কাজটা কার দেখতে পেয়েছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রবিন। পেছন থেকে আঘাত করেছিল।
আমাকেও, বলল কিশোর। কেউ একজন আমাদের আগে আগে চলছে। আমরা যা করছি সবই সে আগে থেকে আন্দাজ করতে পারছে।
মুসা থাকলে বলত এসব ভূতের কাণ্ড, বিড়বিড় করল রবিন। তিনটা কুকুর চুরি করেছে বলে এতো ঝুঁকি নিচ্ছে কেন লোকটা? জানছেই বা কীভাবে যে, আমরা কখন কোথায় যাব?
প্রসঙ্গ পাল্টাল কিশোর। আমি নিক মিলহিজারের চাকরির দরখাস্তটা পড়েছি। লোকটা বন্দরের কাছেই থাকে। ওয়্যারহাউস থেকে জায়গাটা সামান্য দূরে।
পুলিশকে জানালে হয় না? জিজ্ঞেস করল রবিন। হলদে দরজাওয়ালা গাড়ির মালিককে পুলিশ ধরলেই সব রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে।
পুলিশকে যে জানাব, বের হতে হবে না এখান থেকে? তা ছাড়া, কোনও প্রমাণ ছাড়া পুলিশের কাছে যাবই বা কীভাবে? যা করার আমাদেরই করতে হবে। আগের কাজ আগে। প্রথমে এখান থেকে বের হতে হবে।
কীভাবে?
ওর বন্দিশালা ভাল করে দেখল কিশোর। খাঁচাটা দুটো প্ল্যাস্টিকের অংশ দিয়ে তৈরি। নীচের অর্ধেক আর উপরের অর্ধেক জোড়া দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট কয়েকটা বন্টু দিয়ে। ওগুলো আছে বাইরের দিকে দুপাশে দুটো কার্নিশের গায়ে।
গায়ের জোর খাটাতে হবে, বলল কিশোর। এগুলো প্ল্যাস্টিকের তৈরি। নতুন গার্বেজ ক্যানগুলোর মতো। একদিকের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দুপা এক করে জানালায় গায়ের জোরে ঠেলা দিল ও। বেঁকে গেল জানালার শিকগুলো। এবার পা সরিয়ে এনে ওগুলোর উপর লাথি মারতে শুরু করল কিশোর।
একের পর এক লাথি মারছে ও। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলা দিচ্ছে জানালার গরাদে। চারবার লাথি মারতেই ওর পা ভাঙা জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল। গরাদগুলো ফ্রেমসহ ছিটকে কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে পিছলে দূরে সরল।
দেরি না করে জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে দিল কিশোর, ওর আঙুল প্রথম বল্টটাকে খুঁজে নিল। শক্ত করে আটকানো আছে বন্টু, কিন্তু কয়েক মিনিট একটানা চেষ্টার পর ঘুরতে শুরু করল। আরও আধমিনিট পর খুট করে মেঝেতে পড়ল ওটা।
কাজ হচ্ছে? ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করল রবিন।
সময় লাগবে, জানাল কিশোর। পরক্ষণেই প্রশ্ন করল, তুমি চুপচাপ বসে আছো কেন?
আগে দেখি তুমি পারো কি না, তারপর চেষ্টা করব, বলল রবিন। মাথার ব্যথাটা ভোগাচ্ছে।
আবার কাজে লেগে পড়ল কিশোর। দ্বিতীয় বল্টটা খোলা সহজই হলো। তিন নম্বরটা শক্ত ছিল, কিন্তু মিনিট চারেক ওটার পিছনে লেগে থেকে ওটাও খুলতে পারল ও। এদিকের বন্টু সবগুলোই খসে গেছে। এবার হাঁটুতে ভর দিয়ে পিঠ উঁচু করল কিশোর। ছাদে পিঠ ঠেকতেই দাঁতে দাঁত চেপে উপর দিকে ঠেলা দিল। যেদিকের বন্টু খুলেছে। সেদিকেই চাপটা বেশি দিচ্ছে।
ছাদ খসে আসছে, শ্বাসের ফাঁকে বলল কিশোর। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ঠেলা দিল। প্ল্যাস্টিক বেঁকে যাচ্ছে, তারপর বল্টগুলো থেকে উপড়ে বেরিয়ে এলো ওদিকের উপরের কার্নিশ। ছাদটা খসে যেতেই চারপাশের দেয়াল টপকে বেরিয়ে পড়ল কিশোর, রবিনের খাঁচার বল্ট খুলতে তিন মিনিটও লাগল না। রবিন বের হতেই ও জিজ্ঞেস করল, এখন মাথার কী অবস্থা?
ঘেউ! জবাব দিল রবিন, তারপর বলল, আগের চেয়ে ভাল।
সত্যি, কুকুরের খাঁচায় বন্দি হওয়াটা অত্যন্ত অপমানজনক, মন্তব্য করল কিশোর।
তুমি যদি কাউকে না বলো, তা হলে আমিও কাউকে বলব না, ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে বলল রবিন। মুসাকেও না।
এমন কী ঘটেছে যে বলতে হবে, মুচকি হাসল কিশোর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, সাড়ে নটা বাজে। দেরি হয়ে গেছে, তবু চলো একবার নিক মিলহিজারের বাসায় ঢু মেরে আসি।
ওয়াটার স্ট্রিট ধরে ধীর গতিতে এগিয়ে চলল রবিনের ফোক্সওয়াগেন। গাড়ি চালানোর ফাঁকে ও বলল, ঠিকানাটা বামদিকের কোনও বাড়ির। সেভেন-এইটি-ওয়ান। হাত তুলে পুরোনো একটা রংচটা বাড়ি দেখাল রবিন। ওই যে, ওই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটাই হবে।
অ্যাপার্টমেন্ট নম্বরটা লিখে নিয়েছিলে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
চার দিয়ে কী যেন, লিখিনি, বলল রবিন। খুঁজে বের করতে
বাড়িটার সামনে গাড়ি থামিয়ে নামল ওরা। অনেকগুলোঅ্যাপার্টমেন্টে আলো জ্বলছে।
মেইলবক্সে মিলহিজারের নাম থাকতে পারে, মন্তব্য করল কিশোর।
সদর দরজা খোলাই আছে, ভিতরে ঢুকল ওরা। একদিকের দেয়ালে মেইলবক্সের সারি। ওখানে গিয়ে নামগুলো পড়তে শুরু করল ওরা। বেশিরভাগ মেইলবক্সের গায়েই কোনও নাম নেই। কয়েকটায় টাইপ। করা নাম আছে, বাকি কয়েকটায় পেন্সিল দিয়ে নাম লেখা।
চারতলায় চারটে অ্যাপার্টমেন্ট আছে, বলল কিশোর। একটা মেইলবক্সেও নিক মিলহিজারের নাম লেখা নেই।
এটাতে লেখা আছে মন্টোগোমারি, বলল রবিন।
তার মানে ফোর-সি বাদ। মেইলবক্সের সারির পাশে বুলেটিন বোর্ডে চোখ বুলাল কিশোর। বাড়ির মালিকের তরফ থেকে একটা নোটিশ আছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ফোর-ডি খালি পড়ে আছে, ভাড়াটে চায়।
তা হলে বাকি রইল ফোর-বি আর ফোর-এ, বলল রবিন। চলো, গিয়ে নক করে দেখি।
সিঁড়ির খোঁজে এগিয়ে গেল ওরা। সিঁড়ির মাথায় একটা দরজা আছে। ওটা বন্ধ। ধাক্কা দেওয়ার পরও খুলল না।
দরজায় সিকিউরিটি সিস্টেম আছে, বলল কিশোর। ইন্টারকমে চারতলার অ্যাপার্টমেন্ট দুটোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
এক্সকিউয মি, ওদের পিছন থেকে বললেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক। এই মাত্র ফয়ারে ঢুকেছেন তিনি। ওরা সরে দাঁড়াতেই তালা দিয়ে দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলেন।