গতরাতে মিসেস লেবউফ ডিউটি দিয়েছেন, বলল আয়োলা। মাঝরাতে আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর বিশ্রাম নিতে যান।
তা হলে রাত তিনটে সাড়ে তিনটের সময় আপনিই ডিউটিতে। ছিলেন?
হ্যাঁ। কিন্তু আমি তো কুকুর আনার ব্যাপারে কিছু জানি না! কার কাছে শুনলে রাতে কুকুর আনা হয়েছে?
সেটা আপাতত বলা যাবে না, নরম গলায় বলল কিশোর।
নিশ্চয়ই কারিনা মুরের কাছ থেকে শুনেছ! মুখটা লাল হয়ে গেল আয়োলা মর্টনের।
এখন এ-ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে চাই না। নিজের মত থেকে সরল না কিশোর।
রেগে গেছে আয়োলা মর্টন। বলল, মহিলা নির্ঘাত বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলেছে।
কেন উনি মিথ্যে বলবেন?
অন্য কারও ওপর যাতে সন্দেহ পড়ে সেজন্যে। হঠাৎ আয়োলার চেহারায় অপরাধবোধের ছাপ পড়ল। কেমন যেন মিইয়ে গেল সে।
কী ব্যাপার, মিস মটন? জিজ্ঞেস করল মুসা। কোনও সমস্যা?
বিব্রত দেখাল আয়োলাকে। আগে প্রমি করো কাউকে বলবে না।
কী ব্যাপারে প্রমি সেটা না জানলে… কথা শেষ করল না। কিশোর।
রাতে বার কয়েক আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কাউকে বোলো না প্লিজ। আমার চাকরি চলে যাবে।
আসলে আপনি বলতে চাইছেন ডিউটির সময়টা ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন? সরাসরি প্রশ্ন করল কিশোর।
অনেকখানি সময় ঘুমিয়েছি, স্বীকার করল আয়োলা। মিস্টার লেবউফ শ্যারনকে বিদায় করে দেয়ার পর থেকে দ্বিগুণ ডিউটি করতে হচ্ছে আমাকে।
আপনি কিছু মনে না করলে আমরা কেনেলটা আরেকবার ঘুরে দেখতে চাই, বলল কিশোর।
কোনও সমস্যা নেই, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল আয়োলা মর্টন। টুল থেকে নেমে আগে আগে চলল সে। চাবি দিয়ে ভিতরে যাওয়ার দরজাটা খুলল।
ভিতরে ঢুকে কিশোর-মুসা-রবিন দেখল দুপাশের সবগুলো খাঁচাতে এখন কুকুর আছে। ব্যবসা আগের চেয়ে ভাল যাচ্ছে, মন্তব্য করল কিশোর।
হ্যাঁ, আগের চেয়ে ভাল, বলল আয়োলা। তবে মিস্টার লেবউফ এখনও সন্তুষ্ট নন।
এক ক্যান ডগট্রিট বিস্কিট খুলে কুকুরগুলোকে খাওয়াতে শুরু করেছে মুসা, তবে ওর কান খাড়া। হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল ও। একটা গোল্ডেন রিট্রিভারের গলার কলারে মালিকের নাম আর ঠিকানা লেখা একটা কার্ডবোর্ড ঝুলছে। কিন্তু পাশের কাঁচার কুকুরটার গলায় ওরকম কোনও কার্ডবোর্ড নেই।
ওটা দেখাল মুসা। এটার মালিক কে?
এখনও আমি ওটার মালিকের নাম টাইপ করে উঠতে সময় পাইনি, লালচে হয়ে গেল আয়োলার চেহারা। আজকে তোমরা এসে শুধু আমার কাজের খুঁতই দেখতে পাচ্ছ। তিন বন্ধুর দিকে পালা করে তাকাল তরুণী, তারপর নরম গলায় বলল, প্লিজ, মিস্টার লেবউফকে কিছু বলে দিয়ো না। এই কাজটা সত্যিই আমার খুব দরকার। গাড়ির তেল, মেরামতির খরচ, অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া… মিইয়ে গেল আয়োলার কণ্ঠ। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে অত্যন্ত শঙ্কিত।
বেশ কয়েকটা কুকুরেরই মালিকের নাম এখনও লেখা হয়নি, বলল মুসা। কেনেলের দরজায় ঝোলানো ক্লিপবোর্ডটা দেখেছে ও। এখানে অন্তত বিশটা কুকুর আছে। আর তাদের মধ্যে নাম লেখা মাত্র পনেরো ষোলোটা।
জানি, দীর্ঘশ্বাস ফেলল আয়োলা। বাকিগুলোর মালিকের নাম লিখে ফেলব আমি। ফোন বেজে উঠল অফিসে। এক্সিকিউয মি, বলে প্রায় দৌড়ে চলে গেল আয়োলা।
কুকুরের লিস্টিতে চোখ বুলাল কিশোর, রবিন আর মুসা ঘুরে ঘুরে কুকুরগুলো দেখছে। খানিক পরই কেনেলের দরজায় আয়োলার মুখ দেখা গেল। বিস্মিত স্বরে সে বলল, ফোনটা কিশোরের!
অফিসে ঢুকল কিশোর, রিসিভার কানে ঠেকিয়ে বলল, কিশোর পাশা বলছি।
রবিন আর মুসাও চলে এসেছে ওর পাশে। কিশোরকে আর কিছু বলতে শুনল না ওরা। কিশোর শুধু রিসিভার কানে ঠেকিয়ে রেখেছে, কথা যা বলার বলছে ওদিকের লোকটা। খানিক পরে রিসিভারটা আয়োলার দিকে বাড়িয়ে দিল কিশোর। রবিন-মুসা খেয়াল করল কিশোর গুডবাই বলেনি।
কী ব্যাপার? রিসিভার নিল আয়োলা।
কী হলো, কিশোর? জিজ্ঞেস করল মুসা।
হুমকি দিল, শুকনো গলায় বলল কিশোর। বলেছে: এক্ষুনি তদন্ত বন্ধ করো, নইলে সাতিক বিপদে পড়ে যাবে।
রবিন প্রশ্ন করল, গলাটা কার চিনতে পেরেছ?
না, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কিশোর। মুখে বোধহয় রুমাল চেপে ধরে রেখেছিল। আবছা শোনাচ্ছিল গলাটা। কী বলেছে জানো? বলেছে। আমরা যদি তদন্ত বন্ধ না করি, তা হলে রাফিয়ানের লাশ পৌঁছে যাবে স্যালভিজ ইয়ার্ডে!
১১
কুকুর চোর পরিষ্কার কথা বলেছে, আবার বলল কিশোর। আমরা যদি তদন্ত বন্ধ না করি, তা হলে রাফিয়ানকে খুন করবে সে।
যা বলছে সেটা করাই বোধহয় তোমাদের উচিত হবে, কাঁপা গলায় বলল আয়োলা। ভয়ঙ্কর খারাপ লোক নিশ্চয়ই, নইলে এরকম হুমকি দিত না।
লোকই তা আপনাকে কে বলল? সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করল কিশোর।
গলার আওয়াজে তো বোঝার উপায় ছিল না।
মুহূর্তের জন্য থমকে গেল আয়োলা, তারপর বলল, আন্দাজ করে নিয়েছি কুকুর চুরির পেছনে পুরুষমানুষেরই হাত আছে। তবে বলা যায়। না, মেয়েরাও তো চুরি করে।
আপনাকে আমরা সন্দেহ করছি না, পরিবেশ সহজ করতে বলল কিশোর। সেই প্রথম থেকেই আমাদেরও ধারণা কোনও লোকই কাজগুলো করছে। কিন্তু টেলিফোনে যে হুমকি দিল, তার গলা এতো চাপা শোনাচ্ছিল যে ছেলে না মেয়ে বোঝা যায়নি।
এমন কী হতে পারে হারল্ড মুর ফোনটা করেছিল? জিজ্ঞেস করল আয়োলা। হয়তো বোনের হয়ে নোংরা কাজগুলো সে-ই করছে।