জুলি চেঁচিয়ে উঠেছিল। মার্ক ওর হাতে একটা বাঁকা জিনিস তুলে দিচ্ছে। বুমেরাং। ছুঁড়ে দিলে আবার ফিরে আসে নিক্ষেপকারীর কাছে।
জুলি ছুঁড়ে দিল ওটা। একটু পরে, হাত বাড়িয়ে লুফে নিল।
সবাই হাততালি দিয়ে উঠল।
আগে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। এখন এটা স্রেফ একটা খেলা। এইমিং আর দূরত্ব বিচার করতে কাজে দেয় জিনিসটা, জানাল মার্ক।
সবাই ট্রাই করেছে, শুধু কিশোর বাদে, বলল শিনা। বুমেরাংটা কিশোরকে দাও।
জুলি আমার হাতে দিল জিনিসটা।
বাড়ির বাঁ দিকের এক কোনায় সরে এলাম। এখান থেকে বুমেরাংটা ছুঁড়ে দিলে সোজা আমার কাছেই ফিরে আসবে।
আমার হাত থেকে উড়ে গেল ওটা।
ফিরে আসবে, কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না, বলল মুসা।
আমরা সবাই চেয়ে রয়েছি যেদিকে ছুঁড়েছিলাম। কেউ টু শব্দটি করছে না।
কী হলো? প্রশ্ন করল রবিন। আমার দিকে চাইল।
হঠাৎই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল ওর।
কিশোর! চেঁচিয়ে উঠল ও। পরমুহূর্তে ডাইভ দিয়ে আমাকে পেড়ে ফেলল। দুজনে ছিটকে পড়লাম মাটিতে।
৮
চিতিয়ে পড়েছি আমি।
কী, ব্যাপারটা কী? চেঁচিয়ে উঠলাম।
ওই দেখো, তোমার পিছনে! তর্জনী তাক করে বলল রবিন। পিছু ফিরে চাইলাম। বুমেরাংটা উড়ে এসে আমার পিছনে মাটিতে পড়েছে। মাত্র কফিট দূরে।
যেদিকে ছুঁড়েছিলাম তার উল্টো দিক থেকে এসেছে ওটা!
উঠে দাঁড়ালাম। ঝুঁকে পড়ে তুলে নিলাম জিনিসটা।
খাইছে, এটা কী হলো? ছুঁড়লে একদিকে, এল আরেক দিক থেকে! বলে উঠল মুসা।
রবিন আমাকে সময় মত পেড়ে না ফেললে সোজা আমার মাথার পিছনে এসে লাগত, বললাম।
সরি, মেট, বলে বুমেরাংটা আমার হাত থেকে নিল মার্ক, প্যান্টে মুছল। এটার এভাবে কাজ করার কথা নয়। তোমার দিনটাই খারাপ।
আজকের দিনটা আমার শেষ দিন হতে পারত। আমি মারা যেতে পারতাম।
তা হলে আজকের দিনটা তোমার জন্যে শুভ। এতগুলো খারাপ ঘটনা ঘটল, অথচ তোমার কিছুই হলো না, মৃদু হেসে বলল মার্ক।
এরপর আর খেলা চলে না। আমরা ভিতরে গেলাম ভিডিও দেখতে। আলাস্কার বনভূমি রক্ষার উপর এক ডকুমেন্টারি। কোডিয়াক ভালুক, ঈগল, পর্বতমালা এসব নিয়ে তোলা ছবি, আমার যেগুলো ভাল লাগে।
আমার মাথার মধ্যে অবশ্য ঘুরপাক খাচ্ছে দুর্ঘটনাগুলোর কথা। ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ঘটনাগুলো। আমি নিজেকে মোটেই ভাগ্যবান ভাবতে পারছি না।
ভিডিও দেখা হয়ে গেলে আমি আর মার্ক বাড়ির পথ ধরলাম।
মার্ক, ব্যাপারটা কাকতালীয় হতে পারে, ওর দিকে চেয়ে বললাম, কিন্তু যতবারই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে তুমি আশপাশে ছিলে, প্রতিবারই।
মার্ক শ্রাগ করে মুচকি হাসল।
এভাবে ভাববো না কেন, মেট, আমাদের সবার জীবনেই দুর্ঘটনা ঘটে, তোমার বেলায় সবগুলো হয়তো একদিনেই ঘটে শেষ হয়ে গেছে।
হতে পারে। বললাম বটে, তবে আত্মবিশ্বাসী হতে পারলাম না।
বাড়ি ফিরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উপরে চলে এলাম। মার্ক চাচা-চাচীর সঙ্গে টিভি দেখতে বসল। দরজাটা স্বাভাবিকভাবেই খুলল এবং এয়ার কণ্ডিশনারটাকে নীরবে জানালায় বসে থাকতে দেখে স্বস্তি বোধ করলাম।
দরজা বন্ধ করে ডেস্কে বসলাম। বইটা খুলে পড়তে লাগলাম। মাঝে মধ্যে নোট নিচ্ছি।
প্রায় দুঘণ্টা পর কাজটা শেষ হলো। হাই উঠছে। ঘুমানোর সময় হলো। পায়জামা পরে হলওয়েতে বেরিয়ে এলাম।
অন্ধকার। চাচা-চাচীর বেডরুমের পাশ কাটালাম। দরজা বন্ধ। কোন সাড়া-শব্দ নেই। তারমানে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বাথরূমে গিয়ে বাতি জ্বালোম। তারপর পানির দুটো ফসেটই অন করলাম। এবার সতর্ক আমি। পরখ করে দেখলাম। ঠিকমতই কাজ করছে।
একটু পরে, দাঁত ব্রাশ করতে শুরু করলাম। আয়নায় চোখ পড়তেই বুঝলাম মুখের চেহারায় সারাদিনের দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে।
ব্রাশ করা হয়ে গেলে বাথরূমের বাতি অফ করে দিলাম। হাঁটা দিলাম আমার কামরার উদ্দেশে। হঠাই থমকে দাঁড়ালাম। মনে হলো একটা শব্দ শুনেছি। নীচে থেকে আসছে। নিচু, চাপা এক শব্দ। এবাড়িতে এরকম আওয়াজ আগে কখনও পাইনি।
সাবধানে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে চাইলাম। চাচা-চাচীর ঘর আবারও পার হয়ে এলাম। এখনও নিস্তব্ধ।
সিঁড়ি ভেঙে ধীরেসুস্থে নামতে লাগলাম। মেইন ফ্লোরে এসে দাঁড়িয়েছি। শব্দটা জোরাল হয়েছে, নীচ থেকে আসছে। মার্ক যে তলায় থাকে সেখান থেকে!
ওর ঘরের উদ্দেশে নেমে যাচ্ছি। ডানদিকে, সিঁড়ির গোড়ায় বন্ধ দরজাটা দেখতে পাচ্ছি। তলা দিয়ে আলো চুঁইয়ে বেরোচ্ছে। মার্ক জেগে আছে এখনও। কথা বলছে কারও সঙ্গে। কেননা দুজনের গলা শুনতে পাচ্ছি!
পা টিপে টিপে নেমে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালাম। দরজায় কান পাতলাম।
তুমি ঠিকমতই কাজ করছ, চাপা এক কণ্ঠস্বর বলল। কিন্তু আজকে মাত্র প্রথম দিন। আমার আরও অনেক বড় প্ল্যান আছে।
না! মার্ক জবাবে বলল। আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই না!
আমি যা বলব তুমি তাই করবে, হিসিয়ে উঠল অপর কণ্ঠটা। আমি তোমার বস, তুমি আমার বশ।
না, আমাকে আমার মত থাকতে দিন, প্লিজ!
সময় আসুক তোমাকে ছেড়ে দেব। শীঘি। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত তোমার দেহ, তোমার আত্মা সব আমার। হেসে উঠল অচেনা কণ্ঠটা।
না, আমি আপনাকে চান্স দেব না!
তুমি নিরুপায়, বলল কণ্ঠটা।
না! চেঁচিয়ে উঠল মার্ক। মনে হলো সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। ও। ডোরনবে হাত রেখে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লাম।
৯
মার্ক বিছানায় শুয়ে ছিল। মুহূর্তের জন্য মনে হলো ধোঁয়ার এক কুণ্ডলী দেখলাম, ওর ঠিক মাথার কাছে। কিন্তু চোখের পলকে মিলিয়ে গেল ওটা। মনে হলো মিশে গেল মার্কের শরীরের ভিতরে!