আন্দাজ করো মধ্যবিত্তদের কুকুর সে কেন নেবে, বিড়বিড় করল রবিন। মধ্যবিত্তরা তো যথেষ্ট মুক্তিপণও দিতে পারবে না। কুকুর বিক্রির দোকান আছে না কি লোকটার!
হতে পারে না, এক কথায় নাকচ করে দিল কিশোর। ধাড়ি কুকুর কে কিনবে? নীচের ঠোঁটে আবারও চিমটি কাটল কিশোর। তবে বিক্রি যে করতে চায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ড্রয়ার ঘেঁটে একটা ভিসিটিং কার্ড বের করল ও।এক্সেলসিওর ল্যাব।
ভ্রূ কুঁচকাল মুসা। তো কী হলো?
আমার ধারণা নেড়ি কুকুরগুলো সে কোনও রিসার্চ ল্যাবোরেটরিতে বিক্রি করার চেষ্টা করছে, বলল কিশোর। সে-কারণেই ওগুলো চুরি করা।
ভিযিটিং কার্ডটা ওখানে যে-কেউই ফেলে যেতে পারে, বলল মুসা।
তা পারে, কাঁধ ঝাঁকাল কিশোর। তবে আপাতত এই কার্ড ছাড়া আর কোনও সূত্র নেই আমাদের হাতে।
কার্ডটার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকল রবিন। খানিকক্ষণ নীরবতায় কাটল, তারপর কিশোর বলল, আমার ধারণাটা সঠিক কি না সেটা জানার জন্যে এক্সেলসিওর ল্যাবে যেতে হবে। অনেক মানুষই আজকাল পশুপাখির ওপর নিষ্ঠর পরীক্ষা-নীরিক্ষার বিরুদ্ধে। তবুও আজও রিসার্চ চলছে। কোনও ল্যাব হয়তো গোপনে ডগন্যাপারের কাছ থেকে কুকুর কিনছে। তা-ই যদি হয়, তা হলে বলতে হবে সহজে টাকা। করার ভাল একটা পথ পেয়ে গেছে আমাদের ডগন্যাপার।
রাফিয়ানকে বিক্রি করার আগেই লোকটাকে ঠেকাতে হবে, শুকনো গলায় বলল রবিন। হয়তো আমাদের সফলতার ওপর নির্ভর করছে রাফিয়ানের জীবন-মরণ।
রিসিভার তুলে এক্সেলসিওর ল্যাবের নাম্বারে ডায়াল করল। কিশোর। এতো সকাল সকাল ল্যাব খোলেনি, একটা মেশিন জবাব দিল। রেকর্ড করা মেসেজে বলা হলো, সকাল সাড়ে নটায় ল্যাবোরেটরি খুলবে।
ঘড়ি দেখল কিশোর। এখনও নয়টা বাজতে দশ মিনিট বাকি।
চিফ ইয়ান ফ্লেচারের ই-মেইল থেকে পাওয়া নাম্বারগুলোয় ফোন করতে শুরু করল কিশোর। স্পিকারের সুইচ অন করে রেখেছে, যাতে বন্ধুরাও কথা শুনতে পায়।
কুকুর যা চুরি হয়েছে বেশিরভাগই চুরি হয়েছে বাড়ির সামনের উঠান থেকে। ওগুলোর মালিকরা কোনও লোককে বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করতে দেখেননি। কোনও হলদে দরজাওয়ালা গাড়ি বা লাল ট্রাকও কারও নজরে পড়েনি। অনেকেই তাদের কুকুর হারিয়ে ভেঙে পড়েছে। কিউটি ছিল আমার মেয়ের সবচেয়ে ভাল বন্ধু, এক মহিলা জানালেন। ওকে হারিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে রোনা। জানি না এই দুঃখ ও ভুলবে কী করে।
আমরা কিউটিকে খুঁজে বের করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব, কথা দিল। কিশোর।
ও ফোন রাখার পর মুসা বলল, বাচ্চাদের কুকুর যে-লোক চুরি করে তাকে বিশেষ কোনও শাস্তি দেয়া উচিত।
মোবাইল হোমের দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকাল রবিন। এখন যদি আমরা রওনা হই তা হলে পৌঁছুতে পৌঁছুতে ল্যাব খুলে যাবে।
উঠল ওরা।
রকি বিচের দক্ষিণে একটা পার্কের পাশে এক্সেলসিওর ল্যাবোরেটরিজ। এক তলা লম্বাটে সাদা বাড়িটাতে জানালা প্রায় নেই বললেই চলে। দেখে মনে হয় মিলিটারির ব্যারাক। সামনে বড় একটা। সাইনবোর্ডে লেখা: এক্সেলসিওর ল্যাবোরেটরিজ লিমিটেড।
পার্কিং লটে গাড়ি থামিয়ে নামল ওরা, চলে এলো ভিটির লেখা একটা অফিসের সামনে। এখানেই দর্শনার্থীদের বসানো হয়।
ল্যাবের লবিতে আছে একটা অপেক্ষা করার জায়গা আর অন্যপাশে সাদা কাউন্টার। রিসেপশনিস্ট এক তরুণী, বছর বিশেক বয়স হবে তার, ইন্টারকমে কথা বলছে।
সুইচবোর্ডে ম্যানর নামটা দেখতে পেল কিশোর। ভিযিটিং কার্ডের পিছনেও এই একই নাম আছে।
রিসেপশনিস্ট ইন্টারকমের রিসিভার নামিয়ে রাখার পর ওদের দিকে চোখে কৌতূহল নিয়ে তাকাল। এই বয়সী কয়েকটা ছেলে ল্যাবে কেন তা জানতে চায়। সে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন সাদা কোট পরা মাঝবয়সী একজন ভদ্রলোক। ঢুকে ওদের দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, কী করতে পারি আমরা তোমাদের জন্যে, বয়েজ?
নিজেদের পরিচয়, দিল কিশোর।
আমি ডক্টর ব্লেক, ল্যাব কোট পরা ভদ্রলোক জানালেন।
আমরা এসেছি মিস্টার ম্যানরের সঙ্গে দেখা করতে, বলল কিশোর। ভদ্রলোক ল্যাবোরেটরিতে কী কাজ করেন তা ওর জানা নেই।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে তোমাদের? জিজ্ঞেস করলেন ব্লেক।
না, কিন্তু জরুরি কাজে এসেছি। কেন এসেছে জানাল কিশোর। রাফিয়ানকে যতো দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করতে হবে।
এসো আমার সঙ্গে। ওদের পথ দেখিয়ে ল্যাবের ভিতর ঢুকলেন ব্লেক। সুইং-ডোর পেরিয়ে কাজের জায়গায় চলে এলো ওরা। করিডরের দুপাশে সারি সারি অফিস। শেষে দুটো বড় বড় ল্যাবোরেটরি।
প্রথম অফিসটাই মিস্টার ম্যানরের। ভিতরে ঢুকে ওরা খেয়াল করল ডেস্কের উপর নেমপ্লেটে ডক্টর লেখা আছে।
ডক্টর শ্যন ম্যানরের বয়স তিরিশের বেশি হবে না। কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ বাদামী চুলগুলো খোঁপা করে রেখেছেন। চোখে কালো ফ্রেমের ভারী চশমা। দেখলেই বোঝা যায় লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু বোঝেন না।
পরিচয়ের পালা এবার সারল মুসা। ডক্টর ব্লেক ওদের বসতে ইশারা করে নিজেও বসলেন।
বসবার পর কিশোর জিজ্ঞেস করল, এই ল্যাবে কি জন্তু জানোয়ারের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করা হয়?
নিশ্চয়ই, বললেন ডক্টর ম্যানর। এখন আমি কুকুরদের ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছি। সয়া বেড় ডায়েটে বিভিন্ন কুকুরের ওজন কতোটা বাড়ে সেটাই আমার পরীক্ষার বিষয়বস্তু। হাতের ইশারায় একদিকের দেয়াল দেখালেন তিনি। ওখানে ঝকঝকে খাঁচায় ছোট আকারের বেশ কয়েক জাতের কুকুর রাখা আছে। সবগুলোই নাদুসনুদুস। ওদের তাকাতে দেখে লেজ নাড়তে শুরু করল কয়েকটা।