দমকা বাতাস দুলিয়ে দিল ক্যানুটাকে। আকাশে বাজের গুড়-গুড় শব্দ।
ঝড়ের মধ্যে নদীতে থাকা বিপজ্জনক, বলল কিশোর। আমাদেরকে তীরে ফিরতে হবে। এখুনি।
কিন্তু কীভাবে? বলল রবিন। পানিতে নামা যাবে না। পিরানহা, সাপ আর কুমির ধরবে।
এসময় তীক্ষ্ণ চিঙ্কার বাতাস চিরে দিল আবারও।
খাইছে! বানরটা আবার ফিরে এসেছে।
ওটা এখন লম্বা এক লাঠি তাক করেছে ক্যানুর দিকে।
মুসা ঝুঁকে বসল। বানরটা কি লাঠিটা ছুঁড়ে মারবে ওদের দিকে? বর্শার মত?
রবিন তড়াক করে দাঁড়িয়ে বানরটার মুখোমুখি হলো।
সাবধান! ওর কিন্তু মাথা খারাপ, সতর্ক করল মুসা।
কিন্তু বানরটা সরাসরি রবিনের দিকে চেয়ে রয়েছে। আর রবিন চেয়ে রয়েছে বানরটার দিকে।
দীর্ঘ দুমুহূর্ত বাদে, বানরটা যেন হেসে ফেলল।
রবিনও পাল্টা হাসল।
কী হচ্ছে এসব? কিশোরের জিজ্ঞাসা।
ও আমাদেরকে হেল্প করতে চায়, বলল রবিন।
কীভাবে করবে? প্রশ্ন করল কিশোর।
লম্বা লাঠিটা বাড়িয়ে দিল বানরটা।
অপর প্রান্ত চেপে ধরল মুসা।
বানরটা লাঠি ধরে টানছে। ক্যানু ভেসে যেতে লাগল ওর দিকে।
নদীর তীরে ক্যানুটা টেনে নিয়ে গেল বানরটা।
০৭.
তিন বন্ধু লাফিয়ে নেমে পড়ল ক্যানু থেকে।
বৃষ্টির তেজ বেড়েছে ইতোমধ্যে।
বানরটা বিদায় নিল। গাছ থেকে গাছে দোল খেয়ে, নদী তীর ধরে এগিয়ে চলল।
ডাক ছেড়ে তিন বন্ধুকে হাতছানি দিচ্ছে। আমাদেরকে ওর সাথে যেতে বলছে, বলল মুসা।
না! আমাদেরকে বিশেষ জিনিসটা খুঁজে বের করতে হবে। তারপর বাড়ি ফিরে যাব! বলল কিশোর।
ও আমাদের হেল্প করতে চায়! বলল রবিন। বানরটার পিছন পিছন দৌড় দিল।
রেইন ফরেস্টের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল ওরা দুজন।
রবিন! ডাকল কিশোর।
আকাশ কেঁপে উঠল বাজের শব্দে।
খাইছে! ও গেল কোথায়? বলল মুসা।
ওরা দুজন দৌড় দিল রবিন আর বানরটার পিছু পিছু। ঢুকে পড়ল অন্ধকার অরণ্যের ভিতরে।
বনভূমি আশ্চর্যজনকভাবে শুকনো।
মুখ তুলে চাইল কিশোর, এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু বৃক্ষশীর্ষ বিশাল
এক ছাতার মত কাজ করছে।
রবিন? ডাকল কিশোর।
কিশোর! মুসা! রবিনের কণ্ঠ।
তুমি কোথায়? মুসা গলা চড়িয়ে বলল।
এখানে!
ওর কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে তড়িঘড়ি এগোল কিশোর আর মুসা।
শীঘ্রি বানরটাকে খুঁজে পেল ওরা। দাঁত-মুখ খিচিয়ে ডাক ছেড়ে দোল খাচ্ছে গাছ থেকে।
বনের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে রবিন। বিড়ালছানার মত দেখতে খুদে এক জানোয়ারের সঙ্গে খেলা করছে।
খাইছে, এটা তো জাগুয়ারের বাচ্চা! বলে উঠল মুসা।
জাগুয়ার আমাজানের সবচাইতে বড় বাঘ।
ছানাটার থাবায় হাত বুলোচ্ছে রবিন। সোনালী পশম আর কালো ফুটি-ফুটি দাগ ওটার গায়ে।
বলো কী? বলে উঠল রবিন।
গররর! হঠাই ভয়ঙ্কর এক রক্তজমাট করা গর্জন উঠল।
পাঁই করে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।
এক গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে মা জাগুয়ার। মরা পাতার উপর দিয়ে পা টিপে টিপে এগোচ্ছে-সোজা রবিনকে লক্ষ্য করে।
নোড়ো না! ফিসফিস করে বলল কিশোর।
কাঠ-পুতুল হয়ে গেল রবিন। জাগুয়ারটা সন্তর্পণে এগোচ্ছে ওর দিকে।
খাইছে!
আচমকা গাছ থেকে সাঁ করে নেমে এল বানরটা। চেপে ধরল জাগুয়ারের লেজ!
বাঘটা গর্জে উঠে চরকির মতন ঘুরে দাঁড়াল।
রবিন লাফিয়ে উঠল।
বানরটা জাগুয়ারের লেজ ধরে আবারও টানল। এবার ছেড়ে দিয়ে পালাল।
জাগুয়ারটা লাফ দিল বানরটার পিছনে।
দৌড়াও, রবিন! চেঁচাল কিশোর।
রেইন ফরেস্ট ভেদ করে ছুটল তিন বন্ধু। জান নিয়ে পালাচ্ছে ওরা!
০৮.
দাঁড়াও–হাঁফাতে হাঁফাতে বলল কিশোর। মনে হয় বেঁচে গেছি।
থেমে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফিরে পেল তিন গোয়েন্দা। আমরা কোথায়? কিশোরের জিজ্ঞাসা।
বানরটা কই? বলে জঙ্গলের দিকে চাইল রবিন। জাগুয়ারটা কি ওকে ধরতে পেরেছে মনে কর?
না, বানররা খুব ফাস্ট হয়, বলল মুসা।
জাগুয়ারও খুব ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, ভাবল ও। কিন্তু এ কথা রবিনকে বলতে চায় না।
খোদা, ও যেন ভাল থাকে, বলল রবিন।
কিঁচ। রবিনের পকেটের ভিতর থেকে উঁকি দিল জেরি।
জেরি! তোর কথা তো ভুলেই গেছিলাম! বলে উঠল নথি। তুই ঠিক আছিস তো?
বড় বড় চোখ মেলে একদৃষ্টে রবিনের দিকে চেয়ে রইল ইঁদুরটা।
মনে হয় ভয় পেয়েছে, বলল মুসা। বেচারী।
বেচারী বানরটার যে কী হলো খোদাই জানে, বলল রবিন। জঙ্গলের চারধারে দৃষ্টি বুলিয়ে নিল।
বইটা দেখা যাক, বলল কিশোর।
বইটা টেনে বের করল ও। পাতা উল্টাল। সাহায্য খুঁজছে।
ভয়ঙ্কর এক প্রাণীর ছবি।
ভ্যাম্পায়ার বাদুড়-রক্তচোষা, বলল ও।
খাইছে! ছবির নীচের লেখাটা পড়ল কিশোর:
আমাজান রেইন ফরেস্টে ভ্যাম্পায়ার
বাদুড় বাস করে। রাতের বেলা নিঃশব্দে
শিকারকে কামড় দিয়ে রক্ত পান করে।
রাতের বেলা বেরোয়, বলল কিশোর।
তিন বন্ধু চারধারে দৃষ্টি বুলাল। বনভূমিতে আঁধার ঘনাচ্ছে।
আমাদের বাড়ি ফেরা উচিত, বলল রবিন।
কিশোর মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল।
কিন্তু আমাদের মিশনের কী হবে? প্রশ্ন করল মুসা। আর মরগ্যানের?
আমরা ফিরে আসব, বলল কিশোর। তৈরি হয়ে।
কাল এলে হয় না? রবিনের প্রশ্ন।
হয়। এখন বলো ট্রী হাউসটা কোন্ দিকে? বলল কিশোর।
এদিকে, বলে আঙুল তাক করল রবিন।
ওদিকে, উল্টো দিক দেখাল কিশোর।
পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল দুজনে।
আমরা হারিয়ে গেছি, বলল একসঙ্গে।
আমিও চিনতে পারছি না, বলল মুসা।
কিঁচ।
ভয় পাস না, জেরি, ইঁদুরটার গায়ে আলতো চাপড় মারতে শুরু করল রবিন। কিন্তু পরক্ষণে থেমে গেল।