ও ব্যাপারেও আমরা ভেবেছি, বলল কিশোর।
মুসা আলোচনায় যোগ দিল। এমনও হতে পারে নিক মিলহিজারই কুকুরচোর। তাঁর সঙ্গে ইদানীং আপনার যোগাযোগ হয়েছে কোনও?
না, তার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি আমার চাকরি ছাড়ার পর থেকে। একসঙ্গে কাজ করতাম, সেই সূত্রে পরিচয়। মিস্টার লেবউফের সঙ্গে ঝগড়া করে চলে যাবার পর আর কোনও খবর রাখিনি।
কাজে কি গাড়ি নিয়ে আসতেন মিলহিজার? প্রশ্ন করল রবিন।
মনে হয়, দ্বিধার ছাপ পড়ল আয়োলার কণ্ঠে। তবে খেয়াল করে দেখিনি।
তাঁর পিকআপ ট্রাক কখনও দেখেননি? চট করে এবার জিজ্ঞেস করল কিশোর।
পিকআপ না গাড়ি তা জানি না। আসলে একেবারেই ভাবিনি এসব নিয়ে।
আর হারল্ড মুর? জিজ্ঞেস করল মুসা। আপনি তো বলেছেন কয়েকবার তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছেন। তিনি কি গাড়ি ব্যবহার করেন?
না। মাথা নাড়ল আয়োলা। বাসের জন্য অপেক্ষা
দেখেছি। টেবিলে রাখা বেশ কিছু কাগজ তুলে নিল তরুণা, ক্ষমাপ্রার্থনার হাসি হাসল।
শোনো, কিছু মনে কোরো না, তবে আমার অনেক কাজ পড়ে আছে, মিসেস লেবউফ আসার আগেই শেষ করতে হবে।
আমরা আর আপনার সময় নষ্ট করবনা, বলল কিশোর। কিন্তু দুটো কথা। এক, মিসেস লেবউফকে চোখ-কান খোলা রাখতে বলবেন। আর দুই, ডিউটির সময় জেগে থাকাই আপনার জন্যে মঙ্গল হবে।
আস্তে করে মাথা দোলাল আয়োলা মর্টন। ওদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিল।
মুসার গাড়িতে উঠে কিশোর বলল, আমরা ডগ-হাউসে আছি সেটা ডগন্যাপার জানল কী করে? অজান্তেই চারপাশে একবার দেখে নিল ও। মন বলছে লোকটা কাছাকাছি কোথাও আছে।
রবিন প্রশ্ন তুলল, ফোনটা কিশোরের সেটা জানানোর আগে কতোক্ষণ দেরি করেছে আয়োলা মর্টন?
কয়েক সেকেন্ড, জবাব দিল কিশোর।
রিয়ার ভিউ মিররটা দেখে নিয়ে রওনা হলো মুসা। গাড়ি চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করল, কেন ভাবছ এসবের সঙ্গে আয়োলা মর্টনের কোনও সম্পর্ক আছে? কিশোর, তোমার কি ধারণা সে-ই ফোনে বলেছে ওখানে আছি আমরা?
সম্ভব, বলল কিশোর। হয়তো বলেছে। আমার যতদূর মনে পড়ে ও শুধু ফোন তুলে হ্যালো বলেছিল। তারপরই আমাকে ডেকে দেয়।
তা হলে কাকে সন্দেহ করব আমরা? হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল রবিন। হারল্ড মুর, নাকি নিক মিলহিজার?
দুজনকেই সন্দেহ করব, বলল কিশোর। আমাদের দরকার প্রমাণ। তার আগেই কাউকে আমরা অভিযুক্ত করতে পারি না। …আচ্ছা একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? লাল ট্রাক বা হলদে দরজাওয়ালা গাড়ি যদি হারল্ড মুরের হতো তা হলে একবারও কি ওগুলো আমরা ড্রাই ডকে দেখতে পেতাম না?
হয়তো অন্য কোথাও পার্ক করে, বলল মুসা।
নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর, তারপর মোবাইল ফোনটা বের করে কর অফিসে ডায়াল করল। এবার মিস্টার বার্লিসনকে পাওয়া গেল। তিনি জানালেন ওয়্যারহাউসটা রয়াল রেস্টোরেশন নামের এক কোম্পানির। ওই একই কোম্পানি ড্রাই-ডকেরও মালিক। বন্দরের ধারেকাছের বেশিরভাগ ওয়্যারহাউস আর দোকানপাটেরও মালিক এই আর.আর.সি।
মিস্টার বার্লিসনকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিল কিশোর, বন্ধুদের জানাল কী জেনেছে।
তা হলে তো ওয়্যারহাউসের পেছনের দরজার কথা হারল্ড মুরের। জানা থাকা স্বাভাবিক, বলল মুসা। ডক কর্মীদের হয়তো ওটা ব্যবহার করারও অনুমতি আছে।
প্রমাণ, আমাদের দরকার অকাট্য প্রমাণ, বলল কিশোর। এবার চলল, ফেরা যাক।
স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকে গাড়ি রেখে সোজা কিচেনে চলে এলো ওরা, হালকা নাস্তা সেরে নিল। বেরিয়ে মোবাইল হোমে যাবে ঠিক করেছে, এমন সময় কিচেনের ফোনটা বেজে উঠল। রিসিভার তুলল রবিন। ওপ্রান্তের কথা শুনল হ্যালো বলার পর, তারপর রিসিভার রেখে দিল। মুখটা লালচে দেখাচ্ছে ওর। বলল, লোকটা আমাদের পনেরো মিনিট সময় দিয়েছে মনস্থির করার! তদন্ত বন্ধ করতে হবে, সেই সঙ্গে একয়দিন তদন্ত করেছি বলে এক হাজার ডলার দিতে হবে, তা হলে রাফিয়ানকে ফেরত দেবে সে! পনেরো মিনিট পর আবার ফোন করবে বলে রেখে দিল।
পনেরোটা মিনিট যেন পনেরো ঘণ্টার সমান দীর্ঘ। অপেক্ষার সময়গুলো যেন কাটতেই চায় না। আবার ফোন বেজে উঠতেই কিশোর ধরল এবার।
কী সিদ্ধান্ত নিলে তোমরা? চাপা একটা গলা জিজ্ঞেস করল। বোধহয় মুখের উপর তোয়ালে রেখে কথা বলছে।
আমরা রাফিয়ানকে ফেরত চাই, বলল কিশোর। সেজন্যে আপনি যা বলবেন সেই মতোই কাজ করব আমরা।
কিশোর আর ডগন্যাপার কথা বলছে, এর ফাঁকে রাশেদ চাচার প্যারালাল ফোনের কলার আইডি বক্স চেক করে দেখল মুসা। রবিন খসখস করে লিখে নিল লোকটা কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছে। মোবাইল থেকে ফোন, কোম্পানিতে কল করল এবার মুসা, তাদের জিজ্ঞাসা করে জানা গেল ওটা বে স্ট্রিটের একটা পে-ফোন। জায়গাটা বন্দরের কাছেই।
আমরা শুধু রাফিয়ানকে ফেরত চাই না, অন্য কুকুরগুলোও ফেরত চাই, কিশোরকে বলতে শুনল ওরা।
সুইচ টিপে রিসিভার নামিয়ে কথা বলছে এখন কিশোর, স্পিকারে ডগন্যাপারের কথা শুনতে পেল ওরা। যা বলেছি তা ওই একবারই বলেছি। রাফিয়ানকে ফেরত পাবে, তার বদলে দিতে হবে এক হাজার ডলার। কথা দিতে হবে তদন্ত করবে না আর। নইলে রাফিয়ানের লাশ পাঠিয়ে দেব।
অন্য কুকুরগুলোর কী হবে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
রাফিয়ানকে ফেরত দেয়ার পরও যদি তোমরা তদন্ত করে তা হলে সাধারণ কুকুর যে-কয়টা আছে, প্রতিদিন ওগুলোর একটা করে মেরে তোমাদের ঠিকানায় পাঠাব। একটু বিরতি, তারপর উগন্যাপার জিজ্ঞেস করল, আর কোনও প্রশ্ন?