মনে হচ্ছে বাড়িতে নতুন একজন ফুটবল স্টার পাওয়া গেল, বলল। চাচী। খাওয়া শেষে ডেজার্ট নিয়ে এল।
আমার আর সহ্য হলো না।
আমি যাই, অনেক হোমওয়র্ক আছে, বলে উঠে পড়লাম।
তাই? মিসেস রবার্টস তো বললেন ফুটবল ম্যাচের জন্যে আজকে হোমওয়র্ক দেবেন না, বলল মার্ক।
আমার আসলে বাড়তি কাজ আছে। বুক রিপোর্ট করার কথা ছিল গত সপ্তাহে, করিনি। আগামীকাল জমা দেওয়ার তারিখ।
ঠিক আছে, তুই হোমওয়র্ক কর। মার্ক দেখুক আমেরিকান টিভির প্রোগ্রাম ভাল লাগে কিনা, চাচী বলল।
উপরে, নিজের রূমে চলে এলাম। বাতি জ্বেলে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
ঘরের ভিতরটা গুমোট লাগছে। খুদে এয়ারকণ্ডিশনারটা চালু করে দিলাম।
বই খুলে পড়তে শুরু করলাম। এটা আমেরিকার বিপ্লবের উপরে লেখা এক ইতিহাস বই। বেশ মজে গেছি। হঠাই অনুভব করলাম দরদর করে ঘামছি আমি। এয়ারকণ্ডিশনারটার দিকে চাইলাম। কাজ করছে তো? শব্দ তো ঠিকই শুনতে পাচ্ছি।
উঠে গেলাম জানালার কাছে। যন্ত্রটায় হাত দিয়ে দেখলাম গরম বাতাস বেরোচ্ছে।
হচ্ছেটা কী এখানে? চেঁচিয়ে উঠে লকটা বন্ধ করে দিলাম। এবার আরও বেশি গরম হাওয়া ছাড়তে লাগল যন্ত্রটা।
দম আটকে আসছে! ঘামে জবজব করছে শরীর। এবার মাথায় ঘাই মারল চিন্তাটা, আজকে সব কিছুই উল্টো হচ্ছে। অফ দিলে যদি আরও গরম হয়ে ওঠে, তবে হাই করে দিলে নিশ্চয়ই বন্ধ হয়ে যাবে।
নবটা ডানে মোচড় দিলাম। নড়ল না! অফ-এ আটকে আছে। তপ্ত বাতাসের হলকা পুড়িয়ে দিচ্ছে আমাকে।
আমার সাহায্য দরকার। চাচাকে ডাকব ঠিক করলাম। ভারি; গরম বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, টলতে টলতে দরজার দিকে এগোলাম। ডোরনবে হাত রেখে, ডান দিকে মুচড়ে ঠেলা দিলাম।
কিছুই ঘটল না! আরও জোরে ধাক্কা দিলাম। খুলল না। অসম্ভব কাণ্ড! আমার বেডরূমের দরজায় লক নেই। তা হলে খুলছে না। কেন?
এদিকে, গরম বাতাস ক্রমেই দুর্বল করে ফেলছে আমাকে
বাঁচাও! চেঁচিয়ে উঠলাম। দুমাদুম কিল মারলাম দরজায়। আমাকে এখান থেকে বের করো! চাচা-চাচী, বাঁচাও! তারস্বরে চেঁচাচ্ছি, তপ্ত বাতাসে ভরে উঠছে ঘরটা।
৭
জ্ঞান হারিয়ে ফেলার দশা আমার। হঠাৎই দরজার বাইরে চাচার কণ্ঠ শুনলাম।
কিশোর! কিশোর! নবটা ছেড়ে দে! চেঁচিয়ে বলল।
আমি তো ধরে রাখিনি, দুর্বল কণ্ঠে জবাব দিলাম।
দরজাটা খোলার জন্যে টানছি, কিন্তু খুলছে না! চাচা চেঁচাল।
আমার ঘরের দরজা বাইরে থেকে টানলে কিংবা ভিতর থেকে ঠেললে খোলে।
চোখ মেলোম, কপাল থেকে ঝরে পড়ল ঘাম। পেয়েছি! চাচা, দরজার কাছ থেকে সরে যাও! চেঁচালাম।
ডোরনব ধরে টানলাম। খুলে গেল দরজা। টলতে টলতে বেরিয়ে এলাম হলওয়েতে। চাচা-চাচী চেপে ধরল আমাকে।
কিশোর, কী হয়েছিল? প্রশ্ন করল চাচী। চোখজোড়া আতঙ্কে বিস্ফারিত।
হাঁফানোর ফাঁকে আমার কামরার দিকে তর্জনী নির্দেশ করলাম। খুলে বললাম সব কথা। এয়ারকণ্ডিশনার থেকে কীভাবে গরম বাতাস বেরোচ্ছিল, দরজা কীভাবে আটকে যায়।
কিচেনে চল। তোর একটা ঠাণ্ডা ড্রিঙ্ক দরকার, বলল চাচী।
বেসমেন্টে গিয়ে এয়ারকণ্ডিশনিং ইউনিটটাকে বন্ধ করে দিচ্ছি, চাচা বলল। কালকে পানির ফসেটের সঙ্গে এটাও চেক করিয়ে নেব। সব কটার মধ্যে হয়তো সম্পর্ক আছে। কোথাও নিশ্চয়ই তার ওলট পালট হয়ে গেছে।
কিন্তু দরজার অ্যাকশন উল্টে গেল কীভাবে? ওর সাথে তো তারের কোন সম্পর্ক নেই, বললাম সন্দেহের সুরে।
চাচা দরজাটা এক পলক দেখে নিয়ে কাধ ঝাঁকাল।
বাড়িটা পুরানো। কজাগুলোয় হয়তো জং ধরে গেছে।
একটু পরে, কিচেনে বসে চাচীর বানানো ঠাণ্ডা লেমোনেড়ে চুমুক দিতে লাগলাম।
এখন কেমন লাগছে, বাপ? চাচীর প্রশ্ন।
অনেকটাই ভাল। চাচী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় অনেক উল্টোপাল্টা কাণ্ড ঘটেছে, যার কোন ব্যাখ্যা নেই, বললাম।
নিশ্চয়ই আছে। একটু অপেক্ষা করলেই জানা যাবে।
চাচা বেসমেন্ট থেকে ফিরে কিচেনে এসে ঢুকল।
কিশোরের রূমের কানেকশন অফ করে দিলাম। কালকে মিস্ত্রি ডাকব।
মাথা ঝাঁকালাম। লেমোনেড শেষ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। হঠাৎ করেই ভাল লাগতে লাগল, সব যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মার্ক আসার পর থেকে এই বোধটারই অভাব অনুভব করছিলাম।
মার্ক!
চেয়ারে সিধে হয়ে বসে চারধারে নজর বুলালাম।
মার্ক কোথায়?
ও বাইরে গেছে, বলে আরও খানিকটা লেমোনেড ঢেলে দিল চাচী।
বাইরে? কোথায়?
রবিন এসেছিল তোদেরকে ডাকতে। ওর বাবা নতুন এক নেচার ভিডিও এনেছেন সেটা দেখাতে। তুই তখন হোমওয়র্ক করছিলি, তাই মার্ক একাই গেছে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফিরবে।
কিশোর, কোথায় যাচ্ছিস? চাচা আমাকে দরজার দিকে পা বাড়াতে দেখে জিজ্ঞেস করল।
ভিডিওটা দেখতে চাই আমি, বলে বেরিয়ে এলাম।
দ্রুত হাঁটছি।
একটু পরে, রবিনের বাসার সামনে চলে এলাম। পড়ন্ত বিকেল, রবিনের বাবা-মা সামনের লনে গার্ডেনিং করছিলেন।
হাই, আঙ্কল, আন্টি, চেঁচিয়ে বললাম।
আরে, কিশোর যে, বললেন মিসেস মিলফোর্ড। তোমার বন্ধুরা পিছনে আছে, মার্কের আনা কী একটা খেলা খেলছে।
খেলা? মার্কের আনা? সেটা আবার কী? বললাম মনে মনে।
মার্ক ছেলেটা সত্যিই ভাল, বললেন মি. মিলফোর্ড। আর নাকি খুব ভাল ফুটবল খেলে।
মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালাম। এবার বাড়ির পিছনের উদ্দেশে পা বাড়ালাম।
আমার পালা! আমার পালা। একটি মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পেলাম। পিছনে এসে দেখি রবিন, মুসা, জুলি আর শিনা। সঙ্গে মার্কও রয়েছে।