বুকের ভিতর স্বস্তির একটা ঢেউ অনুভব করল কিশোর। তা হলে মরিচের গ্যাসই, ক্ষতিকর অন্য কিছু নয়!
বেসিনের কাছে পৌঁছে গেল ও। ওর হাত ধরে জায়গামতো দাঁড় করিয়ে দিল রবিন। চোখে-মুখে পানির ছিটা দিতে শুরু করল কিশোর। মিনিটখানেক পর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল আবার। প্রথমেই রবিন জিজ্ঞেস করল, লোকটা কে তা চিনতে পেরেছ?
না মাথা নাড়ল কিশোর, চোখে পানির ছিটা দিল। শুধু ক্যাপটা দেখতে পেয়েছি। মুখটা ছায়ার মধ্যে ছিল। তুমি চিনতে পেরেছ?
আমি শুধু দেখেছি তার অ্যারোসোল স্প্রে ক্যান, বলল রবিন। বিরক্তি ভরে মাথা নাড়ল। বারবার আমাদের বোকা বানাচ্ছে লোকটা। আমরা গোয়েন্দা, আমরা তার পেছনে লাগব কী, সে-ই সর্বক্ষণ আমাদের পেছনে লেগে আছে।
ঠিকই ওকে ধরে ফেলব আমরা, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল কিশোর। আগে এসো, অ্যাপার্টমেন্টটা সার্চ করে দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না।
বেডরুম আর ক্লজিটগুলো খুঁজে দেখতে শুরু করল কিশোর, রবিন গেল লিভিংরুম আর কিচেনে। ভাড়াটে সবকিছু পরিষ্কার করে রেখে যায়নি বটে, তবে কোনও সূত্রও পাওয়া গেল না।
কিছু নেই, শেষপর্যন্ত বলল কিশোর। কুকুর ছিল তারও কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না। ভাড়াটের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল রবিন। আমাদের মোবাইল হোমের ফোনের আনসারিং মেশিনে হয়তো ওয়্যারহাউসটার মালিক সম্পর্কে কোনও খবর থাকতে পারে। মিস্টার বার্লিসন হয়তো ফোন করেছিলেন।
হ্যাঁ, চলো, যাওয়া যাক। দরজার দিকে পা বাড়াল কিশোর।
অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠল ওরা, ফিরে চলল স্যালভিজ ইয়ার্ডের উদ্দেশে। ইয়ার্ডে পৌঁছে আগে চাচীকে জানাল ওরা ফিরেছে, তারপর মোবাইল হোমে ঢুকল দুই গোয়েন্দা। আনসারিং মেশিনে সত্যিই খবর পাওয়া গেল। মিস্টার বার্লিসন জানিয়েছেন তাঁদের অফিসের কম্পিউটার এখনও ঠিক হয়নি, হলেই ওয়্যারহাউসের মালিক কে সেটা তিনি জেনে নিয়ে জানাবেন।
আজ রাতে আর কিছু করার নেই, হতাশ হয়ে বলল রবিন। চলো, ঘুমিয়ে পড়ি গিয়ে। কাল সকাল থেকে আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করা যাবে।
হ্যাঁ, চলো, সায় দিল কিশোর।
মোবাইল হোম থেকে বেরিয়ে এলো ওরা। কিশোরের ঘরে চলে এলো। কাপড় পাল্টে নিয়ে শুয়ে পড়ল। ক্লান্তির কারণে ঘুমিয়ে পড়তে বেশিক্ষণ লাগল না ওদের।
.
পরদিন সকাল সকাল মুসা এসে হাজির হলো।
ওকে বসে পড়তে বলে ওর জন্য আরও কয়েকটা পাউরুটি চড়ালেন চাচি টোস্টারে। একসঙ্গে নাস্তা সারল ওরা, খাওয়ার ফাঁকে রবিন আর কিশোর মুসাকে জানাল কাল রাতে কী ঘটেছে; সযত্নে চেপে গেল কুকুরের খাঁচায় বন্দি হওয়ার কথাটা, তারপর চলে এলো মোবাইল হোমে।
মোবাইল হোমে ঢুকেই মুসা বলল, এবার বলে ফেলো, রবিন, ঠিক কী ঘটেছিল। দোকানের ভেতরে ঢোকার কথা বলার পরপরই তোমার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যেতে দেখেছি আমি নাস্তা খাবার সময়। কিছু একটা গোপন করছ তোমরা দুজন। সকালের পেপারে পড়লাম পেট সুপারস্টোরে চোর ঢুকেছিল। কিছু চুরি করেনি। কিন্তু দুটো খাঁচা নষ্ট করে দিয়ে গেছে।
কিশোর হাসি চাপল। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, পেট শপে ঢোকার পর একসময় নিজেকে রবিনের খাঁচায় বন্দি পশু বলে মনে হচ্ছিল।
আর চেপে রাখতে পারল না রবিন, খুলে বলল কীভাবে ওদের বোকা বানিয়ে কুকুরের খাঁচায় ভরে রেখে গিয়েছিল কুকুর- চোর লোকটা।
এবার তদন্তের কাজ, গম্ভীর কিশোর। ভাব দেখে মনে হলো ওকে
কেউ কুকুরের খাঁচায় বন্দি করেনি। আগে ফোন করতে হবে পুলিশ চিফের কাছে। পুলিশ স্টেশনের নাম্বারে ডায়াল করল ও। অফিসেই পাওয়া গেল চিফ ইয়ান ফ্লেচারকে। সাধারণ দুএকটা কথার পর কিশোর জিজ্ঞেস করল, কুকুর চুরি রহস্যের ব্যাপারে তদন্ত এগোল, সার?
নাহ,হতাশ শোনাল চিফের কণ্ঠ। একটু থেমে বললেন, কুকুর চুরি বলেই অফিসারদের কেউ তেমন গা করছে না। গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউ ব্যাপারটাকে। ঢিলেঢালা ভাবে তদন্ত চলছে, হাতে সূত্র বলতে কিছুই নেই। …তোমাদের কী অবস্থা?
কুকুর-চোর আমাদের কাছ থেকে রাফিয়ানকে চুরি করে নিয়ে গেছে, জানাল কিশোর। আমাদের হাতেও জোরাল কোনও সূত্র নেই, তবে হাল ছেড়ে দিচ্ছি না আমরা। …আর কোনও কুকুর চুরি গেছে, সার?
গেছে। তোমাদের কাছে ই-মেইল করছি। রিপোর্টটা পড়ে নিয়ো।
অনেক ধন্যবাদ, সার।
হাসলেন ইয়ান ফ্লেচার, ফোন রাখার আগে বললেন, বেস্ট অভ লাক।
কম্পিউটার প্রিন্টার চালু করে তিনটে কাগজের শিট বের করল কিশোর।
পুলিশ চিফ ইয়ান ফ্লেচার ইন্টারনেটে তিন পৃষ্ঠার একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন ওদের জন্য, সেটায় চোখ বুলাল ওরা।
রকি বিচের বিভিন্ন অভিজাত এলাকা থেকে বড়লোকদের আরও দুটো কুকর চুরি গেছে। সেই সঙ্গে চুরি হয়েছে মধ্যবিত্তদের কয়েকটা নেড়ি কুত্তাও। পুলিশ এখনও কেসটায় তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে রকফেলারের কারণে উপরমহলের চাপ আসতে শুরু করেছে।
কী বুঝব এ থেকে? জিজ্ঞেস করল মুসা। পয়সাওয়ালাদের কুকুরগুলো না হয় নিয়েছে মুক্তিপণের আশায়, কিন্তু নেড়ি কুকুর দিয়ে কী করবে সে?
নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। মনে হচ্ছে লোকটার টাকার খুব দরকার। কিন্তু ভয়ঙ্কর লোক নয় সে। নইলে কুকুরের বদলে মানুষের বাচ্চাই চুরি করত। ধরা পড়লে যাতে কম শাস্তি হয় সেদিকে লোকটার খেয়াল আছে। পয়সাওয়ালাদের কুকুর নিচ্ছে মুক্তিপণের জন্যে, আর মধ্যবিত্তদের কুকুরগুলোকে নিচ্ছে বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে। সেটা কী তা আমরা এখনও জানি না।