স্বল্প আলোয় চোখ সয়ে আসার পর একটা লনমোওয়ারের আবছা আকৃতি দেখতে পেল। একটা ওঅবেঞ্চও আছে ঘরে। এবার অন্যদিকে তাকাল ও। ধূসর গাড়িটা দেখতে পেল। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল ও, গাড়িটার চারপাশে এক চক্কর মারল। মাথার ব্যথাটা এখনও যাচ্ছে না। যা দেখবে ভেবেছিল তা-ই দেখতে পেল। গাড়িটার একটা দরজা হলদে রং করা।
গ্যারেজের কোনায় কী যেন নড়ে উঠল। বরফের মতো জমে গেল মুসা, তারপর সাবধানে ওদিকে মনোযোগ দিল। বিরাট একটা তারপুলিন দিয়ে কীসব যেন ঢেকে রাখা হয়েছে। নড়ে উঠল তলার জিনিসটা, তারপর গোঙানির আওয়াজ হলো। দ্রুত ওটার পাশে চলে গিয়ে ক্যানভাসটা সরাল মুসা। নীচে রবিন পড়ে আছে। ওর মতোই হাত-পা-চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে নথিকে। দ্রুত হাতে রবিনের বাঁধনগুলো খুলে ফেলল ও। জিজ্ঞেস করল, কী অবস্থা, রবিন?
মাথাটা গেছে, বলল রবিন। ছিঁড়ে পড়তে চাইছে যেন! কোথায় আমি?
কারও গ্যারেজে, জানাল মুসা। এখন বুঝতে পারছি আয়োলা মর্টন তার গাড়ি আর অ্যাপার্টমেন্ট আমাদের দেখতে দিতে চায়নি কেন। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল মুসা, কিন্তু আবার আঁচড়ানোর আওয়াজটা শুনতে পেয়ে, থেমে গেল। এবার আওয়াজটার পরপরই ভউ! হুফ! করে উঠল একটা কুকুর। পরস্পরের দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। আওয়াজটা ওদের বড় বেশি পরিচিত।
রাফিয়ান!
চুরি যাওয়া কুকুরগুলোর খোঁজ এখন জানে ওরা।
ওই ট্র্যাশব্যাগগুলোর পেছন থেকে আওয়াজটা এসেছে, বলল রবিন।
ময়লা আবর্জনা মাড়িয়ে গ্যারেজের আরেক কোনায় চলে এলো। দুজন। খাঁচাগুলোর সামনে আগে পৌঁছোল মুসা। নয়টা খাঁচা। প্রত্যেকটাতে একটা করে কুকুর রাখা আছে। ঘুমাচ্ছে বেশিরভাগই। ওরা বুঝতে পারল ওগুলোকে ড্রাগ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
চোরাই কুত্তা, বলল রবিন। খাঁচার ভিতর হাত ঢুকিয়ে রাফিয়ানের মাথা চুলকে দিল। গরাদে আঁচড় কাটল রাফিয়ান, বের হতে চায়। ভউ! ভউ! করে জোরাল ডাক ছাড়ল পরপর কয়েকবার।
অন্য খাঁচার কুকুরগুলোও নড়েচড়ে ঘুম ভেঙে জেগে উঠছে। শীঘি বিভিন্ন জাতের কুকুরের ডাকে ভরে গেল গ্যারেজের ভিতরটা।
শুকিয়ে গেল রবিন-মুসার মুখ। ওদের যে ধরে এনেছে সে এতো চিৎকার ডাকাডাকি শুনে নিশ্চয়ই কী ঘটল তার খোঁজ নিতে আসবে।
রাফিয়ানের খাঁচার দরজা খুলে দিল রবিন। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এলো রাফিয়ান, রবিনের বুকে দুপা তুলে দিয়ে গাল চেটে দিল।
রাফিয়ান ঠিক আছে, পরম স্বস্তির সঙ্গে বলল মুসা।
দরজায় আওয়াজ পেয়ে ওর স্বস্তি উবে গেল। রবিন ঝট করে দরজার দিকে তাকাল। কে যেন দরজার তালায় চাবি ঢুকিয়েছে! কিডন্যাপার! দ্রুত গ্যারেজের চারপাশে তাকিয়ে লুকানোর জায়গা খুঁজল দুই গোয়েন্দা।
১৪
এতো ক্লান্তি লাগছে যে কিশোরের মনে হলো পার্কের কোনও বেঞ্চে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাসায় যোগাযোগ করো, বলে দাও কোথায় আছো; আমরা চললাম, বলে তৃতীয়বার খোঁজা শেষে বিদায় নিয়েছেন তিন পুলিশ অফিসার। কাল সকালে আবার তদন্ত শুরু করবেন। ব্যাপারটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তাঁরা, কিন্তু এই মাঝরাতে এতো ঘন কুয়াশার মধ্যে তাঁদের আসলেই কিছু করার নেই।
হতাশ হয়েছে কিশোর, কিন্তু তাদের থাকতে অনুরোধ করতে পারেনি। বুঝতে পারছে, ওর-ও বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু ফিরবে কী করে! কী করে কারও সামনে মুখ দেখাবে ও? বাবা-মাকে ওর বাড়িতে থাকবে বলে এসেছিল রবিন আর মুসা। এখন ওরা নিখোঁজ, হয়তো মারাত্মক বিপদের মধ্যে আছে, আর ও ফিরে যাবে? তা হয় না।
একটা বেঞ্চে বসল কিশোর। অফিসার ওরাইলির বলা বাসায় যোগাযোগ কথাটা বারবার ওর মনের ভিতর ঘুরেফিরে আসছে। মন বলছে কথাটা আগেও কোথাও শুনেছে ও। সত্যিই শুনেছে? কোথায়? কপাল টিপে ধরল কিশোর। মনে হচ্ছে দুনিয়াতে ও ছাড়া আর কেউ নেই। থমথম করছে গোটা পার্ক।
কুকুরচরি রহস্য নিয়ে ভাবতে শুরু করল ও। সেই প্রথম থেকে কী কী ঘটেছে একে একে মনের মধ্যে নেড়েচেড়ে দেখছে।
বাসায় যোগাযোগ করো।
এবার মনে পড়ল ওর। প্রথম যেদিন কোলি চুরির পর ডগ-হাউসে গেল ওরা, তখন আয়োলা মর্টন ফোনে বাসায় যোগাযোগ করবে বলে খানিকক্ষণের জন্য চলে গিয়েছিল। এখন পরিষ্কার মনে পড়ছে। তরুণী বলেছিল বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলবে সে কোথায় আছে। তাকে বাড়তি ডিউটি দিতে হবে সেটা জানাতে গিয়েছিল আয়োলা। কিন্তু পরে অন্য সময় কথায় কথায় বলেছিল চাকরিটা তার খুব দরকার, গাড়ির তেল, মেরামতির খরচ আর অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া দিতে পারা নিয়ে চিন্তিত ছিল। আরও একবার বলেছিল তার অ্যাপার্টমেন্টে ওরা যাতে না যায়, অ্যাপার্টমেন্ট অগোছাল। এখন কিশোর বুঝতে পারছে, আয়োলা চায়নি ওরা তার অ্যাপার্টমেন্টে যাক। গেলে ওরা বুঝে ফেলত বাবা-মাকে ফোন করার কোনও কারণ নেই। আয়োলার। আসলে বাবা-মার সঙ্গে থাকেই না সে!
কোনও সন্দেহ নেই আয়োলা মর্টন মিথ্যে বলেছে।
যাকেই সে ফোন করে থাকুক, তার বাবা-মাকে করেনি।
করেছে ডগন্যাপারকে!
ওরা শ্যারনের বন্ধু জেনে খুব বিস্মিত হয়েছিল আয়োলা। সে কারণেই সে ফোন করে। ফোন করে কুকর্মের সঙ্গীকে জানিয়ে দেয় ওরা। তদন্ত করতে শুরু করেছে। নইলে অতো শীঘ্রি ওদের পিছু লেগে যেতে পারত না ডগন্যাপার। রাফিয়ানের দায়িত্ব ওরা নিয়েছে সেটাও বোধহয় জানিয়েছে। তারপর ডগন্যাপার ওদের অনুসরণ করে স্যালভিজ ইয়ার্ডে পৌঁছে যায়। ওখান থেকে রাফিয়ানকে চুরি করে।