নিজের আর রবিনের পরিচয় দিল কিশোর, তারপর বলল, আমরা কারিনা মুরের কাছে এসেছি ডগ-হাউসের একটা কুকুর চুরির ব্যাপারে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে।
আমিই কারিনা মুর, বললেন মহিলা। কুকুর চুরির ব্যাপারে কিছু জানি না আমি। জানতে চাইও না।
আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল, বলল কিশোর।
এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন কারিনা মুর, তারপর বললেন, তোমাদের চেহারা দেখে বুঝতে পারছি নাছোড়বান্দা টাইপের ছেলে তোমরা, সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমাকে রেহাই দেবে না। ঠিক আছে, ভেতরে এসো। চেইন খুলে দরজাটা ফাঁক করলেন তিনি, হাতের ইশারায় ওদের ভিতরে আসতে বললেন।
সামনে থেকে দেখে ওরা বুঝতে পারল, যা ধারণা করেছিল তার চেয়ে বয়সে অনেক কম হবেন মিস মুর। ওদের কল্পনায় ছিল সাদা। চুলওয়ালা বুড়ি এক মহিলা। চোখে তার জ্বলন্ত দৃষ্টি। কথায় কথায় ঘঁাৎ করে ওঠেন। বাস্তবে কারিনা মুর তেমন নন দেখে খানিকটা স্বস্তিই পেল কিশোর আর রবিন। মহিলার বয়স তিরিশের কাছাকাছি হবে। একটা গেঞ্জি পরে আছেন। ওটার বুকে বড় বড় করে লেখা: আমি বিড়াল ভালবাসি।
লিভিংরুমে চোখ বুলিয়ে কিশোর আর রবিন বুঝতে পারল বিড়াল কতোটা ভালবাসেন কারিনা মুর। জানালার তাক আর বুকশেলফের উপর সারি সারি সিরামিকের বিড়াল-মূর্তি। ঘরের দেয়ালে ঝোলানো প্রতিটি ছবিতে অন্তত একটা বিড়াল আছেই। এসব তো নিষ্প্রাণ। ঘরে শুয়ে বসে আছে জ্যান্ত বিড়ালের পাল। একসঙ্গে এতো বিড়াল কখনও দেখেনি কিশোর-রবিন। সবখানে বিড়াল হাজির। সংখ্যায় পঞ্চাশটার কম হবে না। কাউচের উপর, চেয়ারের উপর, ডাইনিং রুমের টেবিলের উপর-কোথায় নেই বিড়াল। একটু পরপর কিচেন থেকে ডাইনিংরুম আর ডাইনিংরুম থেকে কিচেনে দৌড়ে ঢুকছে বের হচ্ছে বিড়ালের দল।
বসো, বললেন কারিনা মুর। দেখো, আমার বিড়ালের ওপর বসে পোড়ো না যেন।
কাজটা কঠিন, মন্তব্য করল রবিন। আস্তে করে দুটো বিড়াল নামিয়ে চেয়ার খালি করে তাতে বসল ও। ওর পাশের হ্যাঁসোকটা খালি আছে, ওটাতে বসল কিশোর।
একটা ইযিচেয়ারে বসেছেন কারিনা মুর।
বিড়াল আপনি খুবই ভালবাসেন, তা-ই না? আলাপ শুরু করার জন্য বলল কিশোর।
ওরা প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি, মৃদু হাসলেন কারিনা মুর।
ঘরের ভিতর চোখ বুলাল কিশোর। সবগুলো বিড়ালই আপনার?
বিড়াল কখনও কারও হয় না, জবাব দিলেন মহিলা। ওরা শুধু। এই বাড়িটাকে নিজেদের বলে ধরে নিয়েছে। বিশেষ করে ওই জঘন্য। কুকুরের মোটেলটা খোলার পর ওদের অনেকেরই আর যাবার জায়গা ছিল না।
ডগ-হাউস থেকে একটা কোলি কুকুর চুরি গেছে, সে-ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না। দৃঢ় শোনাল কারিনা মুরের কণ্ঠ। কেবল নিউজ চ্যানেলে কিছু বলেনি, কাজেই জানি না। কিন্তু এতে করে যদি ওই বিচ্ছিরি ডগ হাউসটা বন্ধ হয়ে যায় তো আমি খুশিই হবো।
ডগ-হাউস চালু করার আগে মিস্টার লেবউফকে আপনি চিনতেন? নোটবুক খুলে রেখেছে রবিন তথ্যগুলো টুকে রাখার জন্য।
শুনেছি আপনি ডগ-হাউস যাতে চালু না হয় সেজন্যে অনেক চেষ্টা করেছেন, বলল কিশোর।
ডগ-হাউস খুলে এলাকাটার সর্বনাশ করতে চাইছে জানার আগে লোকটার নামও শুনিনি আমি, বললেন কারিনা মুর। ঠিকই বলেছ তোমরা, আমি ডগ-হাউস যাতে না হয় সেজন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ভেবো না আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। ওই কেনেল ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়ায়। তা ছাড়া, কুকুরগুলো যখন চেঁচাতে শুরু করে, তখন আমার বিড়ালগুলো ঘুমাতে পারে না। আবারও কেস লড়ব আমি। এবার জিততেও পারি।
চট করে ঘরের ভিতরটা একবার দেখে নিল কিশোর। মহা আয়েশে ঘুমাচ্ছে বেশিরভাগ বিড়াল। আর গন্ধ যা ওর নাকে আসছে সেটা কিচেনে রাখা বিড়ালের খাবারের গন্ধ।
কাছেই ম্যান্টেলের ওপর রাখা একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল। কিশোরের। ফ্রেমের ছবিতে বিড়াল নেই, শুধু মানুষের ছবি দেখে সামান্য বিস্মিতই হলো ও।
হাত দিয়ে ম্যান্টেল দেখাল ও। পারিবারিক ছবি?
হ্যাঁ। প্রায় সবাই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে কারও সঙ্গে দেখাই হয় না বলতে গেলে। শুধু হারল্ড এখনও এখানে আছে। ছবিতে লম্বা চুলওয়ালা একজন যুবককে দেখালেন কারিনা মুর। হ্যারল্ড আমার সৎ ভাই। এখানেই বন্দরে কাজ করে।
রবিন জিজ্ঞেস করল, মালবাহী জাহাজের মালামাল, নামানোর কাজ?
না। ড্রাই-ডকে। একটা ক্রুজ শিপ মেরামত করছে ওরা এখন।
ডগ-হাউসের ব্যাপারে তার মনোভাব কেমন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ঠিক আমার মতো। হঠাৎ কড়া চোখে কিশোর আর রবিনের দিকে তাকালেন কারিনা মুর। অ্যাই, তোমরা নিশ্চয়ই ওই চুরির ব্যাপারে হারল্ড বা আমাকে সন্দেহ করছ না?
প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করতে এখানে আসিনি আমরা, শান্ত স্বরে বলল কিশোর। কিন্তু আরেকটা প্রশ্ন আছে আমার। ডগ-হাউসে ইদানীং কিছু ফোনকল আসছে…
কিশোরকে থামিয়ে দিলেন কারিনা মুর। আমার যদি লেবউফকে কিছু বলার থাকে, তা হলে তার মুখের ওপর বলব আমি। বুঝতে পেরেছ? যা বলার সরাসরি বলব। উঠে দাঁড়ালেন তিনি। যথেষ্ট সময় দিয়েছি তোমাদের। এবার তোমরা এলে আমি খুশি হবো।
.
রবিন আর কিশোর কারিনা মুরের সঙ্গে কথা বলতে বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার পর গ্যারেজের রং করা জানালা দিয়ে ভিতরে কী আছে দেখার চেষ্টা করল মুসা। রং যে-ই করে থাকুক, কাজে কোনও খুঁত রাখেনি। ভিতরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মুসার মনে হলো, গ্যারেজে কিছু