রবিন আর মুসা অদৃশ্য, রাফিয়ানও নিখোঁজ।
ইতিকর্তব্য ঠিক করে ফেলল কিশোর, সিঁড়ি বেয়ে নেমে ফিরে চলল। রবিনের গাড়ির দিকে। ওটাতে মোবাইল ফোনটা আছে। ওখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে সাহায্য চাওয়া ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই।
প্রথবার রিং হতেই রিসিভার তুললেন একজন পুলিশ অফিসার। তিনিই এই শিফটের অফিসার ইন-চার্জ। জানালেন চিফ ইয়ান ফ্লেচার বাড়ি ফিরে গেছেন ডিউটি শেষে। কিশোরের বক্তব্য শুনে বললেন, পনেরো মিনিটের মধ্যে পার্কে পৌঁছে যাবেন তিনি দুজন সার্জেন্ট নিয়ে।
ঠিক তেরো মিনিটের মাথায় স্কোয়াড কার নিয়ে হাজির হলেন তারা। সরাসরি কাজের কথায় এলেন পুলিশ অফিসাররা।
ঠিক কতোক্ষণ হলো রবিন আর মুসা নিখোঁজ হয়েছে?
ঘড়ি দেখল কিশোর। বিশ মিনিট।
তা হলে ছড়িয়ে পড়ে খুঁজে দেখা যাক, বললেন অফিসার ইন-চার্জ ওরাইলি। অফিসার রনসন, আপনি সিঁড়ির দুপাশের টিলায় খোঁজেন। অফিসার জেমস, আপনি প্ল্যাটফর্মে খুঁজবেন। আমি আর কিশোর দেখব পার্কিং লট।
পার্কিং লটের পুবদিকটা কিশোরের দেখা হয়ে গিয়েছে সেটা অফিসার ওরাইলিকে জানাল ও। দুজন চলল পশ্চিম দিকে খুঁজে দেখতে।
পার্কিং লটের পশ্চিম দিকটা বড় বড় গাছ আর ঝোপ দিয়ে তিন দিক থেকে ঘেরা। মার্কারি লাইটের আলো কুয়াশার চাদর ছিন্ন করতে পারছে না। চারপাশে শুধু হলদে একটা আভা। রবিন পুব দিকের পার্কিং লটে গাড়ি রেখেছিল, কাজেই ডগন্যাপার হয়তো তার বাহন রেখেছে পশ্চিম দিকে। টর্চের দুর্বল আলোয় সতর্ক চোখে মেঝে দেখতে দেখতে চলল কিশোর। এমন কিছু ওর চোখে পড়ল না যা থেকে বোঝা যায় এদিকে গাড়ি রেখেছে চোরটা।
ক্লান্ত আর হতাশ লাগছে কিশোরের, কিন্তু বুঝতে পারছে এখন কোনওমতেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। হয়তো রবিন আর মুসার জীবন নির্ভর করছে সময় মতো ওদের খুঁজে বের করতে পারার উপর। অফিসার ওরাইলির পাশে পাশে হাঁটছে কিশোর, চারপাশে তাকাচ্ছে। কোনও সূত্রের আশায়।
.
মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়বে বলে মনে হলো মুসার। চোখ মেলল ও। কিছু দেখতে পেল না। চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে কাপড় দিয়ে। মাথায় হাত দিয়ে তালু কতোটা ফুলেছে বুঝতে চাইল। পারল না। হাত-পা বেঁধে ঠাণ্ডা মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে ওকে। ।
মিষ্টি গন্ধওয়ালা রুমালটার কথা এবার মনে এলো ওর। আসলে মাথায় আঘাত করা হয়নি, ড্রাগ দিয়ে ওকে অজ্ঞান করা হয়েছিল। সে কারণেই এই তীব্র মাথা-ব্যথা।
আঁচড়ের আওয়াজ শুনতে পেল ও। রাগে গা জ্বলছে মুসার। জীবনে এই প্রথম বারবার ওদের উপর টেক্কা দিয়ে গেছে কোনও লোক। তা-ও লোকটা একটা কুত্তাচোর!
রবিনের কথা মনে এলো। রবিন কোথায়? রবিনই কি আঁচড়ের আওয়াজ করছে?
ডাকতে গিয়েও মত পরিবর্তন করল ও। কোথায় আছে জানা নেই ওর। আরও কে আছে তা-ও অজানা। ডগন্যাপার লোকটা ধারেকাছে থাকতে পারে। ডাকাডাকি না করে চুপচাপ থাকবে ঠিক করল ও, দড়ির বাঁধন খোলার চেষ্টা করবে।
.
দুবার করে খোঁজা হলো পার্কিং লট, প্ল্যাটফর্ম আর দুপাশের টিলার উপর। রবিন-মুসার কোনও হদিশ পাওয়া গেল না। ক্লান্ত বিধ্বস্ত কিশোরের অনুরোধের জবাবে অফিসার ওরাইলি বললেন, বুঝতে পারছি। তোমার কেমন লাগছে, বাছা, কিন্তু এখানে বা আশেপাশে ওরা নেই। চিরুনি অভিযান চালিয়েছি আমরা। আর খুঁজে কোনও লাভ নেই। তবু যখন বলছ তো আরেকবার আমরা খুঁজব। তবে এবারই শেষ।
তিন পুলিশ অফিসার পার্কিং লট আর সৈকতের দিকে গেলেন এবার। কিশোর আবার উঠল অবর্ভেশন প্ল্যাটফর্মে। এখানেই শেষ। বারের মতো দেখা গেছে রবিন-মুসা আর ডগন্যাপারকে।
প্ল্যাটফর্মের গায়ে গা লাগানো টিলাগুলো বেশিরভাগ জায়গাতেই খাড়া উঠে গেছে অনেক উপরে। টিলার ধার দিয়ে হাঁটছে কিশোর। ঝোপটা দেখে মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। রুক্ষ টিলার গায়ে ওদিকে যেন সরু একটা পথ দেখা যায়, এদিকটা নেমে গেছে জমিনের দিকে! অব্যার্ভেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে ঝোপের মাঝ দিয়ে পথটা ধরে এগোল ও।
টর্চের আলো ফেলে দেখল আরও বেশ কয়েকটা পায়ের ছাপ আছে। একই লোকের পায়ের ছাপ। ওর আগেও পথটা ব্যবহার করেছে। কেউ। কিছুটা সামনে রুপালি কী যেন একটা টর্চের হলদে আলোয় ঝিকিয়ে উঠল। সামনে বেড়ে ওটা তুলল কিশোর। চিনতে দেরি হলো না। জিনিসটা মুসার ঘড়ি।, শিউরে উঠল কিশোর। ঘড়িটা যেখানে পেয়েছে সেখান থেকে উঁচু টিলার কিনারা মাত্র আধফুট দূরে। তা হলে কি মুসা টিলা থেকে নীচের ওই পাথুরে সৈকতে পড়ে গেছে? তা হলে তো মৃত্যু নিশ্চিত!
.
দড়ির বাঁধন খানিকটা ঢিলে করতে পেরেছে মুসা। খুব দক্ষ হাতে বাঁধা হয়নি ওকে। আরও খানিক চেষ্টা করলে হয়তো নিজেকে মুক্ত করতে পারবে ও।
আঁচড়ানোর আওয়াজটা আবার শুনতে পেল মুসা। আরও খানিক কসরত করার পর ডানহাতটা দড়ির গিঁঠ থেকে ছাড়াতে পারল ও। এখন পর্যন্ত কিডন্যাপারের উপস্থিতির কোনও আলামত টের পাওয়া যায়নি। হাতের বাঁধন খুলে চোখের বাঁধনটাও খুলল মুসা এবার। পায়ের বাধন খুলতেও দেরি হলো না।
প্রায়-অন্ধকার একটা ঘরে আছে ও। অতি সামান্য যে আলোটুকু আসছে সেটা আসছে কয়েকটা জানালার তক্তার ফাঁক দিয়ে আর নীল একটা ডীম লাইট থেকে। জানালার কাঁচ মনে হলো রং করা। জেসিকা স্প্রিংগারের গ্যারেজে আছে কি না ভাবল মুসা।