মিস্টার মিলহিজার, পার পাবেন না আপনি, শীতল স্বরে বলল মুসা।
ক্ষণিকের জন্য চুপ হয়ে গেল মুখোশধারী, তারপর মুখোশটা একটানে খুলে ফেলল। ঠিক আছে, তোমাদের বুদ্ধি আছে মানছি। ভালই হলো, মুখোশটা আর পরে থাকতে হবে না। এমনিতেই ওটা পরে গরমে হাঁসফাস করছিলাম। এবার আমি যাচ্ছি, একটা ফোন করতে হবে। কাজটা সেরেই ফিরে আসব তোমাদের ব্যবস্থা করতে। সত্যি আমি দুঃখিত, কিন্তু আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা রাখোনি তোমরা। পিছিয়ে গেল নিক মিলহিজার, তারপর দরজাটা বন্ধ করে তালা মেরে দিয়ে চলে গেল।
.
ডগ-হাউসের পোর্টিকোর নীচে রবিনের গাড়ি যখন থামাল কিশোর, তখন মাত্র পুবাকাশে মুখ তুলেছে সূর্য। অফিসের দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল, প্রায় ছুটে বের হলো আয়োলা মর্টন। পোর্টিকোতে গাড়িটা যেন খেয়ালও করল না। কাকে যেন কী সব বলতে বলতে ছুটছে তরুণী। গাড়ির কাঁচ নামাল কিশোর তার কথা শুনবার জন্য। ভিতরের কারও কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছে আয়োলা, বলছে অত্যন্ত জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় এক্ষুনি তাকে বাড়ি যেতে হচ্ছে।
সিটে নিচু হয়ে বসল কিশোর, যাতে ওকে দেখতে না পায় আয়োলা মর্টন। তরুণী খানিকটা দূরে চলে যাবার পর মাথা তুলল ও। খুব তাড়াহুড়ো করে ছুটছে তরুণী। সে ডগ-হাউস ভ্যানে চড়ে বসার আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করল কিশোর, তারপর ভ্যানটা রাস্তায় নামার পর অনুসরণ শুরু করল। বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখল, যাতে ও পিছু নিয়েছে সেটা সহজে টের না পায়। রবিনের গাড়ির রংটাও ওকে সাহায্য করছে। এই গাড়িটা আয়োলা মর্টন আগে দেখেনি।
ধৈর্য ধরে পিছু লেগে থাকল কিশোর। বুঝতে পারছে আয়োলা মর্টন ওকে রবিন আর মুসার কাছে পৌঁছে দেবে। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল ওর। মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করলে কেমন হয়? পুলিশে যদি ফোন করে ও?।
প্রথবার রিং হতেই ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার ধরলেন। আধমিনিট কিশোরের বক্তব্য শুনেই বললেন, তুমি পেছনে লেগে থাকো। কোন স্ট্রিটে আছো বলো, আমি ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করছি।
লাইমস্টোন স্ট্রিট, সার। মে ফ্লাওয়ারের দিকে যাচ্ছি।
আমি ওয়্যারলেস করে দিচ্ছি। লাইন কেটে গেল।
.
এতো তাড়াতাড়ি আপনার কাজ শেষ হয়ে গেল? নিক মিলহিজার ফিরতেই শুকনো গলায় জিজ্ঞেস করল মুসা।
জবাব না দিয়ে পিস্তলটা কোমরে খুঁজল মিলহিজার। বলল, এটা একটা খেলনা পিস্তল ছিল। যদি আগে জানতে তা হলে আমাকেই বরং বন্দি করে ফেলতে পারতে তোমরা। কিন্তু আফসোস, তোমরা ধরতে পারোনি। এবার পকেট থেকে ছোট একটা চামড়ার থলে বের করল মিলহিজার। ওটা থেকে সিরিঞ্জ আর অ্যাম্পুল বের হলো। সোডিয়া পেনটোবারবিটাল, বলল মিলহিজার। আধ অ্যাম্পুল ইঞ্জেক্ট কর চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বে তোমরা। আর কখনও সে-ঘুম ভাঙবে না।
খুন করবেন আপনি আমাদের? অবিশ্বাস ঝরল মুসার কণ্ঠে। হাতের টেপ অনেকখানি ঢিলে করে ফেলেছে ও। আর সামান্য সময় পেলেই হাত দুটো মুক্ত করতে পারবে। খুনের শাস্তি জানেন? মৃত্যুদণ্ড! ইলেকট্রিক চেয়ার।
আমি চলে যাচ্ছি ধরাছোঁয়ার বাইরে, ছোকরা। অনেকবার অনেক ভাবে তোমাদের ভয় দেখিয়ে ঠেকাতে চেয়েছি। এমনকী আমার সেরা সংগ্রহ ভয়ঙ্কর পিট বুল কুকুরটাকেও ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে লেলিয়ে দেয়ার জন্যে রেখে এসেছি ওয়্যারহাউসের ভিতর। শুধু তা-ই, মরিচের গ্যাস, গায়ের ওপর খাবারের বস্তা ফেলা, কুকুরের খাঁচায় আটকানো-কী না করেছি। তারপরও নাছোড়বান্দা ছোকরা তোমরা শিক্ষা নিলে না। ভয়ঙ্কর হাসি হাসল নিক মিলহিজার। অ্যাম্পুল থেকে সিরিঞ্জে ধীরে ধীরে স্বচ্ছ তরল ভরল। শেষ কথা কিছু বলার থাকলে বলে ফেলল। ওষুধটা খুব দ্রুত কাজ করে কিন্তু। মুসা আর রবিনের শুকনো মুখ দেখল মিলহিজার। ভয় নেই, একদম ব্যথা পাবে না।
দুপা এগোল সে, তারপর থমকে দাঁড়াল। এতোক্ষণে তার খেয়াল হয়েছে একটা খাঁচা খোলা। ওটাতে কুকুর নেই।
তোমাদের রাফিয়ান কই?
টেবিলের তলা থেকে উঁকি দিল রাফিয়ান। সঙ্গে সঙ্গে রবিনও চিৎকার করল, ছুঃ, রাফিয়ান!
একটা তীরের মতো ছুটে বের হলো রাফিয়ান, পরক্ষণেই ঝাঁপিয়ে পড়ল নিক মিলহিজারের উপর। সোজা লোকটার বুকে দুপা তুলে দিল ও। সেই সঙ্গে বিকট ভউ! ভউ! করছে।
মিলহিজার এরকম কিছু ঘটবে ভাবতেও পারেনি। হঠাৎ রাফিয়ানের ওজনটা সামলাতে না পেরে চিৎ হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল সে। আর ঠিক তখনই এক ঝটকায় টেপ ছুটিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। নিক মিলহিজার উঠবার সময় পেল না, মুসা পৌঁছে গেল তার পাশে। ধাক্কা দিয়ে তাকে টuছু করেই পিঠে চড়ে বসে লোকটার দুহাত ভাজ করে ধরে ঠেলল ও উপরের দিকে। ব্যথায় আঁউ করে একটা শব্দ বের হলো মিলহিজারের মুখ দিয়ে। এদিকে রাফিয়ান তার গাল চেটে দিচ্ছে।
উঠবার চেষ্টা করল মিলহিজার, পারল না। হালকা-পাতলা লোক সে, তা ছাড়া মুসার মতো কারাতেও জানে না, অসহায় ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল। খানিকক্ষণ পর ব্যথায় বিকৃত স্বরে বলল, বদমাশ ছোকরা, আমার হাত ভেঙে যাচ্ছে!
ভাঙতে দিন, খুব বেশি ব্যথা লাগবে না। অন্তত মরার চেয়ে তো ভালো! নির্বিকার গলায় বলল মুসা। আরেকটু হলেই তো আমাদের খুন করছিলেন!
পাগল না কি! প্রায়, আঁতকে উঠল এবার মিলহিজার। ভয় দেখাচ্ছিলাম। খুনখারাপি করে মরব না কি!