তুমি অন্য অফিসগুলোয় ঢু মারো, রবিনকে বলল কিশোর। আমি যাচ্ছি মিস জেসিকার অফিসের ফাইলগুলো দেখতে।
আস্তে করে মাথা ঝাঁকিয়ে পাশের একটা অফিসে ঢুকল রবিন। কিশোর ঢুকে পড়ল মিস জেসিকার অফিসে। টর্চের আলোয় দেখল, ডেস্কটা খুব অগোছাল হয়ে আছে। আগেরবারও ব্যাপারটা খেয়াল করেছে কিশোর। মহিলা গোছানো স্বভাবের নন।
একটা একটা করে কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করল ও। ইনভয়েস, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপনের খসড়া, আর চাকরিপ্রার্থীদের দরখাস্ত। ডেস্কের ডানদিকের ড্রয়ার ঘেঁটে কর্মচারীদের একটা ফাইল পেল। ওটাতে নিক মিলহিজারের দরখাস্ত দেখে পড়তে শুরু করল কিশোর গভীর মনোযোগে।
.
ওদিকে রবিন একটা অফিসে ঢুকে উল্লেখযোগ্য কিছু না দেখে বেরিয়ে এলো। এবার চলল দোকানের আরেক দিকে। ওর উদ্দেশ্য ফর্কলিং দেখা। সম্ভবত ওটার গায়ে আঙুলের ছাপের কোনও অভাব নেই। তবে তাতে কোনও কাজ হবে না। বস্তা পড়ার পর জিনিসটা আবার সরিয়ে রাখা হয়েছে। দোকানের কর্মচারীদের আঙুলের ছাপ পেলেও কিছু প্রমাণ করা যাবে না।
চট করে টর্চ নিভিয়ে ফেলল রবিন। ওর মনে হয়েছে একটা আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। কিশোর নাকি? ডাকা ঠিক হবে না। যদি অন্য কেউ হয়? চোর? খানিক অপেক্ষা করে টর্চটা আবার জ্বালতে গিয়েও থেমে গেল রবিন। আবার আওয়াজটা হয়েছে। জেসিকা। ম্প্রিংগারের অফিসের পাশের একটা অফিস থেকে শব্দটা আসছে বলে মনে হলো।
নিঃশব্দে সেদিকে এগোল রবিন। খেয়াল করল, দরজাটা সামান্য ফাঁক হয়ে আছে।
কান পাতল কাছাকাছি গিয়ে। না, কোনও আওয়াজ নেই। আস্তে করে ঠেলা দিয়ে দরজাটা খুলল ও। টর্চ জ্বেলে অফিসের ভিতরে আলো ফেলল। এটা একটা সাপ্লাই রুম। মেঝে পরিষ্কার করার সাবান আর মোমের পিপে দেখতে পেল। ভিতরে ঢুকল ও। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে টের পেল, ভুল করে ফেলেছে। দরজার পাল্লার আড়াল থেকে একটা ছায়া বের হতে দেখল ও চোখের কোণে। নড়ার আগেই একটা ঝাড়র হাতল সজোরে নেমে এলো ওর মাথার তালুতে। খুব জোরে লাগল আঘাতটা। জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল রবিন।
.
এদিকে এখনও জেসিকা প্রিংগারের ফাইল ঘাঁটছে কিশোর। নিক মিলহিজারের দরখাস্ত ছাড়া ওদের তদন্তের জন্য জরুরি আর কিছু এখনও পায়নি ও। কুকুর যেগুলো বিক্রি হয়েছে সবগুলো বাচ্চা। কোথাও কোলির কোনও উল্লেখ নেই। রকি বিচ ব্যানার পত্রিকার একটা কাটিং দেখতে পেল। ওটাতে লেখা: সত্যিই কি কুকুরদের জন্য মোটেল চালু হবে?
আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে কারিনা মুরের কথা। কীভাবে তিনি কোর্টে লড়েছেন তা জানা যাবে আর্টিকেলটা পড়লে। শেষদিকটা পড়ল কিশোর। ওখানে লেখা: ডগ-হাউসের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কারিনা মুর।
দ্রু কুঁচকে উঠল কিশোরের। এটা সগ্রহে রেখেছেন কেন জেসিকা স্প্রিংগার? কতোটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কারিনা মুর? তিনি কি ডগ-হাউস বন্ধ করতে বেআইনী কিছুও করতে পারেন?
কয়েকটা হ্যান্ডবিল নজর কাড়ল, ওর। পেট সুপারস্টোর জg জানোয়ারদের একটা শো করবে। মালিকদের খাঁচায় করে তাদের পোষা প্রাণী আনতে বলা হয়েছে। তাদের যদি খাঁচা না থাকে, তা হলে দোকান। থেকে খাঁচা সরবরাহ করা হবে। একারণেই হয়তো মিস জেসিকার অফিসে এই ব্যবহৃত খাঁচাগুলো রাখা আছে, ভাবল কিশোর।
কাগজপত্র আগের মতো রাখতে রাখতে একটা আওয়াজ শুনতে পেল ও। কাজ থামাল না কিশোর। ধরেই নিয়েছে আওয়াজটা রবিন করেছে।
মাথার উপর আঘাতটা এলো হঠাৎ করেই। মেঝেতে পড়ে যেতে যেতে জ্ঞান হারানোর আগে ওর শেষ চিন্তা হলো: আওয়াজটা তা হলে রবিনের নয়!
অন্তত ঘণ্টাখানেক পর জ্ঞান ফিরল ওর। মাথার ব্যথায় কপাল কুঁচকে উঠল। উঠে বসতে চেষ্টা করল কিশোর। মাথায় কিসের যেন বাধা পেল। নতুন করে ব্যথা পেয়ে গুঙিয়ে উঠল কিশোর। কোথায় আছে ও? ছাদটা এতো নীচে নেমে এলো কী করে?
আস্তে আস্তে অন্ধকারে চোখ সয়ে এলো ওর। আগের চেয়ে ভাল দেখতে পাচ্ছে এখন। যা দেখল তাতে অবাক না হয়ে পারল না। স্টিলের গরাদগুলো খুব কাছাকাছি বসানো। খাঁচার ভিতর বন্দি করা হয়েছে ওকে? কিশোর ডাকল, রবিন?
জবাব এলো না কোনও। চারপাশে বিরাজ করছে কবরের নীরবতা।
মাথাটা যেন ছিঁড়ে পড়তে চাইছে। নড়তে চেষ্টা করল না আর। কিশোর। খুব অসুবিধেজনক অবস্থায় আছে ও। জায়গার অভাবে হাঁটু দুটো বুকের কাছে ভাঁজ করা। বুঝতে পারছে দাঁড়ানোর উপায় নেই। অন্ধকারে চোখ আরও সয়ে আসার পর বুঝতে পারল, একটা বাক্সের ভিতর আছে ও। দরজাটা তালা মারা। দুপাশে ছোট ছোট দুটো জানালা আছে, ওগুলোতেও স্টিলের গরাদ দেওয়া। এবার কিশোর নিশ্চিত ভাবেই বুঝতে পারল কোথায় আছে। ডোবারম্যান বা জার্মান শেফার্ড রাখা যাবে এমন একটা খাঁচায় ওকে ঢুকিয়ে তালা মেরে দিয়েছে কেউ!
৭
দরজায় ধাক্কা দিল কিশোর। ঝনঝন করে আওয়াজ হলো, তবে দরজার তালা এভাবে খোলা যাবে না।
কিশোর, তুমি? দুর্বল একটা কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করল।
কাছেই আছে রবিন। খুব কাছাকাছি কোথাও। কোথায়? রবিন তুমি কোথায়?
আমি তোমার প্রতিবেশী, জবাব দিল রবিন।
মাথা বাঁচিয়ে সাবধানে একটা জানালা দিয়ে উঁকি দিল কিশোর। পাশের খাঁচার জানালায় রবিনের মুখ দেখতে পেল। ওকেও খাঁচার ভিতর পুরে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে!