তিন গোয়েন্দাকে এগোতে দেখে ফিরে তাকালেন হারল্ড মুর। ভাব দেখে মনে হলো ছেলেদের দেখে বিরক্ত।
নিজেদের পরিচয় দিয়ে কেন এসেছে জানাতেই কিশোরকে বললেন, এসবের জন্যে সময় নেই আমার হাতে। তা ছাড়া, কোনও কোলি চুরির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।
কিশোর চট করে প্রশ্ন করল, কোলি চুরির ব্যাপারেই আমরা এসেছি সেটা আপনাকে কে বলল?
তাতে তোমাদের কী? মুখটা লাল হয়ে গেল হারল্ড মুরের। তবুও বলছি। আমার বোন বলেছে। কোলিটা চুরি যাওয়ায় ওই জঘন্য ডগ-হাউস যদি বন্ধ হয়ে যায় তো আমি বলব যে কোলিটাকে চুরি করেছে তার মেডাল পাওয়া উচিত।
কিছু মনে না করলে বলবেন কি আপনি কোন্ ধরনের গাড়ি ব্যবহার করেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।
মনে করছি আমি, ঘোঁৎ করে উঠলেন মুর। তোমাদের কোলি আমি চুরি করিনি বলেছি, এখন এটাও বলছি, শুনে রাখো, তোমাদের কোনও প্রশ্নের জবাব আমি দেব না।
আর আপনার বোন? না দমে জিজ্ঞেস করল কিশোর। অনেকের ধারণা কুকুর চুরির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে।
আমি বলছি নেই! খেঁকিয়ে উঠলেন মুর। কেউ যদি এধরনের কথা বলে তা হলে তাকে আমার মুখোমুখি হতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে আমার কাছে। তিন গোয়েন্দার নাকের সামনে মুঠো নাচালেন তিনি।
শান্ত হোন, ঘাবড়ে গিয়ে বলল রবিন।
কিশোর বলল, আমরা কুকুরচুরির ব্যাপারে আপনাকে বা আপনার বোনকে দায়ী করছি না। আমরা শুধু চোরাই কুকুর উদ্ধার করতে চাইছি।
কিশোরের দিকে ফিরে তাকালেন মুর। তা হলে যারা ওসব চুরি করছে তাদের গিয়ে প্রশ্ন করোগে যাও।
দমল না কিশোর, জিজ্ঞেস করল, আপনি কি গ্রেগ লেবউফ এবং তাঁর স্ত্রীকে চেনেন?
না। চিনতে চাইও না। তবে শুনেছি কাল রাতে ওখানে ট্রাক থেকে দুজন লোক কয়েকটা কুকুর নামিয়েছে। কী করছিল তারা বুঝতে পারেনি আমার বোন।
কী ধরনের ট্রাক? নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর।
আমি জিজ্ঞেস করিনি। আমার বোনও কিছু বলেনি।
ওটা কি কোনও কোম্পানির ভ্যান ছিল? জিজ্ঞেস করল মুসা।
প্রেসিডেন্টের লিমাযিন হলেই বা আমার কী? সঙ্গীদের দিকে একবার তাকালেন মুর। দেখো, এবার তোমরা যাও। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
হারল্ড ঠিকই বলেছে, যুবকের এক সঙ্গী বলল, দেখতেই পাচ্ছ। ব্যস্ত আমরা।
আমি আসছি, তেনজিং, বললেন মুর। তুমি লেগে পড়ো। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরলেন।
তোমাদের অনেক প্রশ্নের জবাব আমি দিয়েছি। শুনেছি আমার বোনকেও তোমরা বিরক্ত করেছ। এবার শেষবারের মতো সতর্ক করে দিচ্ছি, ওকে জ্বালাতন করতে যেয়ো না। গেলে পরিণতি ভাল না-ও হতে পারে।
আপনি কি আমাদের ইমকি দিচ্ছেন? জিজ্ঞেস করল মুসা। কালো মুখটা থমথম করছে।
না, সাবধান করছি।
কিন্তু আপনার বোনের কাছে যেতে হবে আমাদের, বলল কিশোর। কাল রাতে তিনি কী দেখেছেন সেটা জানা জরুরি।
এরপর আর তোমাদের সতর্ক করব না। মাটিতে থুতু ফেললেন হারল্ড মুর। এবার দূর হও এখান থেকে।
হ্যারল্ড মুরের সঙ্গীরা পরস্পরের দিকে তাকাল। বোধহয় দরকারে তারাও ওদের জোর করে সরিয়ে দেবে এখান থেকে, তারই প্রস্তুতি নিল।
ইশারা করলেন হারল্ড মুর। কাছেই প্রাণ ফিরে পেয়ে গর্জে উঠল একটা ডিজেল এঞ্জিন। কেবলে বাঁধা ফার্নিচার উপরে উঠতে শুরু করল। ফিরে চলল তিন গোয়েন্দা। হারল্ড মুর শুনতে পাবে না এমন দূরত্বে পৌঁছে কিশোর বলল, এখন আমরা জানি কারিনা মুরের ভাইকে কোথায় পাওয়া যাবে। এবার চলো কারিনা মুরের ওখানে, তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কাল রাতে তিনি কী দেখেছেন।
প্ল্যাস্টিকের পাইপ ভরা স্টিলের ক্যারিয়ারের পাশ দিয়ে কিশোর আগে আগে চলেছে, পিছনে রবিন আর মুসা। পার্কিং এরিয়ার দিকে যাচ্ছে ওরা, এমন সময়ে ডক থেকে একটা চিৎকার শুনতে পেল ওরা।
না! কেবল ছেড়ে দিয়ো না!
ঘুরে তাকাল মুসা কে চিৎকার করছে বোঝার জন্য। ঠিক তখনই আরেকটা চিৎকার শুনতে পেল ওরা।
সাবধান!
মেঝেতে একটা ছায়া ক্রমেই বড় হচ্ছে! মুসা আর রবিনের মাথার উপর তাকাল কিশোর।
জাহাজের স্টেটরুমের ফার্নিচার ভরা স্কিডটা সরাসরি মুসা আর রবিনের উপরই পড়তে যাচ্ছে!
কেবল ছিঁড়ে গেছে! চেঁচাল একজন কর্মী।
কিশোর স্পষ্ট দেখতে পেল, লোকটা ঠিকই বলেছে। সেফটি কেবল ছিঁড়ে গেছে। ফার্নিচার নীচে পড়ছে! পড়ছে ঠিক রবিন আর মুসার উপর!
রবিন-মুসা! সাবধান! কিশোরের গলা চিরে বেরিয়ে এলো শব্দগুলো।
১০
উপরের দিকে একবার তাকিয়েই চট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল মুসা, রবিনকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে নিল একটা স্টিলের র্যাকের কাছে। ওটাতে ছয়ফুট লম্বা শতখানেক প্ল্যাস্টিকের পাইপ আছে। র্যাকের নীচে রবিনকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল ও, নিজেও ঢুকে পড়ল।
ভারী ফার্নিচার ভরা স্কিড মাটিতে পড়ে চুরমার হয়ে গেল। ওটার এক কোনা আঘাত করল স্টিলের র্যাকে। উপরের দুটো তাক থেকে পাইপগুলো উড়াল দিল, যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। র্যাকের বাকি পাইপগুলো পড়ে গেল মেঝেতে।
হতভম্ভ কিশোর দেখল পাইপের নীচে সম্পূর্ণ চাপা পড়ে গেছে রবিন আর মুসা।
তবে ফার্নিচার ওদের উপর পড়েনি। হালকা পাইপগুলো। রবিন আর মুসাকে উঠে বসতে দেখল।
লেগেছে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
একটুও না, জানাল রবিন।
স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল কিশোর। একটুর জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছে রবিন আর মুসা।