‘ওখানে কী করছ তোমরা?’ হ্যারিস জিজ্ঞেস করল। ‘এদিকে দুশ্চিন্তায় পাগল হওয়ার জোগাড় আমাদের।’
‘আমাদের খুঁজে বের করলেন কী করে?’ মুসা জানতে চাইল।
‘ওখান থেকেই দেখলাম, গাছে বসে আছো, ছিপের মাথা দিয়ে একশো গজ দূরের দ্বীপটা দেখাল হ্যারিস। খুঁটির ওপর বসানো সারি সারি কেবিন।
‘ফিশিং ক্যাম্প?’ চেঁচিয়ে উঠল রবিন। ‘তারমানে টুইন সাইপ্রেস- কী-তে উঠেছি আমরা!
গাছ থেকে নেমে বোটে উঠল ছেলেরা।
একটা এরোপ্লেনের শব্দ কানে এল। ওদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল রাস্টির হাইড্রোপ্লেন।
‘ভোর থেকে তোমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে রাস্টি।’ বোটের ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে দিতে হ্যারিস বলল, ‘তোমরা ভাল আছো জানিয়ে ওকে নিশ্চিন্ত করা দরকার।’ প্লেনের উদ্দেশে হাত নাড়ল ও।
.
কেবিনে ফিরে প্রথমেই ভালমত সাবান দিয়ে ডলে গোসল করে নিল তিন গোয়েন্দা। শুকনো কাপড় পরল। মুখে, হাতে অজস্র মশার কামড়ের দাগ। শরীরের যেখানেই খোলা পেয়েছে, কামড়েছে।
‘খাইছে! মশা তো না, ড্রাকুলার খালাতো ভাই!’ লোশন লাগাতে লাগাতে বলল মুসা। ‘ঝাঁক বেঁধে এসে নিশ্চয় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।’
কেবিনের দরজা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিল রাস্টি। ‘যাক, ভালই আছো তাহলে।’
‘একে কি ভাল থাকা বলেন?’ মশার কামড় খাওয়া একটা হাত বাড়িয়ে দিল মুসা। অসংখ্য গোটার মত ফুলে উঠেছে কামড়গুলো।
হাসিমুখে ঘরে ঢুকল রাস্টি। গতকাল ও চলে আসার পর থেকে যা যা ঘটেছে সব খুলে বলল কিশোর। ওরা গোয়েন্দা, এটা শোনার পর বিল কীভাবে পালিয়েছিল, জানাল।
‘জলাভূমিতে যে রহস্যময় আলো দেখেছি, সেটার কথা বলবে না?’ ভুরু নাচাল মুসা।
রাস্টি শুনে বলল, ‘চোখের ভুল হতে পারে। ‘ঢেউয়ের মধ্যে চাঁদের আলোকেই অন্য আলো ভেবেছ। কিন্তু আমি ভাবছি অ্যালিগেইটরটার কথা। কাল রাতে তো তোমরা ওটার বাসার কাছে যাওনি। তাহলে হামলা করল কেন?’
‘নিশ্চয় ওটা কিটির পোষা অ্যালিগেইটর,’ মুসা বলল। ‘ওর কথা শোনে। কিটিই ওটাকে আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছিল।’
‘উঁহুঁ, আমি মানতে পারলাম না,’ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল রাস্টি। ‘এক কাজ করি। বিগ সাইপ্রেস সোয়াম্পে আমার এক বন্ধু আছে, সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ। অ্যালিগেইটরটার রহস্যময় আচরণের কারণ কেউ যদি জানাতে পারে, সে-ই পারবে।’
‘কথা বলতে হলে তো ওখানে যেতে হবে আপনাকে,’ রবিন বলল। ‘রোডেওর কী হবে? আজ রাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না?’
‘চলে আসব সময়মত।’
‘আমি যদি আপনার সাথে যাই, কোন অসুবিধে আছে?’ কিশোর বলল।
‘না, অসুবিধে কীসের? চলো।’
‘হাত গুটিয়ে বসে থাকার চেয়ে, আমি আর মুসা গিয়ে বরং যেখানে আমাদের প্যাডলবোট ডুবেছে সে-জায়গাটা দেখে আসি,’ রবিন বলল। ‘দিনের আলোয় দেখলে আসলে কী ঘটেছিল হয়তো বুঝতে পারব।’
‘হ্যাঁ, তা-ই করো,’ কিশোর বলল।
‘একটা বোট লাগবে,’ মুসা বলল। ‘সোয়াম্পল্যান্ড গুডস থেকে ভাড়া নিতে পারি।’
‘হ্যাঁ।’ পায়ের পেশি ডলল রবিন। ‘কাল রাতে প্যাডেল মারতে মারতে জীবন শেষ। জীবনে আর ওই গামলা চালাতে রাজি হবো না আমি।’
কেবিন থেকে একসঙ্গে বেরিয়ে এল চারজনে। হাইড্রোপ্লেনের দিকে এগোচ্ছে ওরা, এ সময় কফির মগ হাতে দৌড়ে এলেন গুজ বার্নার। ‘আবার নাকি তোমরা অ্যালিগেইটরের খপ্পরে পড়েছিলে?’
‘হ্যাঁ, সার,’ কনুইয়ের নীচে চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল মুসা। ‘একদল ড্রাকুলার খপ্পরেও পড়েছিলাম।’
বুঝতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন বার্নার।
‘বুঝলেন না, সার? মশা, মশা। রক্তচোষা ড্রাকুলার চেয়ে খারাপ। দেখুন না, হাতের কী অবস্থা করেছে।’
‘জলাভূমিতে বাইরে রাত কাটালে কী হয়, শিক্ষা তাহলে হয়েছে, ‘ তীক্ষ্ণ হলো বার্নারের কণ্ঠ।
স্থির দৃষ্টিতে ওঁর দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। সেটা লক্ষ নরম হলো বার্নারের চেহারার কঠোরতা। হাসি ফুটিয়ে বললেন, ‘আজ রাতে নিশ্চয় অ্যালিগেইটরটা ধরে ফেলতে পারবে মরিস। তখন সবাই আমরা নিরাপদ।’
মিস্টার মরিসন কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল রবিন। ‘কাল সারারাত তো বাইরেই কাটালাম। ওঁর ছায়াও দেখলাম না।’
‘হয়তো তোমাদের ওদিকটায় যায়নি। অন্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছে।’ রাস্টির দিকে তাকালেন বার্নার। ‘কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?’
‘বিগ সাইপ্রেস সোয়াম্প।’
‘ওখানে কী?’
‘অ্যালিগেইটরের খামার।’
মুহূর্তের জন্য বার্নারের মুখে ছায়া নামতে দেখল কিশোর। পরক্ষণে হাসিটা ফিরে এল। ঠিক আছে, যান। ভাল থাকবেন।’ হ্যাটের কানা দু’আঙুলে টিপে ধরে সামান্য মাথা নোয়ালেন তিনি, তারপর কেবিনের দিকে রওনা হলেন তিনি।
মিনিটখানেক পর আকাশে উঠল রাস্টির বিমান। উত্তর দিকে উড়ে গেল।
হ্যারিসের খোঁজে কেবিনগুলোর দিকে এগোল রবিন ও মুসা। বার্নারের কেবিনের জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কথা কানে আসতে থমকে দাঁড়াল রবিন। হাত ধরে টেনে থামাল মুসাকে। শর্টওয়েভ রেডিওতে কথা বলছেন বার্নার, ‘ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে ওরা।’
‘ঠিক আছে,’ জবাব শোনা গেল। ‘কী করা যায় দেখছি।’ স্পিকারের খড়খড় শব্দের কারণে কণ্ঠস্বরটা চেনা গেল না। রেডিওর সুইচ অফ করে দিলেন বার্নার।
দ্রুত জানালার কাছ থেকে সরে এল রবিন ও মুসা।
প্রধান কেবিনটায় পাওয়া গেল হ্যারিসকে। বড়শি মেরামত করছে। বলল, ট্রাউট মাছ ধরতে যাবে। রবিন ওদেরকে সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে দিয়ে আসার কথা বলায় মুখ গোমড়া করে ফেলল।