একটা এয়ারবোট ভাড়া করতে চাই।’
‘বোট নেই।’
কিন্তু কাউন্টারের পিছনের হুকে দুটো চাবি ঝুলতে দেখল রবিন। ‘কিছু হয়েছে, মিস্টার ওয়াটারম্যান?’
একটা মুহূর্ত রবিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন ওয়াটারম্যান। ‘তোমার বাপ-দাদার কবরের ওপর কেউ হাঁটাহাঁটি করলে, কবর মাড়ালে, কেমন লাগবে তোমার?’
ডিন কী বলতে চাইছেন বুঝে গেল রবিন। ‘ও, তাহলে কিটি এসে বলে গেছে টুইন সাইপ্রেস-কী’তে আটকা পড়েছিলাম আমরা?
‘আটকা পড়েছিলে? কিন্তু কিটি তো বলল সাঁতরে গিয়ে ওই দ্বীপে উঠেছ তোমরা। খোঁজাখুঁজি করেছ।’
‘ঠিক বলেনি।’
‘ওই দ্বীপটাতে আমার দাদার কবর। আমাদের কাছে দ্বীপটা মহাপবিত্র। কাল রাতে ওখানকার একটা সাইপ্রেস গাছে রাত কাটিয়েছ তোমরা।’
‘কাটানোর প্রয়োজন পড়ত না, যদি কিটি আমাদের প্যাডল বোটটা ডুবিয়ে না দিত!’ মুসা আর চুপ থাকতে পারল না।
দ্বিধায় পড়ে গেলেন ওয়াটারম্যান। ‘জাঙ্কইয়ার্ডে যেটা ফেলে রেখেছিলাম সেটার কথা বলছ?’
‘হ্যাঁ। না বলে নিয়েছি, সরি।’
‘কিটি ওরকম কাজ করবে না।’
‘তাহলে বোটের তলায় এটা এল কীভাবে?’ টর্চটা বের করে কাউন্টারে রাখল রবিন। ‘আটকে ছিল।’ টর্চে লাগানো লেবেলটা দেখাল ডিনকে।
‘গতকাল থেকেই টর্চটা খুঁজে পাচ্ছি না।’ চোয়াল ডললেন ওয়াটারম্যান। ‘মনে হচ্ছে কিটি আমাকে সব কথা বলেনি। ‘
‘ও এখন কোথায়?’ জানতে চাইল রবিন।
‘সকাল বেলা এসে কিছু জিনিসপত্র বেঁধেছেঁদে নিয়ে গেল। বলল, কয়েকদিন গেইটর সোয়াম্পে থাকবে। পাহারা দেবে। টুরিস্টরা ঘুরতে বেরিয়ে যাতে টুইন সাইপ্রেস-কী’তে উঠে পড়তে না পারে।’
‘কিটির সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভাল হতো। কোথায় পাওয়া যাবে ওকে?’
কী যেন ভাবলেন ওয়াটারম্যান। দ্বিধা করতে করতে শেষে বলেই ফেললেন, ‘গেইটর সোয়াম্পের পুব ধারে একটা পরিত্যক্ত শিকারির ছাউনিতে ক্যাম্প করে থাকে ও। ওখানে গেলে দেখা হতে পারে।’
‘যাব কীভাবে?’ মুসার প্রশ্ন।
‘বোটে করে।’ এতক্ষণে হাসি ফুটল ওয়াটারম্যানের মুখে। ‘অবশ্যই একটা বোট ভাড়া দেব তোমাদেরকে।’
পাঁচ মিনিট পর এয়ারবোটের চালকের আসনে দেখা গেল মুসাকে। কীভাবে চালাতে হয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওয়াটারম্যান।
ইগনিশন কী’তে মোচড় দিল মুসা। ঘুরতে আরম্ভ করল পিছনে লাগানো বিশাল ফ্যানটা। প্রবল বাতাসের চাপে বোটের পিছনের ঘাস প্রায় শুয়ে পড়ল পানির ওপর। ইঞ্জিনের প্রচণ্ড শব্দ সহ্য করতে না পেরে কানে হাতচাপা দিল রবিন।