খাবার দিতে গিয়েই আমি টের পাই কোলিটা নেই, বলল শ্যারন। প্রথমে এসেই অফিসের কাজগুলো সেরেছিলাম আমি, তারপর আসি খাওয়া দিতে।
অফিসের কাজ সারতে কতোক্ষণ লাগে? জিজ্ঞেস করল রবিন। ওর হাতে নোটবুক আর কলম।
একঘণ্টা মতো, জবাব দিল শ্যারন। তারপর যখন দেখলাম কোলিটা নেই, তখনই বুঝলাম কোথাও কোনও মস্ত গোলমাল হয়ে গেছে। হার্বার্ট রকফেলার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন, কাজেই ওটাকে আর কারও নিয়ে যাবার কথা নয়। এমনিতে কাউকে কোলিটা ছুঁতেও দেন না তিনি। খারাপ কিছু ঘটেছে বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার লেবউফকে ফোন করি আমি।
আর আমি ফোন করি পুলিশে, বললেন লেবউফ।
সকাল সাতটা থেকে তোমার ডিউটি, ঠিক? শ্যারনকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ। আমি সাতটার সময় এসে আয়োলার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিই।
আয়োলার দিকে ফিরল কিশোর। আপনি যখন শ্যারনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ঘুমাতে গেলেন, তখন কোলিটা ছিল?
সত্যি বলতে কী, আমি খেয়াল করিনি, জানাল আয়োলা। কিন্তু সারারাত ডিউটি করেছি, কোনও অস্বাভাবিক শব্দ শুনিনি। জোর দিয়েই বলতে পারি, আমার ডিউটির সময় কিছু ঘটেনি।
ডগ-হাউস শুরুর সময় থেকেই আমাদের সঙ্গে আছে আয়োলা, আয়োলার পক্ষ টেনে বললেন লেবউফ। ও যদি বলে অস্বাভাবিক কোনও শব্দ শোনেনি, তা হলে সেটাই ঠিক। ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি আমরা।
আরও কেউ চাকরি করে এখানে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
না, জানালেন লেবউফ। আমি আর স্ত্রী লরা ছুটির দিনগুলোতে কাজ চালিয়ে নিই। ব্যবসাটা আরও বড় করতে টাকা জমাচ্ছি আমরা, হলিউডের ডগ-হাউস ন্যাশনাল মোটেলটা কিনতে চাই। ফাস্ট ফুডের পর এতো ভাল ব্যবসা আর হয় না।
করিডরের খালি খাঁচাগুলোর দিকে তাকাল কিশোর। লেবউফ ওর। চাহনি লক্ষ করেছেন। বললেন, ব্যবসা এখনও ততোটা জমে ওঠেনি। কিন্তু শীঘ্রি অবস্থা ফিরবে। সেজন্যেই আমি চাই না ডগ মোটেল নিয়ে বাজে প্রচারণা হোক। অথচ খবরের কাগজওয়ালারা এখন আমার পেছনে উঠে পড়ে লাগবে। রকফেলার কোটিপতি, তার ব্যাপারে খবর ছাপতে সাংবাদিকরা এক পায়ে খাড়া।
এ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল আয়োলা, ফিরে গেল মুসার প্রশ্নে। বলল, আমি যখন এখানে প্রথম কাজে যোগ দিলাম, তখন আরও দুজন কর্মচারী ছিল। তাদের একজন অ্যানিমেল টেকনিশিয়ান। অন্যজন এক মহিলা। নাম জেসিকা স্প্রিংগার। দুজনের কেউ এখন আর এখানে চাকরি করে না।
হ্যাঁ, কথাটা ঠিক, বললেন লেবউফ। নিক মিলহিজার নাম ছিল ওই ছোকরা টেকনিশিয়ানের। কুকুরের স্বাস্থ্য দেখভাল করতে তাকে চাকরিতে নিয়েছিলাম আমরা। পশুর ডাক্তার রাখলে যে খরচ হতো তার চেয়ে অনেক কম টাকাতে তাকে চাকরিতে নিই। ডাক্তারের বদলে তাকে দিয়েও আমাদের কাজ চলে যাচ্ছিল। নিক মিলহিজার আর জেসিকা প্রিংগারের বদলে এখনও কাউকে চাকরিতে নিইনি আমরা।
নিক মিলহিজার চাকরি করল না কেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর। রবিন নোটবুকে তথ্যটা টুকে নেওয়ার জন্য কলম বাগিয়ে ধরল।
ওকে বরখাস্ত করেছি, বললেন লেবউফ। কুকুরের গু পরিষ্কার করতে রাজি হয়নি সে। বলেছিল ওটা অ্যানিমেল টেকনিশিয়ানের কাজ নয়।
আমি মিলহিজারকে চিনি, তথ্য জোগাল আয়োলা, সে কুকুরচুরির সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত থাকার মতো মানুষ নয়।
নোটবুকে তথ্যটা টুকে নিল রবিন। মুসা ঢুকে গেছে কোলির ঘরে। কোনও সূত্র পাওয়া যায় কি না খুঁজে দেখছে।
আর জেসিকা স্প্রিংগার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
দিনের ডিউটি ছিল তার, জানাল আয়োলা।
ভাল চাকরি পেয়ে চলে গেছে জেসিকা, বললেন লেবউফ। নতুন পেটফুড সুপারস্টোরে কাজ নিয়েছে সে।
এমন কারও কথা আপনি মনে করতে পারেন যে আপনার ওপর খেপে আছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কারিনা মুর, এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে বললেন লেবউফ। পত্রিকায় যেদিন ডগ মোটেল চালু হবার কথা শুনল সেদিন থেকেই আমার পেছনে। লেগেছে সে।
পাশের বাড়িতেই থাকেন উনি, জানাল আয়োলা মর্টন।
বিড়াল পোষে কারিনা মুর, বললেন লেবউফ। অন্তত শতখানেক বিড়াল আছে তার বাসায়। কুকুর অসম্ভব ঘৃণা করে মহিলা। কোর্টে পিটিশনও করেছিল, যাতে আমি ডগ-হাউস চালু করতে না পারি। জুরির সিদ্ধান্তে যখন আমি জিতলাম, আরও খেপে গেল সে। বাড়িটা বানানোর সময় পিকেটিংও করেছে। পত্রপত্রিকায় কড়া কড়া সব চিঠি দিয়েছে। সেগুলো ছাপাও হয়েছে। গত সপ্তাহে তার একটা চিঠি ছাপা হয়েছে। তাতে সে অভিযোগ করেছে, পুরো এলাকায় কুকুরের গায়ের দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না।
আমি তো কোনও গন্ধ পাচ্ছি না, বলল মুসা। কোলির ঘর থেকে এই মাত্র বেরিয়ে এসেছে ও।
সবকিছু ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার, খেয়াল করল কিশোর।
হুমকি দিয়ে কিছু ফোন আসছে ইদানীং, বলল আয়োলা। আমি নিজের পরিচয় দিলেই রেখে দেয়। চাপা গলায় কথা বলে, পুরুষ না মেয়ে বোঝা যায় না। ঠিক জানি না, তবে সে কারিনা মুরও হতে পারে।
কোলিটা চুরির সঙ্গে এইসব ফোনকলের যোগাযোগ আছে মনে করছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
জানি না, বলল আয়োলা।
পাওয়া যাবে কোলিটাকে? উদ্গ্রীব দেখাল শ্যারনকে।
তদন্ত করব আমরা, আশ্বাস দিল মুসা।
রবিন বলল, সাধ্যমতো সবকিছুই করব।
তার মানে তোমরা তদন্ত করছ? দ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন গ্রেগ লেবউফ।
শ্যারন আমাদের বান্ধবী, বলল কিশোর। ওর জন্যে এটুকু করা আমাদের কর্তব্য।