সামনের দিকে বসা যাবে না? জিজ্ঞেস করল মার্ক।
নিশ্চয়ই যাবে, জানাল মুসা। পায়ে ব্যথা, তাই চলে গেল ও।
ভাল খেলা চাই কিন্তু, মেট, আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল মার্ক। সবার শুভ কামনা নিয়ে জার্সি পরতে গেলাম আমি।
একটু পরে, সহ খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে নামলাম। দর্শক সারির সামনের দিকে বসেছে আমার ক্লাসমেটরা। রবিন আর মুসার মাঝখানে মার্ক বসা। সবাই হাত নাড়ছে, চিৎকার করে উৎসাহ যোগাচ্ছে–শুধু মার্ক বাদে। হয়তো এটা ওর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা, ভাবলাম, তাই ও জানে না কী করতে হবে।
দুদল তৈরি। এখুনি খেলা শুরু হবে। রেফারি বাঁশি বাজালেন।
সেন্টার করেছে লায়নরা। দ্রুতগতিতে বল দেওয়া-নেওয়া করে। আমাদের গোলের দিকে এগিয়ে আসছে ওরা। আমি এগিয়ে গেলাম বাধা দিতে। প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগতেই পড়ে গেল সে। রেফারির বাঁশি বেজে উঠল। ফাউল। পেনাল্টি। খেলা শুরু হতে না হতেই পিছিয়ে পড়লাম আমরা ০-১ গোলে। দুই মিনিট পর আমাকে তুলে নেওয়া হলো মাঠ থেকে। অবাক কাণ্ড! সাইডলাইনে দেখি জার্সি পরে মার্ক দাঁড়িয়ে। আমার বদলে মাঠে ঢুকল ও।
তোমাকে আজকে নামানোই উচিত হয়নি, বললেন কোচ। মার্ক ছেলেটা কেমন খেলে দেখি। অস্ট্রেলিয়াতে ও নাকি ডিফেন্সে খেলে। লাঞ্চের সময় আমাকে গিয়ে বলেছে দরকার পড়লে ওকে যাতে নামাই।
বোকা হয়ে গেলাম আমি! বেঞ্চে বসে মার্ককে আমার জায়গা নিতে দেখলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে কোন কুক্ষণে ওভাবে ফাউল করতে গেলাম। অথচ আমি দলের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য ডিফেণ্ডার। না, মার্ক ছেলেটা আসার পর থেকে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রথমে ঠাণ্ডা-গরম পানির ব্যাপারটা ঘটল, তারপর গাড়ি চাপা পড়তে যাচ্ছিলাম। আর এখন খেলার শুরুতেই পেনাল্টি দিয়ে বসলাম। এসব হচ্ছেটা কী?
৫
খেলা শেষ। ০-১ গোলে হেরেছে রকি-বীচ। সব দোষ আমার। মার্ক আমার বদলি হিসেবে নামার পর আর গোল হয়নি। দুর্দান্ত খেলেছে ও।
লকার রূমে চটপট তৈরি হয়ে নিলাম। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না। সবাই ঘিরে ধরেছে মার্ককে, বাহবা দিচ্ছে। হঠাৎ করেই দলের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলোয়াড় হয়ে গেছে ও!
বাইরে বেরিয়ে এলাম। মুসা আর রবিন অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।
ব্যাড লাক, কিশোর। ফাউলটা না করলেও পারতে, বলল মুসা।
আমিও ফাউল করতে চাইনি। কী থেকে কী হয়ে গেল। আমি ব্যাপারটা ভুলে যেতে চাই।
খেলা তো আরও আছে, অত চিন্তা করছ কেন, আমার পিঠ চাপড়ে দিল রবিন।
কিন্তু মার্ক কী খেলাটাই না খেলল। একাই সব আক্রমণ রুখে দিল, ওকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন চীনের প্রাচীর, বলল মুসা।
ধন্যবাদ, মুসা, বলল মার্ক, এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে লকার রূম থেকে। মুখে চওড়া হাসি, নীল চোখ ঝলকাচ্ছে।
পরের ম্যাচে কোচ হয়তো তোমাকেই প্রথম এগারোয় নামাবেন, বলল রবিন।
আমার তা মনে হয় না। কিশোরই খেলবে। আমি তো বদলি হিসেবে খেলছিলাম, জানাল মার্ক।
চলো, বাড়ি ফিরি, মার্কের উদ্দেশে বললাম।
চলো, মেট, জবাব দিল মার্ক। বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম আমরা। তোমার বন্ধুগুলো খুব ভাল, একটু পরে বলল মার্ক।
হ্যাঁ, তোমাকে ওদের ভাল লেগেছে, একটু কি ধারাল শোনাল। আমার কণ্ঠ? ঝট করে আমার দিকে চাইল ও।
দেখো, কিশোর, আমি কিন্তু নিজের ইচ্ছায় মাঠে নামিনি। কোচ চেয়েছেন বলেই, বলল ও।
বাসার কাছের মোড়ের উদ্দেশে এগোচ্ছি আমরা।
আমি এর আগে কোনদিন পেনাল্টি দিইনি। তা ছাড়া ওটা এমন। কোন বিপজ্জনক আক্রমণ ছিল না যে গোল হতে পারত, বললাম।
সবুজ বাতি জ্বলে উঠল, কার্ব থেকে নেমে রাস্তা পেরোতে লাগলাম। আমি।
পঞ্চাশটার উপরে ম্যাচ খেলেছি। এরকম ভুল আগে কখনও করিনি।
হঠাৎই এক গাড়ির হর্ন যেন কানের পর্দা ফাটিয়ে দিল। ঘুরে চাইলাম। একটা গাড়ি ছুটে আসছে। রাস্তা থেকে সরার উপায় নেই। চাপা দেবে আমাকে!
৬
গাড়িটা এক পাশে কেটে তীক্ষ্ণ শব্দে থেমে দাঁড়াল। মাত্র ফুটখানেকের জন্য ধাক্কা লাগেনি।
অ্যাই, তুমি বাতি না দেখে রাস্তা পেরোচ্ছিলে কেন? বলল ড্রাইভার। ভাগ্যিস তোমাকে দেখতে পেয়েছিলাম!
কী বলছেন আপনি? আমি বিস্মিত। সবুজ আলো দেখেই তো রাস্তা। পেরোচ্ছিলাম। দূরে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক লাইটটা দেখলাম।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না! লাল! একটু আগেই তো সবুজ দেখলাম। ঘুরে চাইলাম মার্কের দিকে। তখনও কার্বে দাঁড়িয়ে ও। এবার দৌড়ে এল আমার কাছে।
কিশোর, তুমি ঠিক আছ তো?
হ্যাঁ, বললাম। যদিও ভিতরে ভিতরে রীতিমত কাঁপছি। একই দিনে দুবার গাড়ি চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছি কপাল গুণে।
এখন থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চোলো, বলে গাড়ি স্টার্ট করল ড্রাইভার।
মার্ক আর আমি হেঁটে চললাম বাড়ির উদ্দেশে।
তোমাকে অনেকবার ডেকেছি, তুমি শুনতে পাওনি।
আমি কিন্তু বাতি সবুজ দেখেই কার্ব থেকে নেমেছিলাম।
তুমি ভেবেছ সবুজ।
তার মানে?
তুমি আপসেট আছ, মেট। সেজন্যে উল্টোপাল্টা ভাবছ। এটা অস্বাভাবিক না। সবারই কখনও না কখনও এমন হয়।
ওর সঙ্গে তর্ক করলাম না। কিন্তু আমি জানি বাতিটা তখন সবুজই ছিল। হঠাৎ করে ব্যাখ্যাতীত ভাবে লাল হয়ে গেছে।
ডিনারে বসে চাচা-চাচীকে এসব অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে হবে বলে উদ্বেগ বোধ করলাম। বৃথা চিন্তা। আমাকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার কথা শুনে দুঃখ পেল তারা। কিন্তু মার্ক বদলী হিসেবে নেমে দুর্দান্ত খেলাতে যারপর নাই খুশি হলো। মার্ককে নিয়ে রীতিমত মেতে উঠল চাচা-চাচী!