স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকে কিশোরদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করল মুসা। নামার পর ওরা শুনতে পেল কিচেনে ফোন বাজছে। মেরি চাচী অফিসে, বাসায় কেউ নেই। ভিতরে ঢুকল ওরা, কিশোর ফোন তুলল। ডগ-হাউস থেকে রিং করেছে আয়োলা। কিশোর ধরায় দুএকটা কথার পর আফসোস করে বলল, খুব অন্যায় আচরণ করা হয়েছে শ্যারনের সঙ্গে। সত্যি দুঃখ লাগছে ওর জন্যে। ওর তো কোনও দোষ ছিল না।
আমিও তা-ই মনে করি, বলল কিশোর। ওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করাটা ঠিক হয়নি। তবে শক্ত মনের মেয়ে শ্যারন, আঘাতটা ঠিকই সামলে উঠবে।
কোলিটা খুঁজে পাবার ব্যাপারে তদন্ত এগোল? জিজ্ঞেস করল আয়োলা।
হাতে কিছু সূত্র এসেছে, জানাল কিশোর।
আশা করি, তোমরা পারবে, বলল তরুণী। কোলিটা চুরি হয়ে যাবার পর থেকে মিস্টার লেবউফ সবার সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করছেন।
বুঝতে পারছি তার কেমন লাগছে, বলল কিশোর। কেউ একজন আমাদের এখান থেকে রাফিয়ানকেও চুরি করে নিয়ে গেছে।
মানে শ্যারন যে-কুকুরটা তোমাদের দিল, ওটা?
হ্যাঁ।
সর্বনাশ! কাজটা কার জানতে পেরেছ?
না, তবে জানব।
পুলিশে ফোন করেছ?
এখনও করিনি। তবে পুলিশ কোলিটাকে খুঁজছে। এখান-ওখান থেকে কুকুরচুরি হচ্ছে বুঝতে পারছি। এসব যদি একই লোকের কাজ হয়ে থাকে, তা হলে পুলিশ তাকে ধরলেই রাফিয়ানের খোঁজও পাওয়া যাবে।
তা ঠিক, সায় দিল আয়োলা। …ঠিক আছে, রাখি তা হলে। কাস্টোমার এসেছে। যদি মনে করো আমার কোনও সাহায্য তোমাদের কাজে আসবে, তা হলে যোগাযোগ করতে দ্বিধা কোরো না।
কথাটা বলার জন্য ধন্যবাদ, বলল কিশোর। আগামীকাল হয়তো। ডগ-হাউসে তদন্ত করতে আসতে পারি আমরা।
বিদায় নিয়ে ফোন রেখে দিল ও, মুসা আর রবিনকে জানাল ফোনে, কী আলাপ হয়েছে, তারপর বলল, আজকে আর কিছু করার নেই। চলো, বাঘার খোঁজ করতে হবে। বাঘা কোথায় ছিল যখন রাফিয়ানকে নিয়ে গেল লোকটা?
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পিছনের উঠানে চলে এলো ওরা। কিশোরের প্রশ্নের জবাবটা সহজেই জানা হয়ে গেল ওদের। একটা খুঁটির সঙ্গে চেইন দিয়ে বাঘাকে বেঁধে রেখে রাফিয়ানকে নিয়ে গেছে লোকটা। ওদের দেখে খুশিতে ঘনঘন লেজ নাড়াচ্ছে বাঘ। ওকে বাধনমুক্ত করতে করতে কিশোর বলল, আগামীকাল সকালে আমরা প্রথমেই যাব বিড়ালমানবী কারিনা মুরের সঙ্গে দেখা করতে। ভদ্রমহিলা কী বলেন শোনা দরকার।
.
পরদিন সকালে নাস্তার পর হাজির হয়ে গেল রবিন আর মুসা। দুজনই উত্তেজিত। খবরের কাগজে মিস্টার রকফেলারের কুকুরটার মুক্তির জন্য এক লাখ ডলার দাবি করা হয়েছে। স্পিঞ্জটার জন্য পাঁচ হাজার ডলার। এক সপ্তাহের মধ্যে কুকুরগুলোর মালিকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে তারা টাকা দিতে রাজি আছে কি না। রাজি না থাকলে কুকুরের লাশ পাঠানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে ডগন্যাপার। খবরটা কিশোরও পড়েছে। নাস্তা খেতে খেতে টুকটাক আলাপ সারল ওরা, কিশোর জানাল শ্যারন ফোন করেছিল, একেবারে ভেঙে পড়েছে রাফিয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবরটা পেয়ে। ওকে সান্ত্বনা দিয়েছে কিশোর, জোর দিয়ে বলেছে, রাফিয়ানকে ওরা উদ্ধার করবেই, যে-করে হোক।
কিশোরের নাস্তা শেষ হতেই চাচীকে বলে বেরিয়ে পড়ল তিনজন। গাড়ি চালাতে চালাতে মুসা বলল, কুত্তাচোরাটাকে আজকেই ধরতে পারলে ভাল হয়।
মৃদু হাসল, কিশোর। জিনার মুখোমুখি হবার চেয়ে কুকুর অপহরণকারীর মোকাবিলা করতে বেশি রাজি তুমি, কী বলো, মুসা?
অবশ্যই! নির্দ্বিধায় স্বীকার করল মুসা।
জিনা খেপে গেলে পিট বুলের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কুকুর চোর কিছুতেই ওর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে না।
ডগ-হাউসের দিকে চলেছে ওরা। রবিন বলল, মিস্টার লেবউফ যেমন বলেছিলেন, কারিনা মুর যদি তেমনি ক্ষ্যাপাটে কিসিমের মানুষ হন, তা হলে তার কাছ থেকে কিছু জানা খুব কঠিন হবে।
কোর্টে তার বিরুদ্ধে কেস পর্যন্ত করেছিলেন মহিলা, বলল মুসা।
সে-কারণেই কারিনা মুর আমাদের প্রধান সন্দেহভাজন, নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর।
ডগ-হাউস পার হয়ে গেল ওরা। লক্ষ করল, এই ব্লকে কারিনা। মুরের বাড়িটাই একমাত্র আবাসিক, অন্য বাড়িগুলো সব অফিস। কারিনা মুরের বাড়িটা ডগ-হাউস থেকে মাঝখানের একটা ঝোপঝাড় গজানো। জমির কারণে বিচ্ছিন্ন।
ছোটখাটো দোতলা বাড়িটার সামনে গাড়ি রেখে এঞ্জিন বন্ধ করল মুসা। নেমে পড়ল ওরা গাড়ি থেকে।
বাড়ির সবগুলো জানালা বন্ধ। পিছন দিকে একটা বন্ধ গ্যারেজ দেখতে পেল ওরা। ওটার জানালার কাঁচগুলোতে রং করা হয়েছে, যাতে ভিতরে কী আছে দেখা না যায়। গোটা বাড়ি তিনফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা, মাঝখানে একটা ছোট দরজা। ওটা ভিড়ানো আছে, ঠেলে ভিতরে ঢুকল ওরা।
এ মুসা, তুমি গ্যারেজটা খুঁজে দেখো, বলল কিশোর। আমি আর রবিন যাচ্ছি মহিলার সঙ্গে কথা বলতে।
মাথা ঝাঁকিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে গ্যারেজের দিকে এগোল মুসা। কিশোর-রবিন চলল বাড়ির দরজা লক্ষ্য করে। দুবার বেল বাজানোর পর ভিতর থেকে সাড়া পেল ওরা। দরজাটা সামান্য ফাঁক হলো। ডাকাত ঠেকানোর চেইন খোলা হয়নি এখনও। উঁকি দিলেন এক মহিলা। তার ঘন চুলগুলো গাঢ় লাল রং করা। ভ্রূ নাচালেন ওদের দেখে।
মিস কারিনা মুর? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কে জানতে চায়? খসখসে গলায় পাল্টা প্রশ্ন করলেন মহিলা।