তা হলে অ্যাম্বুলের ওষুধটা?
তরল রিভোট্রিল। ঘুমিয়ে পড়তে তোমরা। আমি পরে পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে দিতাম তোমাদের কোথায় পাওয়া যাবে। আবার উঠবার চেষ্টা করল মিলহিজার। ছাড়ো বলছি, বদমাশ ছেলে! ছেড়ে দাও! কথা দিচ্ছি আমি চলে যাব। খোদার কসম!
যাবেন তো বটেই, বলল রবিন। তবে যাবেন আসলে জেলে। মানুষের কুকুর চুরির অপরাধে।
রবিন, ডাকল মুসা। গড়িয়ে চলে এসো দেখি এদিকে, তোমার হাতের বাঁধন খুলে দিই। একে এক হাতেও আটকে রাখতে পারব এই হোল্ডে।
কসরত শুরু করল রবিন, মিনিট পাঁচেক পর চলে আসতে পারল। নিক মিলহিজারের পাশে। এক হাতে মিলহিজারের দুই কব্জি শক্ত করে ধরে আরও উপরের দিকে ঠেলল মুসা। বাপরে! বলে কাতরে উঠল। মিলহিজার। মুসা অন্য হাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রবিনের বাধন নিয়ে। ভাল করে বাঁধেনি ও বাঁধবার সময়। মিলহিজারও পরীক্ষা করে দেখেনি। আধ মিনিট লাগল রবিনের হাতের বাঁধন খুলে দিতে। পায়েরটা রবিন নিজেই খুলল। প্রথমেই রাফিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ও, তারপর দড়িগুলো দিয়ে আচ্ছামতো বাধল নিক মিলহিজারকে।
দুজন উঠে দাঁড়াল ওরা, ঠিক তখনই দূরে শুনতে পেল পুলিশের গাড়ির সাইরেন। দ্রুত কাছে চলে আসছে সাইরেনের আওয়াজ। ঠিক যেন গ্যারেজের দরজার সামনেই থামল কয়েকটা গাড়ি।.।
দরজা খুলে বাইরে তাকাল রবিন-মুসা, দেখল পুলিশের গাড়ি থেকে নামছেন ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার। একজন পুলিশ অফিসার হাতকড়া পরানো আয়োলা মর্টনকে ধরে নামালেন। রবিনের ফোক্সওয়াগেন থেকে নামল কিশোর।
গ্যারেজের ভিতর ঢুকল সবাই। রবিন-মুসাকে নিরাপদ দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল কিশোর।
আয়োলা মর্টনকে দেখেই চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল মিলহিজারের, বলে উঠল, গাধী! সঙ্গে করে পুলিশ নিয়ে এসেছ! তোমার কথায় যদি এই বদমাশ ছোকরাদের না ঘাঁটাতাম তা হলে এখন হয়তো নিশ্চিন্তে থাকতাম আমি। ওদের নেড়ি কুত্তাটাকে চুরি করতে বলেই আমার সর্বনাশ করলে তুমি।
কী! আমি বলেছি! ফুঁসে উঠল আয়োলা মর্টন। আর তুমি? তুমি দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা? মুক্তিপণ চাইলটা কে? আমি ডগ-হাউস থেকে কুকুর চুরি করতে মানা করেছিলাম না? এহ্! বাহাদুর! কিছু হবে না বলে! বলেছিলাম না শ্যারন মেয়েটা তিন গোয়েন্দার বন্ধু, তাকে ঘটালে ধরা পড়ে যাব আমরা!
আপনিই তালায় আঁচড় কেটেছিলেন, মিলহিজার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আস্তে করে মাথা দোলাল নিক মিলহিজার ফ্যাকাসে মুখে। পুলিশ মনে করেছিল তালাটা জোরাজুরি করে খোলা হয়েছে।
আর আপনি, আয়োলা, তরুণীর দিকে ফিরল কিশোর। আপনি হুমকি দিয়ে ডগ-হাউসে ফোন আসে বলেছিলেন, সেটা নিশ্চয়ই মিথ্যে? গাড়ি নষ্ট সেটাও নিশ্চয়ই বানানো কথা?
আমি আমার দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি, পরাজিতের মতো বলল আয়োলা মর্টন।
আর আপনি আমাদের গাড়ি সার্চ করেছিলেন, মিলহিজার? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হ্যাঁ। পিট বুলটাকে ওয়্যারহাউসে সামলাতে গিয়ে এক্সেলসিওর ল্যাবের কার্ডটা পড়ে গিয়েছিল, ওটা খুঁজছিলাম। একটু থামল মিলহিজার, তারপর বলল, দেখো, আমাদের দোষগুলো বড় কিছু নয়। কয়েকটা কুকুর শুধু চুরি করেছি আমরা।
আস্তে করে মাথা নাড়লেন ইয়ান ফ্লেচার। এতোক্ষণ কথা শুনছিলেন। ভুল বললে তুমি, মিলহিজার। মুক্তিপণ চেয়ে বড় অপরাধ করেছ তোমরা, তারপর কিডন্যাপ করেছ রবিন আর মুসাকে। এগুলো মারাত্মক অপরাধ। আমি জানতে চাই ওদের কিডন্যাপ করলে কীভাবে।
হাল ছেড়ে দিল নিক মিলহিজার, স্বীকারোক্তির সুরে বলল, রবিন যখন টাকা হাতছাড়া করতে রাজি হলো না, তারওপর আমার মুখোশ ধরে টান দিল তখন ভাবলাম আমাকে চিনে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে ক্লোরোফর্ম দিয়ে ওকে অজ্ঞান করে টিলার কাঁধে রাখলাম। পরে একই ভাবে মুসাকেও অজ্ঞান করলাম। তারপর এক এক করে বয়ে নিয়ে আয়োলার ট্রাকে তুলে নিয়ে এলাম এখানে এই পড়ো বাড়িটাতে। মাছ ধরতে গেলে এখানে থাকি আমি। অনেকদিন ধরেই বাড়িটা আমি মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। আশেপাশে লোকালয় নেই, কাজেই কারও চোখে পড়ে যাবার ভয় ছিল না। আমি ঠিক করি ওদের ঘুম পাড়িয়ে কুকুরগুলো নিয়ে বোটে করে আমার গ্রামে চলে যাব। কাছেই ওটা। পরে সময় সুযোগ মতো কুকুরগুলো বিক্রি করব। সম্ভব হলে রকফেলারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করব। কথা ছিল আমি গ্রামে চলে যাওয়ার পর আয়োলাও চলে যাবে ওখানে, বিয়ে করব আমরা।
অনেকগুলো ভুল করেছেন আপনারা, বলল কিশোর। কেনেলে চোরাই কুকুর রাখা ঠিক হয়নি। জেসিকা স্প্রিংগারের চোখে তো ধরা। পড়েছেনই, আমি মিসেস লেবউফকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি, ওখানে যেসব কুকুর রাখা হয় সেগুলোর কাগজ পত্র সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করা হয়ে যায়। অথচ আয়োলা বলেছিলেন পরে তিনি বাড়তি কুকুরগুলোর মালিকের নাম লিখবেন। এ ছাড়াও, আপনার এখানকার আনসারিং মেশিনেও একটা মেসেজ পাঠাই আমি। ওটা ট্রেস করলেও পুলিশ বুঝে যাবে আপনিই ল্যাবোরেটরিতে কুকুর বিক্রি করতে চাওয়া সেই লোক।
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল রবিন। এখানে আপনার গাড়ির চাকার দাগ আঁকা আছে। ওয়্যারহাউসে এঁকেছিলাম। এটা মিলালেই জানা যাবে আসলে আপনিই সেদিন রাফিয়ানকে চুরি করেছিলেন।
তবে এসবের দরকার পড়বে না, বললেন ইয়ান ফ্লেচার। অনেকদিন ধরে পুলিশে আছি, আমার যদি বুঝতে ভুল না হয়, তা হলে এরা নিজেরাই নিজেদের অপরাধ কোর্টে স্বীকার করে নেবে। তাতে শাস্তি কম হবে এদের।