একেবারে শেষ মুহূর্তে সরে গেল কিশোর, হাত বাড়িয়ে ক্রোমের তৈরি কলারটার ঘাড়ের কাছে শক্ত করে ধরে ফেলল ও। ঝুঁকি খেয়ে থেমে গেল পিট বুল। রাগে গর্জন করে উঠল। ঘাড় ফিরিয়ে কামড় বসাতে চেষ্টা করল কিশোরের হাতে।
হাত লম্বা করে কলার ধরে ওটাকে দূরে সরিয়ে রাখল কিশোর। মেঝে থেকে এক ইঞ্চি উপরে ঝুলছে কুকুরটার সামনের পা দুটো। পিছনের পায়ে যেন ব্রেকড্যান্স জুড়ে দিল।
ছেড়ো না! দ্রুত পায়ে ভিতরে ঢুকল রবিন। শক্ত করে ধরে রাখো। টেবিলের পাশে পড়ে আছে জঞ্জাল, তার ভিতর ইলেক্ট্রিকের একটা ছেঁড়া তার চোখে পড়েছে ওর। কুঁজো হয়ে তুলে নিল ওটা রবিন। তারটা মাত্র আড়াই ফুট লম্বা, তবে ওতেই কাজ চালাতে হবে।
প্রাণের ভয়ে শক্ত করে কলারটা ধরে আছে কিশোর। কলারের ভিতর দিয়ে তারটা ঢুকিয়ে গিঠ দিল রবিন। এবার দুজন মিলে গর্জনরত কুকুরটাকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করল। দুজন দুদিকে টান দেওয়ায় কাজটা অতোটা কঠিন হলো না। টেবিলের পায়ার সঙ্গে তারের আরেক প্রান্ত প্যাঁচ দিয়ে আটকাল রবিন। শক্ত করে গিঠ দিল। নীরবে সমঝোতা হয়ে গেল ওর কিশোরের সঙ্গে। এবার ঝট করে সরে এলো দুজন পিট বুলের কাছ থেকে।
তার খুলে না এলে বাঁচোয়া, হাঁফাতে হাঁফাতে বলল কিশোর।
পিট বুল ঝাঁপিয়ে পড়তে চেষ্টা করায় ইলেক্ট্রিকের তারটা গিটারের তারের মতো টানটান হয়ে গেছে, তবে খসে এলো না। আরও কয়েকবার লাফঝাঁপ মেরে ছুটতে পারবে না বুঝতে পারল পিট বুল। কিশোরের দিকে রক্তচক্ষু মেলে মেঝেতে বসল এবার ওটা।
কামড় লেগেছে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
না, জানাল কিশোর। এখনও হাঁফাচ্ছে। মিউনিসিপ্যালিটিতে ফোন করতে হবে। এটাও হয়তো চুরি যাওয়া কুকুরের একটা। ওখান থেকে কুকুর-ধরা এসে এটাকে নিয়ে যাক।
কে চুরি করবে এরকম একটা রাগী কুকুর? অবিশ্বাস ঝরল রবিনের গলায়। করবেই বা কীভাবে? আমাকে এক লাখ ডলার দিলেও তো এটার ধারেকাছে যেতে চাইব না আমি।
অফিসের ভিতর চোখ বুলাল কিশোর। হলদে হয়ে যাওয়া কয়েকটা কাগজ আর ক্যান্ডির খোসা ছাড়া ঘরে আর কিছু নেই বলে মনে হলো ওর।
নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। মনে হয় না এখানে কুকুরটা বেশিক্ষণ ছিল। বোঝা যায় খাবার আর পানির অভাবে পড়েনি। অথচ এখানে ওদুটো জিনিস নেই।
সম্ভবত রাফিয়ানকে যে চুরি করেছে, সে-ই এটাকে এখানে রেখে গেছে, বলল রবিন। আমরা ঢোকার আগে যথেষ্ট সময় পেয়েছে লোকটা।
আমারও মনে হয় ওই লোকই রেখে গেছে, সায় দিল কিশোর।
দরজার সামনে এসে দাঁড়াল মুসা। কী ব্যাপার? গর্জন করে কী?
একটা পিট বুল, জানাল রবিন। আরেকটু হলেই কিশোরকে মেরে ফেলেছিল। ওর গলা ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল।
কুকুরটার আকার থেকে মুসার চোখ কপালে উঠল। খাইছে!
জানালার ব্লাইন্ড তুল কিশোর, ঘরে যাতে আলো আসে। কিশোরের কথায় ঘরটা সার্চ করতে শুরু করল ওরা। তিনজনই সতর্ক দূরত্ব বজায় রাখল পিট বুলের কাছ থেকে। বসে বসে আগুনঝরা চোখে ওদের দেখছে ওটা এখন।
ময়লা ঘটছে তিন গোয়েন্দা। কয়েকটা পেপার ক্লিপ আর সাপ্লাই ফর্ম ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। ভাঙা ডেস্কটা খালি।
জরুরি কিছু নেই, মন্তব্য করল কিশোর। মুসার দিকে তাকাল।
ধূসর গাড়িওয়ালা কোনদিকে গেছে আন্দাজ করতে পারলে?
ধুলোর মধ্যে চাকার দাগ ডানদিকে বাঁক নিয়েছে, জানাল মুসা। তারপর গাড়িটা রাস্তায় উঠে যাওয়ায় আর আর কোনও চিহ্ন নেই।
আমরাও ডানদিকেই যাব, বলল কিশোর। হয়তো তদন্তের কাজে লাগে এমন কিছু পাওয়া যেতেও পারে।
মুসার ফোক্সওয়াগেনের কাছে ফিরল ওরা। গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট খুলে একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ বের করে তার ভিতর এস-এর মতো হুকটা রেখে দিল কিশোর। এবার মোবাইল ফোনটা বের করে মিউনিসিটিপ্যালিটির নাম্বারে ডায়াল করল, ঠিকানা জানি কোথায় পিট বুলটাকে পাওয়া যাবে।
ওকে জানানো হলো, মিউনিসিপ্যালিটির লোক এসে ওটাকে নিয়ে যাবে; যতোদিন মালিকের খোঁজ না পাওয়া যায়, ততোদিন সরকারী খরচে ওটার রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
হঠাৎ করেই বাংলাদেশের কথা মনে পড়ল কিশোরের। বাংলাদেশে বেওয়ারিশ কুকুর ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে মিউনিসিপ্যালিটির লোকরা। ব্যাপারটা খুব নিষ্ঠুর।
বন্দরের ধার দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে চলেছে মুসার ফোক্সওয়াগেন। কোথাও নেই ধূসর গাড়িটা। আধঘণ্টা খুঁজে হাল ছেড়ে দিল ওরা।
জিনা ফিরলে কী বলবে? স্যালভিজ ইয়ার্ডের দিকে রওনা হয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা। রিয়ারভিউ মিররে কিশোরের দিকে তাকিয়ে আছে ও।
জিনা স্রেফ খুন করে ফেলবে আমাদের। শ্যারনকেই বা কী বলবে? রাফিয়ান নিখোঁজ হয়ে গেছে শুনলে কী ভাববে ও?
দেখি শ্যারন কী বলে, মোবাইল ফোনটা আবার গ্লাভ কম্পার্টমেন্ট থেকে বের করল কিশোর, শ্যারনদের অ্যাপার্টমেন্টের নাম্বারে ডায়াল করল। বাড়িতে বোধহয় কেউ নেই, অ্যানসারিং মেশিন ক্লিকক্লিক শব্দ করে চালু হলো। কী ঘটেছে জানিয়ে ফোন রেখে দিল কিশোর। আপন মনে বলল, জিনারা কোন হোটেলে উঠবে বলে যায়নি, কাজেই ওকে খবরটা জানানোর কোনও উপায় নেই। হয়তো ও ফিরে আসার আগেই রাফিয়ানকে আমরা উদ্ধার করতে পারব।
বিকেল হয়ে গেছে। রোদের রং লালচে। সাগর থেকে ভেসে আসা। বাতাসে লোনাজলের গন্ধ।