একমাস ধরে শ্যারনের সঙ্গে কাজ করছি, অথচ একবারও ও বলেনি ও বিখ্যাত তিন গোয়েন্দার বন্ধু, বলল আয়োলা।
এখানে দাঁড়িয়ে বকবক করলে কোলিটা ফেরত আসবে না, রুক্ষ স্বরে বললেন লেবউফ। কাজ আছে আমার, আমার সঙ্গে আর কোনও কথা না থাকলে আমি চললাম। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকালেন তিনি। ওরা নীরব দেখে গটগট করে হেঁটে রিসেপশন অফিসের দিকে ফিরে চললেন।
আয়োলা বলল, আমাকেও আপাতত যেতে হচ্ছে। বাসায় ফোনে যোগাযোগ করে বাবা-মাকে জানাতে হবে আমি কোথায় আছি। বাড়তি ডিউটি করতে হবে আমাকে। ফিরতে দেরি হবে। নিজের অফিসে ঢুকে দরজাটা ভিড়িয়ে দিল সে।
তিন গোয়েন্দা আর শ্যারন ফিরে এলো রিসেপশন অফিসে। ভিতরে ঢুকেই কিশোর জিজ্ঞেস করল, মিস্টার লেবউফ, আগের কর্মচারীদের কারও কাছে মোটেলের চাবি রয়ে গেছে?,
না, ফিরিয়ে দিয়েছে। ঠিক যেমন শ্যারন এখন দেবে। হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি গম্ভীর চেহারায়। এ পার্স খুলে নিজের চাবির রিং থেকে ডগ-হাউসের চাবিটা আলাদা করল শ্যারন ফ্যাকাসে চেহারায়, তারপর ওটা দিয়ে দিল মিস্টার লেবউফকে।
আমি চাই না মানুষ মনে করুক দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মচারী রাখি। আমি, নির্দয়ের মতো বললেন লেবউফ।
শ্যারন প্রতিবাদ করল, আমার ডিউটির সময় আবিষ্কার হয়েছে। কুকুরটা নেই, কিন্তু ওটা কখন চুরি গেছে সেটা কেউ জানে না।
এমন কোনও প্রমাণ নেই যে চুরির সঙ্গে শ্যারন কোনও ভাবে জড়িত, বলল কিশোর।
কিন্তু ওকে বরখাস্ত করার মতো যথেষ্ট কারণ ঘটেছে বলে আমি মনে করি, কড়া চোখে কিশোরকে দেখলেন লেবউফ। শ্যারনের দিকে তাকালেন। …আর নিয়মিত ভাড়া দেয়ার সাধ্য না থাকলে যাওয়ার আগে তোমার নেড়ি কুত্তাটাকেও নিয়ে যেয়ো।
রাফিয়ানের কথা বলা হচ্ছে!
মুসার কালো মুখটা আরও কালো হয়ে গেল। রবিন খুকখুক করে। কাশল। কিশোরের চেহারা মারাত্মক গম্ভীর।
অসহায় দেখাল শ্যারুনকে। মুখটা রক্তশূন্য। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকাল শ্যারন। তা হলে এখন কী হবে? রাফিয়ানকে কোথায় রাখব? আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে কুকুর রাখার নিয়ম নেই।
কোনও চিন্তা কোরো না, আশ্বাস দিল কিশোর। ও আমার কাছে থাকবে। আমার বাঘার সঙ্গে ভাল খাতির ওর। দুজন মিলে খেলা করে সুন্দর সময় কাটাতে পারবে। নিয়ে এসো ওকে। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।
মনে হলো কিশোরের কথায় ভরসা পেল শ্যারন, রিসেপশন থেকে বেরিয়ে কেনেলের দিকে গেল ও। মোটেলের সামনের পোর্টিকোতে গাড়ির পাশে চলে এলো তিন গোয়েন্দা।
একটু পরই ফিরল শ্যারন, এক হাতে বাদামী রঙের রাফিয়ানের শেকল ধরে রেখেছে। বন্ধুদের সামনে এসে দাঁড়াল, মুখে ম্লান হাসি। শেকলটা কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিল। এই যে নাও। খুব খারাপ লাগছে আমার। ঈশ্বর জানেন জিনা কী মনে করবে।
শেকলটা নিল কিশোর। মুসা বলল, কিছু মনে করবে না ও। কী ঘটেছে শুনলে বরং এভাবে তোমাকে অপমান করেছে বলে রেগে যাবে মিস্টার লেবউফের ওপর।
ভউ! ভউ!
কিশোরের গাল চেটে দেওয়ার চেষ্টা করল রাফিয়ান, লম্বা লেজটা ঘনঘন নাড়ছে আনন্দে। কিশোর চট করে মুখটা সরিয়ে নেওয়ায় বিন্দুমাত্র দেরি না করে ঘুরেই রবিনের গাল চেটে দিল।
রিসেপশনের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন মিস্টার লেবউফ। নিষ্ঠুরভাবে বললেন, চোরের রুচি আছে, এটাকে নিয়ে যায়নি।
ও মাংগ্রল হতে পারে, কিন্তু ও খুব ভাল মানুষ, কড়া গলায় বলল শ্যারন। রাফিয়ান ওই আদুরে কোলির চেয়ে অনেক কাজের।
ভউ! হুফ্! হ্যাহ, হ্যাহ্!
শ্যারনের হাত চাটার ফাঁকে যেন সায় দিল রাফিয়ান।
পার্স খুলে একটা কাগজ বের করল শ্যারন, ওটা গোল করে মুড়িয়ে বলল, রাফি, ধরু!
সঙ্গে সঙ্গে আলতো করে ওটা শ্যারনের হাত থেকে নিয়ে নিল। রাফিয়ান। এবার শ্যারন নির্দেশ দিল, দিয়ে দে ওটা।
মুখ আলগা করে মোড়ানো কাগজটা শ্যারনের দিকে বাড়িয়ে ধরল রাফিয়ান।
লক্ষ্মী ছেলে। পার্স থেকে বিস্কুট বের করে ওকে দিল শ্যারন। মিস্টার লেবউফের দিকে তাকিয়ে বলল, বসতে বললে বসে ও, গড়াগড়ি খেতে বললে তা-ও পারে, কাউকে দেখিয়ে ছুঃ বললে তার দিকে ছুটে যায় ঘেউঘেউ করতে করতে। কিন্তু কখনও কামড়ায় না ও। বললে হ্যান্ডশেকও করে। পারবে মিস্টার রকফেলারের কোলি এতোকিছু করতে?
জবাব দিলেন না মিস্টার লেবউফ, শুধু মুখ বাঁকালেন।
গাড়িতে করে শ্যারনকে ওদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে নামিয়ে দিল তিন গোয়েন্দা, তারপর রাফিয়ানকে নিয়ে ফিরে চলল স্যালভিজ ইয়ার্ডের উদ্দেশে। ইতিমধ্যে নিজেদের ভিতর আলোচনা করে ঠিক করে ফেলেছে, ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারকে জানাবে ওদের সন্দেহের কথা। কেউ বা কোনও দল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কুকুর চুরি করছে।
ইয়ার্ডের ভিতর গাড়ি ঢুকিয়ে নামল তিন গোয়েন্দা, রাফিয়ানকে ছেড়ে দিল উঠানে। বাঘার গায়ের গন্ধ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাঘার সঙ্গে খেলা করতে ছুটল রাফিয়ান।
চলো কিছু পেটে দেয়া যাক, বলল মুসা। মনে হচ্ছে জীবনে কোনদিন খাইনি কিছু।
বাড়ির ভিতর ঢুকল ওরা। সোজা কিচেনে চলে এলো। জানালার পাশেই ফ্রিজ, ওটার দরজা খুলল মুসা, টার্কির রোস্ট আর পাউরুটি বের করে মাইক্রোওয়েভ আভেনে ভরল। হাসি-হাসি চেহারায় কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কিশোর আর রবিনের চেহারা দেখে থমকে গেল।