ফোরম্যান দৌড়ে এসেছে, চেহারায় নিখাদ উদ্বেগ। হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, ভাগ্যিস গায়ে পড়েনি!
কর্মীরা তিন গোয়েন্দা আর ফোরম্যানকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। একজনের দেখাদেখি বাকিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ল পাইপ সরিয়ে নিতে।
আরেকটু হলেই গিয়েছিলে, বললেন ফোরম্যান। কেবলটায় দোষ ছিল।
ডকের উপর চোখ বুলাল কিশোর। হারল্ড মুর বেশ খানিকটা দূরে কাজ করছে। দুর্ঘটনা দেখেও এগিয়ে আসেনি সে।
মিস্টার মুর এসে দেখছেন না কেন, ফোরম্যানকে বলল কিশোর।
তাঁর সঙ্গের কর্মীরাই তো ঝুমটা নিয়ে কাজ করছিল।
এড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের, বললেন ফোরম্যান। ওর বোধহয়। ওকেই দায়ী করব আমি।
কেবলটা দেখল কিশোর। মনে হলো না ধারাল কিছু দিয়ে ওটা কাটা হয়েছে। সম্ভবত ওজনের কারণে এমনিই ছিঁড়ে গেছে।
ফোরম্যান বললেন, এধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখি। কিশোরের দিকে তাকালেন। বুঝতে পারছি তুমি ভাবছ এসবের পেছনে হারল্ড মুরের হাত থাকতে পারে। যদি ব্যাপারটা দুর্ঘটনা না হয় তা হলে আমি তোমাদের জানাব।
নিজেদের কার্ড দিয়ে ফোরম্যানের কাছ থেকে বিদায় নিল ওরা। শেষবারের মতো হারল্ড মুরকে একবার দেখে গাড়ি স্টার্ট দিল মুসা। এবার রওনা হলো ওরা কারিনা মুরের বাড়ি লক্ষ্য করে।
বারান্দাতেই দাঁড়াও, কিশোর কলিং বেল বাজানোর পর দরজা সামান্য ফাঁক করে বলে উঠলেন কারিনা মুর। হারল্ড বলেছে তোমাদের সঙ্গে কথা বলাও আমার ঠিক হয়নি। তোমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিতে নিষেধ করে দিয়েছে ও।
তা হলে মিস্টার মুরের সঙ্গে কথা হয়েছে আপনার এ-ব্যাপারে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
কথা হয়েছে দশ মিনিটও হয়নি। বলেছে তোমরা শিপইয়ার্ডে গিয়েছিলে, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটায় তাকে সন্দেহ করে ফোরম্যানের সঙ্গে কথা বলেছ। তিক্ত হাসলেন কারিনা মুর। আমার ছোট ভাই একটা মশাও মারতে পারে না।
মিস্টার মুরের কাছে শুনলাম কাল রাতে আপনি ডগ-হাউসের সামনে থেকে একটা ট্রাকে করে কুকুর নামানো দেখেছেন, বলল কিশোর। তিনি কি ঠিক বলেছেন?
ঠিকই বলেছে। ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক বলেও মনে হয়নি।
কেন? ঠিক কী দেখেছেন আপনি?
বিচ্ছিরি চেহারার দুই যুবক-যুবতী। বলতে নেই, তা ছাড়া আলোও কম ছিল, কিন্তু ওদের দেখে মনে হচ্ছিল হরর সিনেমা থেকে উঠে এসেছে। তখন মনে হয়েছিল হয়তো তারা রাবারের মুখোশ পরে আছে।
কতোগুলো কুকুর নামিয়েছে তারা?
পাঁচ-ছয়টা তো হবেই। বলা মুশকিল। ট্রাক থেকে কুকুর নামিয়ে ওই জঘন্য ডগ-হাউসে ঢুকল। আমি কিচেনে গিয়েছিলাম দুধ আনতে, কাজেই পরে কী হলো আর দেখতে পারিনি। পরে আবার যখন ওদিকে তাকালাম, দেখি ট্রাকটা নেই।
রাত তখন কতো হবে বলবেন কি?
সাড়ে তিনটা বা পৌনে চারটা তো হবেই। ঘুম আসছিল না।
খুকখুক করে কাশল কিশোর। আপনি বলেছেন ট্রাক থেকে তারা কুকুর নামিয়েছে। ট্রাকটা কি কোনও কোম্পানির ট্রাক ছিল?
জানি না। একটা পিকআপ ট্রাক। খুব পুরোনো জিনিস।
কোন রঙের ছিল বলতে পারবেন?
বাইরে তখন অন্ধকার ছিল। তবে আমার মনে হয়েছে ওটার রং লাল বা তামাটেই হবে।
পরস্পরের দিকে তাকাল তিন গোয়েন্দা।
তারপর আপনি মিস্টার মুরের ঘুম ভাঙিয়ে জানালেন কী দেখেছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
এই যে আবার তোমরা হ্যারিকে সন্দেহ করতে শুরু করেছ, গলার স্বরে মনে হলো কারিনা মুর রেগে যাচ্ছেন। আমার আর হ্যারির উপরে দোষ চাপিয়ে কোনও ফায়দা হবে না। আমরা কোনও বেআইনী কাজে নেই। দরজাটা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন কারিনা মুর, হাত তুলে তাঁকে ঠেকাল মুসা।
মিস্টার মুর তখন বাসায় ছিলেন, তাই না? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
ঘুমাচ্ছিল ও। তোমাদের আর একটা কথারও উত্তর দেব না আমি। ভেবেছ কারণ ছাড়াই যার-তার কাছে জবাবদিহি করব? থাবড়া দিয়ে দরজার উপর থেকে মুসার হাতটা সরিয়ে দিয়ে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিলেন কারিনা মুর।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। গোয়েন্দাগিরি করতে হলে কতোরকম ব্যবহার যে পেতে হয় মানুষের কাছ থেকে! গাড়িটার দিকে পা বাড়াল ওরা। কিশোর বলল, কারিনা মুরের কথা যদি ঠিক হয়, তা হলে তাঁর ভাই হারল্ড মুর আমাদের দোকানের ভেতর খাঁচায় বন্দি করেনি। মরিচের গ্যাস চোখে মারাটাও তার কাজ নয়।
তবে তার কথা থেকে একটা ব্যাপার জানা গেল, বলল মুসা। লাল ট্রাক নিয়ে এসেছিল এখানে কেউ। ট্রাকটা কে চালায় সেটা বের করতে পারলে হয়তো এই রহস্যের সমাধান হবে।
চলো, এদিকে যখন এসেই পড়েছি তো ডগ-হাউসে একবার একটু উঁকি দেওয়া যাক, প্রস্তাব দিল কিশোর।
ওরা ঢুকে দেখল ফোনে কথা বলছে আয়োলা মর্টন। থ্যাঙ্ক ইউ বলে ফোন রেখে দিল। মৃদু হাসল ওদের দেখে, জিজ্ঞেস করল, তদন্ত কেমন এগোচ্ছে?
শীঘ্রি চোর ধরা পড়ে যাবে, বলল কিশোর। যতোটা আত্মবিশ্বাস ওর গলায় ফুটল ততোটা মোটেও অন্তরে অনুভব করছে না ও।
তা-ই নাকি? দারুণ খবর!
তবে এখনও কয়েকটা সুতো জোড়া দিতে হবে, বলল মুসা।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, আপনি তো রাতের ডিউটিতে আছেন তা-ই না?
হ্যাঁ। কিন্তু আজকে আমার ডবল শিফট। মিসেস লেবউফ পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গেছেন। মিস্টার লেবউফ গেছেন হলিউডের মোটেলটা কেনার ব্যাপারে আলোচনা করতে। আমি একা।
কেশে গলা পরিষ্কার করল কিশোর। আমরা শুনলাম গত রাতে এখানে কয়েকটা কুকুর আনা হয়েছে।