উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার চালু করল মুসা, সেই সঙ্গে চাপ দিল পানির সুইচে। খানিকটা পাতলা হলো রং।
গাড়ি থেকে নেমে পড়ল তিন গোয়েন্দা। রংটা শুঁকে দেখল কিশোর, তারপর বলল, ল্যাটেক্স পেইন্ট। লোকটার হাতে রং ছুঁড়বার পিস্তল ছিল ওটা।
গাড়ি মোছার তোয়ালে দিয়ে রংটা যতোটা সম্ভব ওঠাল ওরা। এবার ড্রাইভার অন্তত সামনের দিকটা দেখতে পাবে।
পরে বাকিটা পরিষ্কার করা যাবে, বলল কিশোর, নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে। সেন্টার স্ট্রিটে যে কারওয়াশটা আছে ওখান থেকে রং তুলে নেব। আবার রওনা হলো ওরা। ডক্টর ম্যানরের দেওয়া নাম্বারে মোবাইল থেকে ডায়াল করল কিশোর।
আনসারিং মেশিন জবাব দিচ্ছে। জায়গাটা রকি বিচ সায়েন্টিফিক সাপ্লাই। মেশিনটা বীপ দেওয়ার পর ফোনে বলতে শুরু করল কিশোর, আমরা রকি বিচের নতুন ল্যাবোরেটরি থেকে ফোন করছি। আমাদের ল্যাবের নাম কেমিকেল অ্যানালিসিস অ্যান্ড টেস্টিং। নতুন খুলেছি। আমরা, কাজেই সবকিছু এখনও কেনা হয়ে ওঠেনি। সে-কারণেই ফ্রোন করা। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট টেস্টের জন্যে আমাদের পঁচিশটা কুকুর দরকার। আপনারা সাপ্লাই দিতে পারবেন? মোবাইল হোমের টেলিফোন নাম্বার দিয়ে কানেকশন কেটে দিল কিশোর।
কেমিকেল অ্যানালিসিস অ্যান্ড টেস্টিং? জিজ্ঞেস করল মুসা, হাসছে। কুকুর চাইছ তুমি, অথচ ল্যাবের নাম সংক্ষেপ করলে হয় ক্যাট!
কিশোর আর রবিন মুচকি হাসল, কিছু বলল না।
কার ওয়াশে গিয়ে গাড়ি ঢোকাল মুসা। ওয়েইটিং রুমে বসল ওরা। সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে পড়ল অ্যাটেন্ডেন্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই শক্তিশালী পানির ধারায় উইন্ডশিল্ড থেকে উঠে যেতে শুরু করল লাল রং।
হঠাৎ কিশোরের দিকে ফিরল রবিন, কাল রাতে কি নিক মিলহিজারই আমাদের চোখে গ্যাস মেরেছিল?
বলা যায় না, বলল কিশোর। বড় বেশি অন্ধকার ছিল। লোকটা যে-কেউ হতে পারে। এমনকী লোকটার চুল লম্বা কি না সেটাও দেখতে পাইনি। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টটা মিলহিজারেরই। চাকরির দরখাস্তেও ওই ঠিকানাই দিয়েছিল সে। কিন্তু নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আমাদের ওপর সে এভাবে হামলা করবে বলে মনে হয় না। তাতে করে তাকে সহজেই আমরা সন্দেহ করতে পারি এটা সে বুঝবে।
তা ঠিক, বলল মুসা। কে ছিল কে জানে!
লোকটা যে-ই হোক, এতোক্ষণে বুঝে গেছে আমরা অতো সহজে হাল ছাড়ব না। কিশোর গম্ভীর।
তুমি ঠিকই বলেছিলে, কিশোর, বলল মুসা। এসব যে-ই করে বেড়াক, লোকটা সে পেশাদার নয়। এখনও সত্যিকারের ভয়ঙ্কর কিছু সে করেনি। পেইন্ট গানের কারণে দুর্ঘটনা হতে পারত, কিন্তু সম্ভাবনা। কম ছিল। আমাদের নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে নিরস্ত করতে চেষ্টা করছে। সে। পেশাদার লোক হলে আমাদের থামাতে ভয়ঙ্কর কোনও ব্যবস্থা নিয়ে বসত এতক্ষণে। হয়তো গুম করে ফেলারই চেষ্টা করত।
ঠিক, বলল কিশোর। তা ছাড়া, পেশাদার কেউ হলে এখনও কুকুর বিক্রির জন্যে চেষ্টা করত না। চুরির আগেই কুকুর বিক্রির ব্যবস্থা করে রাখত।
কুকুরগুলোর কিছু হওয়ার আগেই ওগুলোকে উদ্ধার করতে হবে, দৃঢ় শোনাল মুসার গলা। নইলে রাফিয়ানের ব্যাপারে কী জবাব দেব আমরা জিনাকে?
একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? বলল কিশোর। চাকরি হারানোর কারণে গ্রেগ লেবউফের ওপর কিন্তু খেপে নেই কি মিলহিজার। ব্যাপারটা একটু অস্বাভাবিক নয়?
কিছুটা অস্বাভাবিক তো বটেই, বলল মুসা। টেকনিক্যাল সাহায্যের জন্যে তাকে চাকরিতে নিয়ে পরে কুকুরের হাগু পরিষ্কার করতে বলেছিলেন লেবউফ। নিক মিলহিজারের খানিকটা হলেও খেপে। থাকার কথা।
হয়তো অভিনয় করছে, মন্তব্য করল রবিন।
আমি হারল্ড মুরের কথা ভাবছিলাম, বলল কিশোর। ফোরম্যানের কথা শুনে মনে হলো কাজে সে প্রায়ই যায় না। তার মানে এটাও হতে পারে যে, কুকুর চুরি করার জন্যে যথেষ্ট সময় পায় সে। প্রতিটা কুকুর দুহাজার ডলার করে ল্যাবগুলোতে বিক্রি করতে পারলে অন্য কাজের তার কী দরকার! চলো, আজ একবার ড্রাই-ডকে ঘুরে আসি। তার সঙ্গে কথা বলে দেখা দরকার মনে কোনও সন্দেহ জাগে কি না।
আরও দশ মিনিট অপেক্ষার পর গাড়িটা ফেরত পেল ওরা, এইমাত্র ধোওয়ায় ঝকঝক করছে। ওয়াশের বিল মিটিয়ে দিয়ে সোজা চলল ওরা বন্দর এলাকার দিকে। ড্রাই-ডকে পৌঁছে দেখল বিশাল জাহাজ স্টার অভ বারমেট ছেয়ে ফেলেছে শ্রমিকের দল। মনে হচ্ছে সারি সারি পিঁপড়ে নিয়ম ধরে কাজ করে চলেছে। ক্রেনে করে মালামাল তোলা নামানো হচ্ছে।
শেডের কাছে ওরা পৌঁছোতেই ফোরম্যান এগিয়ে এলেন। কী খবর ছেলেরা? হারল্ড মুরকে খুঁজছ নিশ্চয়ই? আজকে আছে ও, তোমাদের কপাল ভাল। জাহাজের বোর দিকে আঙুল তুললেন তিনি। ওই যে ওখানেই আছে। কাজে ইদানীং এতো ফাঁকি দিচ্ছে যে ভেবেছিলাম ওকে বাদই দিয়ে দেব।
আমরা ওঁকে বেশিক্ষণ আটকে রাখব না, বলল কিশোর।
গুড, খুশি হলেন ফোরম্যান। তিন গোয়েন্দাকে পরার জন্য তিনটে শক্ত হ্যাট দিয়ে বললেন, ফাঁকি না মেরে অন্তত কিছু কাজ তো করুক ও!
ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দিয়ে হ্যাট মাথায় চাপিয়ে এগোল ওরা।
সূর্যের নীচে কাজ করে বাদামী হয়ে গেছেন হারল্ড মুর। চেহারা দেখে মনে হলো রাগী মানুষ। কাজ নিয়ে ব্যস্ত। চারজন সঙ্গীর সঙ্গে একটা স্কিডে ফার্নিচার তুলছেন। মোটা মোটা দড়ি দিয়ে সব বাঁধা। দড়িগুলো আবার শেকল আর স্টিলের কেবলের সঙ্গে আটকানো হয়েছে। সব মালামাল একটা বুম উপরে তুলে নেবে, পৌঁছে দেবে জাহাজে।