না। নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।
বুদ্ধিমান ছেলে, খিকখিক করে হাসল লোকটা। এবার শোনো আমি কী করতে বলি।
রবিনকে ইশারা করল কিশোর, রবিন নোটবুক আর কলম নিয়ে তৈরি হয়ে গেল।
লুকআউট পয়েন্টে আজ মাঝরাতে আসবে। পুবের পার্কিং লটে গাড়ি রাখবে। ড্রাইভার আর প্যাসেঞ্জার, দুদিকের জানালার কাঁচই নামিয়ে রাখবে। তারপর অপেক্ষা করবে। ওখানে তোমাদের পরবর্তী নির্দেশ দেয়া হবে। যদি কোনও চালাকি করতে যাও, যেমন পুলিশে রিপোর্ট করা বা অন্য কিছু, তা হলে রাফিয়ানকে এমন একটা ইঞ্জেকশন দেব যে ওর ঘুম আর ভাঙবে না কোনদিন। সেক্ষেত্রে আমি আবার ফোন করে তোমাদের জানিয়ে দেব কোথা থেকে রাফিয়ানের লাশ সংগ্রহ করতে হবে। যা বলেছি মনে থাকবে?
থাকবে।
গুড, সন্তুষ্ট মনে হলো লোকটাকে, তারপর বলল, আরেকটা কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
কী?
তুমি আর ওই কালো ছোকরা এসবের মধ্যে থাকবে না। শুধু তোমাদের বন্ধু যাবে ওখানে। একমাত্র তা হলেই রাফিয়ানকে ফেরত দেব। ঠিক মাঝরাতে। রবিন মিলফোর্ড একা এক হাজার ডলার নিয়ে আসবে। কোনও চালাকি নয়। রাখছি। ফোনের লাইন কেটে গেল।
১২
পরস্পরের দিকে তাকাল তিন গোয়েন্দা। লোকটা ওদের সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানে। কিন্তু কীভাবে?
এসো একটা পরিকল্পনা করে ফেলি, নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। লোকটার কথা মত রবিন একা যাবে। ড্রাইভিং সিটে ও একাই থাকুক। মুসা, তুমি লুকিয়ে থাকবে পেছনের সিটের সামনে পা রাখার জায়গায়। আমি থাকব গাছের আড়ালে কাছাকাছি কোথাও। লোকটার দৈহিক আকৃতি মনে আছে? পাতলা-সাতলা লোক। একা আসবে বলেই মনে হয়। তা-ই যদি আসে, তা হলে তাকে তিনজন মিলে কাবু করতে খুব একটা অসুবিধে হবার কথা নয়। এবার মুক্তিপণের টাকা। গত গ্রীষ্মে স্যালভিজ ইয়ার্ডে কাজ করে আমরা বারোশো ডলার পেয়েছিলাম। ওখান থেকে একহাজার ডলার নিয়ে যাব আমরা। কারও কোনও কথা? দুই বন্ধুর দিকে তাকাল কিশোর। ওরা কিছু না বলায় আবার ও বলল, চাচীর কাছে অনুমতি নিয়ে নেব আমি। তোমরা আন্টিদের বলতে পারো আজ রাতে আমার বাসায় থাকবে। ঠিক আছে?
নীরবে সায় দিল রবিন আর মুসা। রাতে ওরা বাইরে বের হবে, কাজেই চাচীর অনুমতি আদায় করাটাই সবচেয়ে কঠিন হবে। সেটার দায়িত্ব কিশোর নিয়েছে।
বাসা থেকে অনুমতি পেতে কোনও অসুবিধে হলো না রবিন আর মুসার।
খালি গোয়েন্দাগিরি! কখন কোন বিপদে পড়বে ঈশ্বর জানেন! সর্বক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি আমি কখন কী হয়ে যায়! নানা কথাই বললেন মেরি চাচী, কিন্তু ওদের বাধা দিলেন না। অনুমতি দিয়ে বলে দিলেন, সাবধানে থাকবি তোরা।। তাঁকে ওরা কথা দিল, কোনও ঝুঁকি নেবে না।
রাত এগারোটার সময় রবিনের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রবিন আর মুসা। মুসা শুয়ে আছে পিছনের পা-দানীতে। স্যালভিজ ইয়ার্ডের উপর নজর রাখা হতে পারে ভেবে পনেরো মিনিট পর ওর পুরোনো এইচ হান্ড্রেড এস মটর সাইকেল নিয়ে ওদের তৈরি নতুন গোপন দরজা, গোপন ছয় দিয়ে বের হলো কিশোর। গোপন ছয় দেয়ালের সঙ্গে মিশে থাকা চুনকাম করা পুরু কাঠের শক্ত একটা ফটক, দেখে বোঝার উপায় নেই ওটা আসলে দেয়াল নয়। বন্দরের দিকে না গিয়ে অন্যদিকে চলেছে। কিশোর। ঘুরপথে বন্দরের কাছের ওই পার্কে পৌঁছোবে।
অনেক পথ ঘুরে পিছনে ফেউ লাগেনি বুঝে বন্দরের দিকে চলল ও।
আজ রাতে চাঁদ ওঠেনি। নিশ্চল বাতাসে থোকা থোকা কুয়াশা ভাসছে। পার্কের কাছে গিয়ে মটর সাইকেলের এঞ্জিন বন্ধ করে দিল কিশোর, পুব পার্কিং লটে ঢুকে দ্বিচক্রযানটা পার্ক করে রেখে দেখল প্রাচীন দুটো বিচ গাছের ছাউনির নীচে গাড়ি রেখেছে রবিন। আবছা ভাবে রবিনকে সামনের সিটে বসে থাকতে দেখল ও। মুসা নিশ্চয়ই পিছনে লুকিয়ে শুয়ে আছে।
নির্জন পার্ক থমথম করছে। একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকল কিশোর, চারপাশে নজর বুলাচ্ছে।
অ্যাসফল্টের উপর পড়া আবছা আলো আর কুয়াশার কারণে কিশোরের প্রথমে মনে হলো নড়াচড়াটা ওর চোখের ভুল। তারপর আবার নড়াচড়া দেখতে পেল ও। কালো পোশাক পরা একটা মূর্তি নিঃশব্দে রবিনের গাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে। চোখ কুঁচকে আরও ভাল করে দেখতে চেষ্টা করল কিশোর।
ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকটা, এখন সরাসরি রবিনের গাড়ির দিকে দৌড়ে চলেছে। টান টান উত্তেজনা অনুভব করল কিশোর। লোকটা গাড়ির প্যাসেঞ্জার সাইডের জানালা দিয়ে কী যেন ছুঁড়ে দিয়েছে ভিতরে। কী? কে এই লোকটা? কিশোর চিন্তা করল, ধাওয়া করবে নাকি ও? নিজেকে সাবধান করল, পরিকল্পনা মতো কাজ করতে হবে। আগে মুসা আর রবিন লোকটাকে ধরুক, তারপর সাহায্য করতে হাজির হবে না থেমে দৌড়ে চলে গেল লোকটা।
কিশোর? ছোট্ট মাইক্রোফোনে রবিনের গলা শুনতে পেল কিশোর।
কী, রবিন?
লোকটা একটা চিঠি ফেলে গেছে। কাগজের ভাঁজ খোলার আওয়াজ শুনতে পেল কিশোর। জোরে জোরে পড়ল রবিন গাড়ির ভিতরের হলদে বাতির আলোয়। ওর পড়া শেষ হতে কিশোর জানতে চাইল লোকটার চেহারা ও দেখেছে কি না।
না। শুধু পিঠ দেখেছি।
নির্দেশ মতো কাজ করো। মুসা তৈরি তো?
হ্যাঁ। ঠিক পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করব আমি এখানে, তারপর গাড়ি থেকে বের হবো।
পাঁচটা মিনিট যেন পাঁচ বছর, সময়টা আর পার হতে চায় না। তারপর বের হলো রবিন। দরজা বন্ধ করে দিল। মুসা এখনও শুয়ে আছে পিছনের পাদানীতে। বদলে গেছে ওদের পরিকল্পনা। লোকটা রাফিয়ানকে নিয়ে আসেনি, বদলে পরবর্তী নির্দেশ লেখা কাগজ দিয়ে উধাও হয়ে গেছে।