কিন্তু কেন?
উত্তরটা সহজ। আয়োলা মর্টন যেই বুঝল ওরা কোলিটা খুঁজবে, তখনই বুঝতে পারল বিপদে পড়ে যেতে পারে সে। তিন গোয়েন্দার সুখ্যাতি ভাল করেই জানত সে। কুকুর চুরি পুলিশ হয়তো তেমন গুরুত্বের সঙ্গে নেবে না, কিন্তু তিন গোয়েন্দা বান্ধবীর খাতিরে আপ্রাণ। চেষ্টা করবে. চোরকে ধরার। আয়োলা চিন্তা করেছে কী করে তিন গোয়েন্দাকে এই কেস থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। রাফিয়ানকে চুরি করলে ওদের হুমকি দেওয়া যাবে যাতে তদন্ত বন্ধ করে। কিন্তু কিছু একটা গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। নইলে ব্যাপারটা এখন কুকুর চুরির চেয়ে অনেক বড় ধরনের অপরাধে পরিণত হয়েছে। কিডন্যাপ করা হয়েছে মুসা আর রবিনকে। কিডন্যাপিঙের শাস্তি অত্যন্ত গুরুতর।
পার্কে যা ঘটল সেটা মনের ভিতর নাড়াচাড়া করল কিশোর। পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হলো কেন? রবিন বা মুসা কি ডগন্যাপারকে চিনে ফেলেছিল? সে-কারণেই ওদের ধরে নিয়ে গেছে?
বেঞ্চ ছেড়ে উঠল কিশোর, রবিনের গাড়ির কাছে ফিরে এলো। ইগনিশনে চাবি রেখেই বেরিয়েছিল রবিন। গাড়িটা স্টার্ট দিতে অসুবিধে হলো না। সোজা ডগ-হাউসের দিকে ছুটল রবিনের ফোক্সওয়াগেন। গম্ভীর চেহারায় গাড়ি চালাচ্ছে কিশোর। এখনও অনেক সুতো জোড়া লাগছে না, তবে এটা নিশ্চিত যে, রবিন আর মুসার অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে আয়োলা মর্টনের সম্পর্ক আছে।
.
রবিন-মুসা লুকানোর জায়গা খুঁজে বের করে পা বাড়াতে পারার আগেই খুলে গেল দরজা। বাইরে থেকে উজ্জ্বল আলো এসে পড়ল গ্যারেজের ভিতর। ভিতরে ঢুকল লোকটা। এখনও তার মুখ ঢেকে রেখেছে রাবারের সেই মুখোশ। হাতে একটা পিস্তল! তাকে দেখেই বিপদ বুঝে ছোট একটা টেবিলের তলায় গিয়ে ঢুকেছে রাফিয়ান।
পিস্তলটা রবিন আর মুসার মাঝখানে তাক করে ধরল কিডন্যাপার, গম্ভীর গলায় ধমকে উঠল, খবরদার! কোনও চালাকি নয়! একটু নড়েছ কী মরেছ! পিস্তল নাডাল সে। এবার যা বলছি, করো!
লোকটার নির্দেশে রবিনের হাত-পা আবার বাঁধতে হলো মুসাকে। এক হাতে পিস্তল তাক করে টেপ দিয়ে মুসার কব্জিদুটো বেশ কয়েক প্যাঁচ দিয়ে আটকে দিল লোকটা। কাজ সেরে মুখোশের ভিতর খিকখিক করে হাসল। ভেবেছিলে পার পেয়ে গেলে, না? এতো সহজ নয়!
আপনি কি পাগল হলেন? বলল মুসা। কুকুর চুরি এক কথা আর কিডন্যাপিং সম্পূর্ণ আরেক। ধরা আপনি পড়বেনই। আর তখন ভীষণ কড়া শাস্তি হবে।
দোষটা তোমার বন্ধু রবিনের, বলল মুখোশ পরা লোকটা। ও যদি টাকাগুলো আপোষে দিয়ে দিত তা হলে আমি জানিয়ে দিতাম কোথায় রাফিয়ানকে পাওয়া যাবে। কিন্তু টাকা হাতছাড়া করতে চাইল না ও। তারওপর মুখোশে টান দিল। হয়তো চিনে ফেলেছে, কাজেই ওকে টাকাসুদ্ধ ধরে আনতে হলো।
শীঘ্রি জেলে পচে মরবেন আপনি, বলল রবিন।
অসম্ভব! খিকখিক করে হাসল মুখোশ পরা লোকটা। সাক্ষ্য দেবে কে আমার বিরুদ্ধে? ছোটখাটো কয়েকটা কাজ সেরে নিই, তারপর সমস্ত প্রমাণ নষ্ট করে সরে পড়ব আমি।
আপনার সঙ্গীনিকে, ফেলেই চলে যাবেন? চট করে প্রশ্ন করল মুসা।
ওর… থেমে গেল কিডন্যাপার, তারপর প্রশংসার সুরে বলল, ভেরি গুড, মুসা আমান। আমাকে প্রায় বোকা বানিয়ে দিয়েছিলে।..•াক, তাতে কিছু আসবে যাবে না। আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা রাখোনি তোমরা। এখন ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে আমাকে।
কী বলতে চান? শঙ্কিত বোধ করতে শুরু করল মুসা। হাতের প্ল্যাস্টিকের টেপ খুলতে চেষ্টা করে দেখল, কাজটা অসম্ভব।
সত্যিই আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই, যেন আপন মনে বলছে কিডন্যাপার, তোমাদের চিরতরে গায়েব করে দিতে হবে এখন।
১৫
এখন সুখবর হচ্ছে, কুকুরগুলো আপাতত বাঁচবে, ঠাট্টার সুরে বলল পিস্তলধারী কিডন্যাপার। আর দুঃসংবাদ হচ্ছে, মরতে হবে তোমাদের দুজনকে।
রবিন চুপ করে শুনছে লোকটার কথা। মুসা চিন্তা করে দেখল, লোকটাকে যদি কথা বলিয়ে সময় আদায় করা যায়, তা হলে হয়তো বাঁচার একটা সুযোগ ওরা পেতেও পারে। বাঁচার কোনও না কোনও পথ নিশ্চয়ই আছে!
একটু পরই পুলিশ নিয়ে এখানে চলে আসবে কিশোর, জোর দিয়ে মিথ্যেটা বলল মুসা।
তোমাদের বন্ধু জানেও না তোমরা কোথায় আছে, তার সেই খিকখিকে হাসি হাসল কিডন্যাপার।
কথাটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, তিক্ত মনে ভাবল মুসা। ওদিকে রবিন লোকটার গলার আওয়াজ থেকে পরিচয় চেনার চেষ্টা করছে। লোকটা কি হারল্ড মুর? মনে তো হচ্ছে না। নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আর এই জায়গাটা জেসিকা স্প্রিংগারের গ্যারেজও হতে পারে।
কুকুর চুরি শুরু করলেন কেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
দেহের ভর এক পায়ে চাপাল কিডন্যাপার। তোমাদের বলা যায়, তোমরা তো আর অন্য কাউকে কখনও বলতে পারবে না। খবরের কাগজে পড়েছিলাম ব্রিডাররা ল্যাবগুলোকে কুকুর সরবরাহ করে প্রচুর রোজগার করে। চিন্তা করে দেখলাম আমিও কাজটা করতে পারি। কিন্তু ব্রিডিং শুরু করার মতো টাকা ছিল না আমার। সহজ পথটাই বেছে নিলাম। চুরি করতে শুরু করলাম কুকুর। এরমধ্যেই ছয়টা ল্যাবের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গেছে আমার। তোমাদের খতম করে দিয়েই চলে যাব কাছের একটা গ্রামে। কেউ জানতেও পারবে না আমার মতো এক ভয়ঙ্কর খুনি গ্রামে চলে যাবে। একটু থামল সে, তারপর বলল, জানো একেকটা কুকুর বিক্রি থেকে কতো পাবো আমি? এক হাজার ডলার! রীতিমতো বড়লোক হয়ে যাব। আর তা যদি হতে না-ও পারি, যদিও তার সম্ভাবনা নেই, তবু কুকুরের খাঁচা পরিষ্কার করার চেয়ে এ-কাজটা অনেক ভাল। রকফেলার এক লাখেই কোলি ফেরত নেবে আশা করি। অন্যগুলোও বিকিয়ে যাবে ভাল দরে। লোকটা থামতেই রবিন মুসার দিকে তাকাল। মুসা, কুকুরের খাঁচা পরিষ্কার করার কথা বলেছে, এর মানে বুঝেছ? পায়খানা পরিষ্কার! এখন বুঝতে পারছ কে কিডন্যাপার?