বলবেন আপনারা কোত্থেকে কুকুর সংগ্রহ করেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নড়েচড়ে বসলেন ডক্টর ম্যানর। তোমরা যদি অ্যানিমেল রাইটস অর্গানাইযেশন থেকে এসে থাকো, তা হলে আমি তোমাদের নিশ্চিন্ত করছি…
আমরা ওরকম কোনও সংগঠন থেকে আসিনি, বলল মুসা। এবার ও ওদের তদন্তের ব্যাপারে খুলে বলল। আমাদের মনে হচ্ছে চোর হয়তো ল্যাবোরেটরিগুলোতে কুকুর বিক্রি করছে। ল্যাবগুলো হয়তো জানেও না যে ওগুলো চোরাই কুকুর।
গত কয়েকদিনে আপনাদের কেউ কুকুর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
আমাকে দেয়নি, জানালেন ডক্টর ব্লেক।
ভ্রূ কুঁচকে চেয়ারে হেলান দিলেন ডক্টর শ্যন ম্যানর। আমাকে দিয়েছে, বললেন। পার্কিং লটে আমাকে থামিয়েছিল এক যুবক। এই এক সপ্তাহ হবে। বলেছিল মালিকছাড়া কুকুর সংগ্রহ করে দিতে পারবে সে, প্রতিটা পড়বে দুহাজার ডলার করে।
চেয়ারে সোজা হয়ে বসল কিশোর। দেখতে কেমন ছিল সে?
অতোটা খেয়াল করিনি। তবে চুলগুলো বাদামী ছিল। এই আমার মতো। বয়স পঁচিশের বেশি হবে না। চেহারা বলতে পারব না, চোখে সানগ্লাস ছিল। কপাল পর্যন্ত ঢাকা ছিল নাবিকদের উলের টুপিতে।
তার কাছ থেকে কোনও কুকুর কিনেছেন আপনি?
না। যুবককে দেখে আমার মনে হয়নি সে কোনও ভাল ব্রিডারের কোম্পানিতে কাজ করে। আমার কাছে একটা কার্ড চাইল, দিয়ে দিলাম। বলল পরে যোগাযোগ করবে। আমি রাজি হলাম। তখন আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল সে।
তাকে যেতে দেখেছেন আপনি?
অবশ্যই!!
কী গাড়ি চালাচ্ছিল সে?
এক মুহূর্ত ভাবলেন ডক্টর ম্যানর, তারপর বললেন, একটা পিকআপ ট্রাক। লাল একটা পুরোনো পিকআপ ট্রাক।
আপনি তো তাকে কার্ড দিয়েছেন, বলল কিশোর। সে-ও কি আপনাকে কোনও কার্ড দিয়েছে?
না। জিজ্ঞেস করায় বলল শেষ হয়ে যাওয়ায় ছাপতে দিয়েছে। কার্ড। তবে একটা নাম্বার দিয়েছে সে। টেবিলের উপরের কাগজগুলো হাতড়ে একটা স্লিপ খুঁজে বের করে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি। এই যে। নিতে পারো এটা তোমরা। আমার কাজে আসবে না। প্রতিষ্ঠিত ব্রিডার না হলে কারও কাছ থেকে কুকুর কিনি না আমরা।
নিজেদের কার্ড দিল কিশোর দুই ডক্টরকে, তারপর যুবক আবার যোগাযোগ করলে ওদের জানাতে অনুরোধ করে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। ফিরতি পথ ধরে মুসা বলল, লোকটা ল্যাবোরেটরিতে কুকুর বিক্রি করতে চায়।
স্যালভিজ ইয়ার্ডে চলেছে ওরা। কিন্তু লোকটা কে হতে পারে? আপনমনে বলল রবিন। বর্ণনা অনুযায়ী নিক মিলহিজার আর হারল্ড মুর-দুজনের যে-কেউ হতে পারে লোকটা। এদিকে ডক্টর ম্যানরের চুলগুলোও বাদামী। লম্বাও কাঁধ পর্যন্ত। পাতলা-সাতলা লোক। তাকেও কি আমরা সন্দেহের মধ্যে রাখব?
আপাতত, বলল কিশোর।
আবার আমাদের পেছনের ওই লোকটাও সেই কুকুর চোর হতে পারে, গম্ভীর চেহারায় বলল মুসা। রিয়ারভিউ মিররে পিছনে তাকিয়ে আছে ও।
ঘুরে তাকাল রবিন আর কিশোর। ওদের পিছন পিছন আসছে একটা লাল পিকআপ ট্রাক। ছায়ার মধ্যে থাকায় ড্রাইভারের মুখটা দেখা গেল না। গতি বাড়িয়ে কাছাকাছি চলে আসছে পিকআপটা। এবার ড্রাইভারের মুখ ঢাকা মুখোশটা দেখতে পেল ওরা। সর্বক্ষণ বড় বড় দাঁত বের করে হাসছে ওটা। মুসার ফোক্সওয়াগেনের পিছনে এসে জোরে গুতো দিল পিকআপ!
গতি বাড়াও! বলে উঠল রবিন।
সম্ভব না! জানাল মুসা। হুইলের পিছনে ঝুঁকে বসেছে। রাস্তাটা বড় বেশি সরু!
পাগল নাকি লোকটা! ফ্যাকাসে মুখে বলল রবিন।
দড়াম করে আবার আঘাত হানল পিকআপ ট্রাক। গাড়ির চেয়ে। অনেক ভারী ওটা। যে-কোনও সময় ফোক্সওয়াগেনটাকে ঠেলে ফেলে দেবে রাস্তা থেকে! নিজেদের সিট বেল্ট ঠিক আছে কি না দেখে নিল। তিন গোয়েন্দা।
আমাদের পাশ কাটাচ্ছে, রিয়ারভিউ মিররে চোখ মুসার।
রাস্তা থেকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায় বোধহয়, বিড়বিড় করল কিশোর।
গাড়ির পাশে চলে এসেছে পিকআপটা। ড্রাইভারের মুখোশটা এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ওটা না থাকলে চেহারাটা এখন স্পষ্ট দেখা যেত। এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে আছে লোকটা। আরেক হাত নীচে নামানো। ঝট করে ওটা তুলল সে। এক পলকও লাগল না রবিন আর কিশোরের বুঝতে তার হাতে ওটা কী।
পিস্তল! চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
কালো রঙের ভয়ঙ্করদর্শন একটা সেমি-অটোমেটিক পিস্তল তাক করছে লোকটা! সরাসরি মুসার দিকেই যেন তাক করছে সে!
৯
সঙ্গে সঙ্গে ব্রেকে চেপে বসল মুসার পা। চাকাগুলো আটকে গেল, গাড়িটা পিছলে এগোতে শুরু করল হড়হড় করে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পিকআপ।
কিন্তু তবুও বেশি দেরি হয়ে গেছে। ট্রিগার টেনে দিয়েছে লোকটা!
ছপাৎ!
মুহূর্তে ওদের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল পিকআপ ট্রাকটা। ফোক্সওয়াগেনের গোটা উইন্ডশিল্ড লাল রঙের তরলে ভরে গেছে। সামনের কিছু দেখতে পাচ্ছে না মুসা। আবার ব্রেকে পা চেপে বসল ওর। রাস্তাটা মনে করতে চেষ্টা করল। ওটা কি সোজা গেছে, না বাঁক আছে কোনও?
ধুপ করে একটা আওয়াজ হলো। ঝাঁকি খেয়ে থামল। ফোক্সওয়াগেন। মুসা বুঝতে পারল সামনে বাঁক নিয়েছিল রাস্তা।
গতি কমিয়ে আনায় সাঙ্ঘাতিক কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টে গুতো খেয়ে থেমে গেছে ওদের গাড়ি।
জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিল মুসা, তারপর বলল, চলে গেছে পিকআপ। লাল রং না সরিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। আরেকবার আমাদের বোকা বানিয়ে দিয়ে গেল লোকটা।