উঠে বসলাম। আমি এখানে এলাম কীভাবে? ক্লাসে কথা বলতে যাচ্ছিলাম এটুকু মনে আছে।
কিশোর, এখন কেমন আছ বলো। আমার সাথে কথা বলো, বললেন মিসেস ডনেলি।
চোখ ঘষে ওঁর দিকে চাইলাম।
ভাল আছি।
পরস্পরের দিকে চেয়ে মৃদু হাসি বিনিময় করলেন ওঁরা।
গুড। তুমি এখন ঠিক হয়ে গেছ। ডক্টর রিচার্ডসন তোমাকে একটু পরীক্ষা করে দেখবেন।
কেন?
তেমন কিছু না। তোমার চোখ দুটোকে খানিকটা আউট অভ ফোকাস মনে হলো, তাই। বললেন ডাক্তার।
পেন্সিল লাইট দিয়ে আমার চোখ পরীক্ষা করলেন তিনি। তারপর মাথা নাড়লেন।
কোন সমস্যা নেই, বলে লাইট নিভালেন। একদম ঠিক আছ তুমি। দরজার দিকে পা বাড়ালেন। কোন সমস্যা হলে আমাকে জানিয়ে।
ঠিক আছে, ডক্টর রিচার্ডসন। একটা প্রশ্ন করতে পারি? জবাব চাইলাম।
নিশ্চয়ই।
লাইট সেনসিটিভিটি নামে কোন চোখের অসুখ আছে? যেজন্যে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরতে হয়?
আমার দিকে চাইলেন ডক্টর রিচার্ডসন।
খুবই বিরল এই রোগ। এসব ক্ষেত্রে আমরা স্পেশাল আই-ড্রপ দিই। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। এতে চোখের কষ্ট আরও বাড়বে। কেন জিজ্ঞেস করলে কথাটা?
একজনের কাছে শুনেছিলাম কিনা তাই, আসল কথা চেপে গেলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
তারমানে মার্ক তার চোখের রং পরিবর্তন বিষয়ে মিথ্যে কথা বলেছে। ওর বাদামী চোখ হালকা নীল হলো কীভাবে?
ড. রিচার্ডসন চলে গেলে উঠে দাঁড়ালাম আমি।
আমি বরং ক্লাসে ফিরে যাই, বললাম মিসেস ডনেলিকে।
কিশোর, ক্লাসে তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে, তার আগে অদ্ভুত এক, ঘটনা ঘটে, বললেন মিসেস ডনেলি।
অদ্ভুত? মনে করার চেষ্টা করলাম। মিসেস রবার্টস এটা টেপ করেছেন শোনো।
টেপ রেকর্ডারের বাটন টিপলেন তিনি। নিজের গলা শুনতে পেলাম। উদ্ভট সব কথা বলে চলেছি।
টেপ রেকর্ডার বন্ধ করলেন মিসেস ডনেলি।
কিশোর, তুমি ক্লাসে কথা বলছিলে।
মনে পড়েছে।
তোমার কী হয়েছিল বলো তো? অপ্রাসঙ্গিক কথা-বার্তা বলছিলে কেন? আমরা তো ভেবেছিলাম হাসপাতালে নিতে হবে তোমাকে।
তার দরকার নেই। আমি এখন ভাল আছি। কী হয়েছিল? আমার ধারণা এর সঙ্গে মার্ক জড়িত। আমি মরিয়ার মত আমার সন্দেহের কথা কাউকে বলতে চাইছি, কিন্তু কাকে বলব? কেউ তো বিশ্বাস করবে না।
কাজেই মিসেস ডনেলিকে বললাম, কাল অনেক রাত অবধি কাজ করেছি বলে ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়ি আমি, আবোল তাবোল বকতে থাকি।
ক্লাসরূমে ফিরে এলাম আমি। মুসা আর রবিন দৌড়ে এল আমার কাছে।
এখন কেমন লাগছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল রবিন।
খাইছে! যে ভয় পেয়েছিলাম! বলল মুসা।
আমি ভাল আছি, আশ্বস্ত করলাম ওদেরকে।
মিসেস রবার্টস আমাকে তার ডেস্কে ডেকে নিলেন।
তোমার রিপোর্ট আগামী সপ্তায় দিলেও চলবে। এখন চুপচাপ বসে থাকো। কোন টেনশন কোরো না।
টেনশন করব না! না করে উপায় আছে? মার্ক, কিংবা তাকে যে নিয়ন্ত্রণ করছে সে ক্রমেই পেয়ে বসছে আমাকে। আমার জীবনটা নরক বানিয়ে ছাড়ছে। ভাগ্যগুণে কিংবা মনের জোরে এখন পর্যন্ত অশুভ শক্তির হাত এড়াতে পেরেছি আমি। কিন্তু এভাবে কতদিন?
বাকি সময়টুকুতে অস্বাভাবিক আর কিছু ঘটল না। স্কুলের ঘণ্টা বাজলে বেরিয়ে এলাম আমরা। আজকের আবহাওয়াটা চমৎকার।
ক্যাম্পিঙের জন্যে আদর্শ ওয়েদার, বলল মার্ক।
আমি চুপ করে রইলাম। মুষলধারে বৃষ্টি নামলে খুশি হতাম। ওর সঙ্গে ক্যাম্পিঙে যেতে মোটেই ইচ্ছে করছে না আমার।
সোমবার দেখা হবে! বলল মুসা। ও আর ভুগি যার যার বাইসাইকেলে চাপল।
মুসা, তোমার সাইকেলটা একটু দেবে? দেশে আমি অনেক সাইকেল চালাই, সোৎসাহে বলে উঠল মার্ক।
নিশ্চয়ই, বলে সাইকেল থেকে নেমে পড়ে ওটা টেনে এগিয়ে দিল মুসা। মার্ক এক লাফে চড়ে বসল সিটে।
দারুণ, বলে ছোট চক্র কেটে ঘুরতে লাগল। হঠাৎই চোখ পড়ল আমার দিকে। ঝিকিয়ে উঠল ওর নীল চোখজোড়া। কিশোর, ডুগিরটায় তুমি চাপো। চলো, এক পাক ঘুরে আসি। ঢিবি পর্যন্ত রেস দিয়ে যাব। আবার ফিরে আসব।
স্কুলের মাঠে রেস দেয়া ঠিক হবে না, বললাম।
সেফ টিবি পর্যন্ত। আজকে শুক্রবার, কেউ কিছু মনে করবে না।
করতেও পারে।
কী, কিশোর, মার্কের সঙ্গে রেস দিতে ডরাচ্ছ নাকি? ডুগি বলল।
এসময় রবিন, ডুগি আর কয়েকটা ছেলে-মেয়ে ওখানে এসে হাজির হলো।
কী হয়েছে? রবিন প্রশ্ন করল।
মার্কের চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাচ্ছে কিশোর, ডুগি জানাল।
মোটেই না, দৃঢ় গলায় জানালাম। ডুগি, তোমার সাইকেলটা দাও। সাইকেলে চেপে ছোট করে দুচারপাক দিলাম। অভ্যস্ত হয়ে নিয়ে মাথা কঁকালাম মার্কের উদ্দেশে। আমি তৈরি। কেউ একজন কাউন্ট ডাউন করো।
আমি করছি, বলল মুসা। বাইকাররা, যার যার জায়গা নাও।
পাশাপাশি সাইকেল নিয়ে দাঁড়ালাম মার্ক আর আমি। আমাদের ঠিক সামনে, একশো গজ দূরে ঢিবি। আমরা সাইকেল রেস দিয়ে ওখানে যাব,
ঘুরব এবং ফিরে আসব শুরুর জায়গায়। যে আগে আসবে সে বিজয়ী।
অন ইয়োর মার্ক। গেট-সেট, বলল মুসা। বিরতি নিল। সবাই নীরব। মার্ক আমার দিকে চকিত চাউনি হানল। মনে হলো ওর চোখে মুহূর্তের জন্য কুয়াশা দেখলাম। যাও!
সবাই হৈ-হৈ করে উঠল। ছিটকে বেরিয়ে গেলাম মার্ক আর আমি। পাশাপাশি ছুটে চলেছে দুটো সাইকেল। প্রথমে সামান্য এগিয়ে গেলাম আমি, তারপর মার্ক, তারপর আবার আমি। এবার মার্ক নাগাল ধরে ফেলল।