দেখি তো, বলে গরম পানির ফসেট চালু করলাম। আঙুল বাড়ালাম। বরফ শীতল পানি! উল্টে গেছে, বললাম। ঠাণ্ডার জায়গায়
গরম আর গরমের জায়গায় ঠাণ্ডা।
ঠাণ্ডা পানিতে একটা ন্যাপকিন ভিজিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরলাম।
বাড়ির নীচে পানির পাইপে মনে হয় কোন গণ্ডগোল হয়েছে। মিস্ত্রি ডাকতে হবে, বলল চাচা।
পুরোটা সময় মার্ক কোন কথা বলেনি। আমার দিকে ম্লান নীল চোখজোড়া মেলে চেয়ে ছিল শুধু। ভঙ্গিটা এমন যেন সম্মোহিত অবস্থায় রয়েছে।
আমাদের দেশেও এসব ছোটখাট মিক্স-আপ ঘটে, বলল ও।
চাচা-চাচী হেসে উঠল। আমি হাসলাম না। মুখের ভিতরটা এখনও ফুলে আছে।
একটু পরে মার্ককে নিয়ে স্কুলের পথ ধরলাম।
হাঁটার ফাঁকে ওর দিকে এক ঝলক চাইলাম। মনে পড়ে গেল কাল রাতে কোন ব্যাপারটা আমাকে অবাক করেছিল।
মার্ক, আমি একটা কথা ভাবছিলাম, বললাম। তুমি অস্ট্রেলিয়া। থেকে আমাদের কাছে যে ফটোটা পাঠিয়েছ, সেটায় তোমার চোখের মণি গাঢ় বাদামি ছিল। কিন্তু আসলে তোমার চোখ হালকা নীল। ব্যাপারটা কী?
মার্ক নিশ্চপ। শেষমেশ আমার দিকে চাইল।
ও, এই কথা? আমি তখন ডার্ক কনট্যাক্ট লেন্স পড়তাম। তারপরে চোখের সমস্যা সেরে গেল, ফলে আর পরার দরকার পড়েনি।
ও, কী হয়েছিল চোখে? আলো সহ্য হত না, বলল মার্ক। লাইট সেনসিটিভিটি।
ব্যাপারটা ভাল বুঝলাম না। তবে, ও নিয়ে আর কথা বাড়ালাম না। স্কুলের কাছাকাছি এসে গেছি।
ওই দেখো, গাড়ি থেকে নামছে রবিন মিলফোর্ড। ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন।
রবিন গাড়ি থেকে নেমে মাকে হাত নেড়ে বিদায় জানাল। আন্টি পাল্টা হেসে হাত নাড়লেন। রবিন সাইডওয়কে পা রাখলে, মিসেস মিলফোর্ড রাস্তায় ট্রাফিক আছে কিনা দেখে নিলেন! ফাঁকা। আমি মিসেস মিলফোর্ডের গাড়ির পিছন দিয়ে সাইডওয়কের উদ্দেশে এগোলাম। গাড়িটা তখন সামনের দিকে চুলতে শুরু করেছে।
অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিলেন মিসেস মিলফোর্ড।
কিশোর, সাবধান! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। মুখ তুলে চাইলাম। শেষ মুহূর্তে দেখতে পেলাম গাড়িটা ব্যাক করে সোজা আমার দিকে ধেয়ে আসছে!
৪
এক লাফে সরে গেলাম সাইডওয়কের দিকে। সিমেন্টে পড়ে এক গড়ান। দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম ঝটপট। পতনের ফলে সামান্য ব্যথা পেলেও, গাড়ির ধাক্কা থেকে তো বেঁচেছি।
মিসেস মিলফোর্ড ব্রেক চেপে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলেন।
কী হলো কিছুই বুঝলাম না, বিস্মিত কণ্ঠে বললেন তিনি। ফরওয়ার্ড গিয়ার দিয়ে অ্যাক্সিলারেটর চাপলাম, কিন্তু কী কারণে কে জানে গাড়ি গেল পিছন দিকে।
পিছনে আনার চেষ্টা করে দেখুন কী হয়, বাতলে দিলাম।
ঠিক আছে, বলে এঞ্জিন চালু করলেন আবার, ব্যাকগিয়ার দিলেন, গাড়ি এগোল সামনের দিকে! অদ্ভুত কাণ্ড! গিয়ার উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে!
আগে তো কখনোই এরকম হয়নি, মন্তব্য করল রবিন।
আজকে সব কিছুই উল্টে গেছে, বললাম।
তোমার জন্যে আজকের দিনটা অপয়া, কিশোর, বলে হেসে উঠল মার্ক।
রবিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম ওর। এরপর বেল বাজলে। আমরা ক্লাসে গিয়ে ঢুকলাম।
রোল কলের পর মিসেস রবার্টস মার্ককে ডেকে নিলেন। জানালেন, মার্ক বদলি ছাত্র হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে, আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকছে।
হাই ইয়া, মেটস! মার্ক চেঁচিয়ে বলল।
হাই, মার্ক! পাল্টা সম্ভাষণ জানানো হলো ওকে।
রকি বীচ সত্যিই চমৎকার জায়গা। তোমরা অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে যা জানতে চাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারো।
তুমি কি কাছ থেকে ক্যাঙারু দেখেছ? জুলি প্রশ্ন করল।
নিশ্চয়ই। তবে ওদের সাথে লাফানোর কম্পিটিশন দিতে যেয়ো না, পারবে না।
মুসা হাত তুলল।
মার্ক, কোয়ালা ভালুক কি সত্যিকারের ভালুক? খুদে, লোমশ, মিষ্টি প্রাণীগুলোর কথা জানতে চেয়েছে ও।
দুমুহূর্ত ভেবে নিল মার্ক।
আমি জানি না। তবে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে প্রথম যে কোয়ালা ভালুকের সাথে দেখা হবে তাকে জিজ্ঞেস করব।
ছেলে-মেয়েরা হেসে উঠে হাততালি দিল। মার্ককে সবাই পছন্দ করতে শুরু করেছে।
লাঞ্চের সময় ক্যাফেটেরিয়াতে মার্ক, মুসা, রবিন আর আমি জড় হলাম। মুসার সঙ্গে ইতোমধ্যেই পরিচয় হয়ে গেছে মার্কের। রবিন আর মুসা অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলল মার্ককে। বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ না করে সাধ্যমত জবাব দিয়ে গেল ও। শেষমেশ মার্ককে রেহাই দেওয়ার জন্য প্রসঙ্গ পাল্টালাম আমি।
আজকে আমাদের বিগ ম্যাচ ভুলে যেয়ো না।
ওরা আমার দিকে ঘুরে চাইল। রকি বীচ সকার টিমের সঙ্গে আজ স্কুল ছুটির পর হোয়াইট লায়ন্স ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ। হোয়াইট লায়ন্স আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ।
মনে আছে। আমরা মাঠে যাব, জানাল রবিন। তারপর মার্কের উদ্দেশে বলল, মার্ক, তুমি আসছ তো ফুটবল মাঠে?
আমার দিকে অন্তর্ভেদী নীল চোখ মেলে চাইল মার্ক।
তুমি কী বলো, মেট?
নিশ্চয়ই যাবে!
তুমি কোন্ পজিশনে খেলো? মার্ক প্রশ্ন করল।
ডিফেন্স। আজকে যদি ওদেরকে হারাতে পারি তা হলে ভাল ভাবে। শুরু হবে আমাদের সিজন।
আমি যাব, কিশোর। খেলাটা মিস করতে চাই না, জানাল মার্ক।
বিকেলটা কেটে গেল চোখের পলকে। এক সময় তিনটে বাজল। স্কুল ছুটি হয়ে গেল। আর আধ ঘণ্টা পর বড় ম্যাচ। হলওয়ের বাইরে জড় হলাম আমরা।
মার্ককে মাঠে নিয়ে যাব আমরা, বলল রবিন। আমাদের সাথে স্ট্যাণ্ডে বসবে ও।